ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

জন্মদিনে মোমবাতি জ্বেলে উৎপলকে ফেরত চাইলেন সহকর্মীরা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৭
জন্মদিনে মোমবাতি জ্বেলে উৎপলকে ফেরত চাইলেন সহকর্মীরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ছেলেটা ছিলো প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর। বন্ধু-মহল বা ছেলে-বুড়োদের আড্ডার মধ্যমনি হওয়ার যোগ্যতাও তার আছে। সে কারণেই আড্ডায় তার উপস্থিতি বন্ধুদের কাছেও বিশেষ কিছু। এবার ছিলো (!) শব্দটি লিখতে হচ্ছে; যা আজ অন্তত কেউ চায়নি। 

আজ যে তার জন্মদিন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক জানিয়ে দিচ্ছে, ২০ দিন আগে হটাৎ নিখোঁজ হওয়া সংবাদকর্মী উৎপল দাসের ২৯ বছরে পা দেওয়ার দিন সোমবার (৩০ অক্টোবর)।

অথচ সে নেই। প্রতি বছরই কারওয়ান বাজারের জাহাঙ্গীর টাওয়ারের পাশের গলিতে (ইটিভির গলি) বন্ধুরা ঘটা করেই এই দিনটি পালন করে।  

কেবল উৎপল দাসই নয়, এই আড্ডায় যোগ দেওয়া সবারই জন্মদিন বা বিবাহ বার্ষিকীও এখানে এভাবে উদযাপিত হয়। আজও উৎপলের জন্মদিন পালিত হয়েছে এই কারওয়ান বাজারে। তবে অন্যরকম আবহে।  

নিখোঁজ সাংবাদিক উৎপল দাসফুল কিংবা কেকের পরিবর্তে আজ এসেছে অন্য উপকরণ। উৎপলের ২৯তম জন্মদিন উপলক্ষে সবার হাতে ছিলো জলন্ত মোমবাতি। মুখ ছিলো কালো কাপড়ে বাঁধা। উৎপলের ছবি বুকে নিয়ে তাকে ফিরে পাওয়ার আকুতির চিহ্ন ছিলো সবার চাহনিতে।  

এ সময় অনেকেরই চোখ আদ্র হয়েছে। যা ঢাকা পড়েনি নিয়নবাতির ঝলসানো আলোতেও। আর আজকের এ আয়োজনে কেবল উৎপলের বন্ধু মহলই নয়, ছিলেন জ্যেষ্ঠ সহকর্মী, সাংবাদিক নেতা ও উন্নয়ন কর্মীরাও। যারা উৎপলকে কাছ থেকে দেখেছেন বা অনেকেই কেবল নামটার সঙ্গে পরিচিত ও ছিলেন না, নিখোঁজ হওয়ার আগে।

নিখোঁজ উৎপলের সন্ধান দাবিতে সহকর্মীদের সমাবেশ এই কর্মসূচি সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে উৎপলের বন্ধু সংবাদকর্মী রাজীব আহমদ লিখেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, উৎপল আমাদের আশেপাশে কোথাও আছে। কোথায় আছে, তা আমরা জানতে চাই। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো উৎপলের সন্ধানের চেষ্টা করছে। আমরা আশা করি তারা উৎপলকে আমাদের কাছে অক্ষত ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হবে। আজ উৎপলের জন্মদিন। যেহেতু আমরা বিশ্বাস করি, উৎপল আমাদের আশপাশেই কোথাও আছে, তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রতিবছরের মতো এবারও উৎপলের জন্মদিন পালিত হবে, ইটিভির গলিতে। ’

কারওয়ান বাজারের আড্ডার অন্যতম মুখ ছিলেন উৎপল দাস। যে কোনো উপলক্ষ্যকে পুঁজি করে হৈ-হুল্লোড় করাও ছিলো তার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য! বন্ধু মহলের বিয়ে বার্ষিকী বা জন্মদিনে সে একটি কেক কেনা কমিটি গঠন করেছিলেন এবং নিজে ছিলেন সেই কমিটির সভাপতি।  

বন্ধু-সহকর্মী রাজীব আহমদকে দিয়েছিলেন কেক কাটার দায়িত্ব। অথচ আজ তার জন্মদিনে বন্ধুরা কেক কাটতে পারেননি! কারণ উৎপলই যে নেই।

কথা ছিলো উৎপলের ২৯তম জন্মদিন উপলক্ষে ২৯টি মোমবাতি প্রজ্বলন করবেন বন্ধুরা। কিন্তু বন্ধু-সহকর্মীদের ভিড়ে তা বেড়েছে কয়েকগুণ। মোমবাতি প্রজ্বলন শেষে হয়েছে একটি সমাবেশও।  

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরীর সভাপতিত্বে ওই সমাবেশে বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক শাহেদ চৌধুরী ও ইলিয়াস খান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, সাধারণ সম্পাদক মুরসালীন নোমানী প্রমুখ।

উৎপল দাসের সন্ধান দাবিতে সংবাদকর্মীদের মোমবাতি প্রজ্বলনএ সময় বক্তারা উৎপলকে অক্ষত অবস্থায় পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। একই সঙ্গে উদ্ধার কার্যক্রমে গতি আনতে সহায়তা চাওয়া হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরও।

তারা বলেন, ২০১২ সালে সাগর-রুনি হত্যার পর সাড়ে ৫ বছর পেরিয়ে গেছে। আজ উৎপল নিখোঁজ। সাংবাদিকদের ওপর চলা এ ধরনের ঘটনা বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেওয়া হবে না।  


আগামী ১ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে উৎপলকে ফিরে পেতে প্রতিবাদ সমাবেশেরও ডাক দেওয়া হয়েছে এই সমাবেশ থেকে।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৭
আরএম/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।