ইতোমধ্যেই যমুনার ভয়াবহ ভাঙনে বগুড়ার ধুনট উপজেলার পুকুরিয়া গ্রামে নির্মাণকৃত ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের প্রায় ২০ মিটার অংশ বিলীন হয়েছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের পুরো অংশই রয়েছে হুমকি মুখে।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সহকারী প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ভাঙনকবলিত এলাকা ইতোমধ্যেই পরিদর্শন করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলা অংশে এ ভাঙন ধরেছে। ভাঙনের খবর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে।
ঊর্ধ্বতনদের কাছ থেকে নির্দেশনা পাওয়া গেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এই সহকারী প্রকৌশলী।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুকুরিয়া গ্রামটি বগুড়ার ধুনট ও সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। প্রায় তিন সপ্তাহ আগে এ গ্রাম থেকে ভাটির দিকে কাজীপুরের ঢেকুরিয়া গ্রামে তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের প্রায় ৫০ মিটার অংশ বিলীন হয় যমুনার গর্ভে।
সম্প্রতি হয়ে যাওয়া বৃষ্টিপাতের প্রভাবে সেই ভাঙন উজানের দিকে চলে এসেছে। পুকুরিয়া গ্রামে তীর সংরক্ষণ প্রকল্পেও স্পর্শ করেছে সেই ভাঙন। এতে প্রকল্পের কাজে ব্যবহার করা জিও বস্তা ও সিসি ব্লকসহ নানা ধরনের উপকরণ যমুনার গর্ভে বিলীন হতে থাকে।
ভাঙনের কবলে ঝুঁকিতে পড়ে যায় ধুনট-কাজীপুর উপজেলার সংযোগস্থলে নির্মিত যমুনার তীর সংরক্ষণ প্রকল্পটি। শঙ্কায় পড়ে যান যমুনা পাড়ের মানুষ। প্রতিনিয়ত সেই শঙ্কায় এসব মানুষদের কাটে প্রতিটি রাত।
আমজাদ হোসেন, রুহুল আমিন, লাইলি বেগমসহ একাধিক ব্যক্তি বাংলানিউজকে বলেন, “মরার যমুনার হাবভাব আর ভালো লাগে না। অন্যত্র জায়গা জমি থাকলে চলে যেতাম। একে তো সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়, রাতেও শান্তিতে ঘুমাতে পারি না। যমুনার ভাঙনে জীবনটাই যেন ভেঙে খান খান। কিন্তু অভাবী হওয়ায় শত যাতনা মেনে যমুনা পাড়েই থাকতে বাধ্য আমরা। ”
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভাঙনের কবলে পড়ে প্রত্যেক বছর নদী তীরবর্তী বসতভিটা ও ফসলি জমিসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো বিলীন হয় যমুনার গর্ভে। বন্যা শুরু হতেই বাঁধের দিকে ধেয়ে আসতে থাকে সেই বানের পানি। এসব বিবেচনায় যমুনার ভাঙনরোধে ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ হাতে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
প্রায় দুই বছর আগে যমুনার ভাঙন ঠেকাতে পুকুরিয়া গ্রামে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে ওই প্রকল্পের আওতায় কাজ করা হয়। যমুনা নদীর পাড় স্লোপ করে তার উপর জিও চট বিছানো হয়। এর উপর সিসি ব্লক প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ গুটিয়ে ফেলা হয়েছে।
যমুনার ভাঙন রোধকল্পে কাজটি করা হয়। এতে ভাঙন কবলিত জনপদের মানুষ এক বুক আশা বাঁধেন। কিন্তু তাদের সেই আশায় চির ধরাতে যমুনা বেশি দিন সময় নেয়নি। কারণ যমুনার হিংস্রতায় তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, তীর সংরক্ষণ প্রকল্পটিকে রাখতে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। নইলে বর্ষা মৌসুমে পুরোটাই যমুনায় বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে চরম বিপদের মুখে পতিত হবেন যমুনার পাড়সহ আশেপাশের গ্রামের মানুষ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৭
এমবিএইচ/এমজেএফ