শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় অপহৃত হওয়ার পর থেকে রাতভর নানা নাটকীয়তা শেষে শনিবার ভোরে ডিবির জালে আটকা পড়েন অপহরণকারীরা। প্রযুক্তিগত সাহায্য নিয়ে অপহরণকারীদের অবস্থান শনাক্ত করে মুক্তিপণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে গুলির মুখে একটি সফল অভিযান সমাপ্ত করেন ডিবি সদস্যরা।
তবে এই অভিযানের প্রথম সফলতা এনে দেয় অপহৃত শিশু তাওসিফ নিজেই। অপহরণ করার পর তারা শিশুটির কাছ থেকে তার বাবার ফোন নম্বর নিয়ে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। তাওসিফ তার বাবার ফোন নম্বর মনে রাখতে পেরেছিল বলেই তার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে অপরাধীরা। এর ফলে অপহরণকারীদের শনাক্তে পুলিশের প্রাথমিক কাজটি করে দেয় তারা নিজেরাই।
রোববার (০৫ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবি উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) শেখ নাজমুল আলম।
ডিবি কর্মকর্তা জানান, শিশুটি তার বাবার মোবাইল নম্বর মুখস্ত করে রেখেছিল। তার থেকেই নম্বর পেয়ে অপহরণকারীরা মুক্তিপণ চাইতে যোগাযোগ করে। শিশুটির মেধা অপহরণকারীদের গ্রেফতারে সহায়তা করেছে। সন্তানকে কিছু জরুরি বিষয় প্রতিটি অভিভাবকের শিখিয়ে রাখা দরকার বলেও মত দেন ডিসি নাজমুল আলম।
তিনি জানান, শুক্রবার সন্ধ্যার পর বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোমিন আহমেদ তার স্ত্রী নাজমুন আক্তার এবং শিশু তাওসিফুর রাহিমকে নিয়ে পুলিশ প্লাজায় কেনাকাটা করতে যান। এরপর হঠাৎ সন্তানকে খুঁজে না পেয়ে শপিং মলের পুলিশকে জানান মোমিন আহমেদ।
তখন শপিংমলের সিসিটিভি ফুটেজে পুলিশ দেখতে পায়, অপহরণকারী রুবেল শিশুটিকে বুঝিয়ে শপিংমলের নিচে নিয়ে যাচ্ছে। একপর্যায়ে মার্কেট থেকে বের হয়ে যায়।
ডিবি কর্মকর্তা শেখ নাজমুল আলম বলেন, অপহরণকরীরা শিশুটিকে বাড়ি পৌছে দেবার কথা বলে তাকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল সংলগ্ন হাতিরঝিলের কুনিপাড়ার একটি বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে শিশুটির কাছ থেকে তার বাবার মোবাইল নম্বর পেয়ে দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
মুক্তিপণ দিতে রাজি হলে ভোর চারটায় অপহরণকারীরা র্যাংস ভবন সংলগ্ন ফ্লাইওভারের কাছে আসে। আগে থেকে সেখানে ডিবি সদস্যরা অবস্থান করছেন বুঝতে পেরে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে আহত অবস্থায় অপহরণকারী রুবেলকে আটক করা হয়। এ সময় ডিবির সহকারী কমিশনার গোলাম সাকলায়েন অল্পের জন্য গুলিবিদ্ধ না হলেও গুরুতর আহত হন।
এরপর রুবেলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হাতিরঝিলের কুনিপাড়া থেকে শিশু তাওসিফকে উদ্ধারসহ শিপন শেখ ও সাগরকে আটক করা হয়।
গ্রেপ্তাররা একটি সংঘবদ্ধ চক্র উল্লেখ করে এই ডিবি কর্মকর্তা জানান, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিশুটির বাবা মোহাম্মদ মোমিন আহমেদ এ সময় উপস্থিত হয়ে পুলিশ সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৭
পিএম/এমজেএফ