টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান রোববার (০৫ নভেম্বর) সংস্থাটির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা গবেষণা চালাতে গিয়ে দেখেছি, দুদক সম্পূর্ণ ক্লিন তা বলা যাবে না। তাদের কর্মকর্তারাও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।
দুদকের সক্ষমতার বিষয়ে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, ব্যাংকিং সেক্টর, রিয়েল এস্টেট কোম্পানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাবমুক্ত হয়ে দুদক সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করছে; একথা বলা যাবে না। সবার জন্য সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তারা করতে পারছে না। কিন্তু আইনের চোখে সবাই সমান। দুদককে এ বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। তবে দুদক চেষ্টা করছে। দুর্নীতি নির্মূল দুদকের একার পক্ষে সম্ভব নয়।
‘দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশন পরিচালিত গণশুনানি: কার্যকারিতা, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। দুদকের গণশুনানিগুলো টিআইবি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) যৌথভাবে পরিচালন করে। যার সফলতা নিয়েই গবেষণা চালিয়েছে টিআইবি।
সংবাদ সম্মেলনে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন টিআইবি’র ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. শহিদুল ইসলাম।
২০১৪ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দুদককে দুর্নীতি প্রতিরোধে গণশুনানি করার আদেশ জারি করে। এরপর ২০১৬ সাল পর্যন্ত সংস্থাটি ৩৫টি শুনানি করে। এরমধ্যে জুন ২০১৬ পর্যন্ত ১৭টি শুনানির কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা চালায় টিআইবি।
শুনানিগুলো কোটালিপাড়া, তেঁতুলিয়া, সাভার, শিবপুর, জুড়ী, কিশোরগঞ্জ সদর, চরফ্যাশন, সিরাজদিখান, রুপসা ও চকরিয়া উপজেলায় অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ঢাকা মহানগর (ভূমি), ঢাকা মহানগর (বিআরটিএ), ঢাকা মহানগর (রাজউক) এর শুনানিও আমলে নেয় তারা।
১৩টি শুনানিতে ২৯৯ জন অভিযোগকারী এবং ৫৯টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এদের মধ্যে গবেষণায় ১৯৫ জন অভিযোগকারী ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ৫১ জন ব্যক্তিকে নিয়ে জরিপ চালায় টিআইবি।
দুর্নীতিতে সেরা ভূমি অফিস
গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পড়েছে ভূমি অফিসে, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পল্লীবিদ্যুৎ, আর তৃতীয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। শুনানির পর দেখা গেছে, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সমস্যার সমাধান না হওয়ার হারও বেশি উপজেলা ভূমি অফিসেই। এখানে মোট অভিযোগের ৪৩টির সমাধান হয়নি।
শুনানিতে মোট অভিযোগ এসেছে ১৩২টি, আর সমাধান হয়েছে ৪৯টি। অর্থাৎ ৬২ দশমিক ৮৯ শতাংশ বা ৬৩ শতাংশ অভিযোগের সমাধান হয়নি। এর পেছনে দায়ী হিসেবে কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতা, ঘুষ, উদ্যোগহীনতা, দীর্ঘসূত্রতা, সক্ষমতার অভাব, মামলা, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বদলি, রাজনৈতিক প্রভাবকে চিহ্নিত করেছে টিআইবি।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গণশুনানি দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদকের ক্ষমতার একটি ‘সফট টুলস’। এটি ইতিবাচক দিক। শুনানির কার্যকারিতা নিশ্চিত করা জন্য অভিযোগের ফলোআপ করা, বাজেট বৃদ্ধি, অধিক প্রচারণা, শুনানি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন, খাতভিত্তিক পৃথক শুনানি, অভিযোগ নিষ্পত্তি নিশ্চিতকরণ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণের সুপারিশ করে টিআইবি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৭
ইইউডি/জেডএস