‘ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ইন্দ্রপুল থেকে চক্রশালা পর্যন্ত বাঁক সরলীকরণ’ প্রকল্পের আওতায় পটিয়া শহরের যানজট দূরীকরণে সহায়তা করতে বাঁকা সড়ক সোজা করা হবে মাত্র ৫ দশমিক ২০ কিলোমিটার। অথচ ব্যয়ের বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ১০৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
এর আগে ওই সড়ক সোজাকরণে মূল ব্যয় ছিলো ৭৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা ছিলো। এখন প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত আর মূল প্রকল্প থেকে ব্যয় বাড়ছে ৩৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে এ সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব জমা দিয়েছে সওজ।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, প্রতি কিলোমিটার চারলেন সড়ক তৈরিতে ভারতে ১১ লাখ থেকে ১৩ লাখ ডলার খরচ হয়, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮ কোটি ৮০ লাখ থেকে ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। অন্যদিকে সমপরিমাণ সড়ক নির্মাণে চীনে ১৩ লাখ থেকে ১৬ লাখ ডলার খরচ হয়, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০ কোটি ৪০ লাখ থেকে ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা) আবুল কাসেম ভূঁঞা বাংলানিউজকে বলেন, ‘সড়কটিকে দুই লেন থেকে ফোরলেন করা হচ্ছে, যেন বাঁক সোজা হয়। ফলে ব্রিজ, কালভার্ট, ভূমি অধিগ্রহণসহ সব খাতে ব্যয় বাড়ছে। সড়ক বরাবর একটি মন্দির আছে, এটিও আমাদের খেয়াল রাখতে হচ্ছে’।
তার দাবি, প্রতি কিলোমিটারে ২১ কোটি টাকা ব্যয় কমই হচ্ছে বলা যায়।
সওজ সূত্র আরও জানায়, মূল প্রকল্প থেকে ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ বাড়ছে না, তবে ব্যয় বাড়ছে। ১ দশমিক ৩৩ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণে সংশোধিত প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা, মূল প্রকল্পে যা ছিলো ১২ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
বিদ্যমান অ্যালাইনমেন্টে মন্দির থাকায় সড়কের অ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তন এবং নতুন আইটেমে এ পথে চারটি বাস-বে নির্মাণ করা হবে। ফলে এ খাতে ৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন করে অফিস ভবন নির্মাণে দেড় কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৪টি কালভার্টের পরিবর্তে ২০টি নির্মাণ করায় ৬৯ লাখ টাকা থেকে এ খাতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে এক কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এছাড়া ইউটিলিটি অপসারণ, রক্ষণাবেক্ষণ, সাইন, সিগন্যাল, পোস্ট ও রোড মার্কিংয়েও ব্যয় বাড়ছে।
তবে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘সড়ক নির্মাণ নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা করে দেখেছি, ভারতে ব্যয় অনেক কম। এর কারণ, হেলদি টেন্ডারিং। স্বচ্ছ দরপত্র আহ্বান ও অংশগ্রহণ ছাড়া সড়ক নির্মাণে অপচয় কমানো সম্ভব নয়। আমাদের বিপদ হলো, হেলদি টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ না পাওয়া। অনেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কাজ পান’।
‘ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ ফোরলেন নিয়ে গবেষণা করে দেখেছি, সময় বৃদ্ধির কারণে ব্যয় বেড়েছে। সময় বাড়লে সড়ক নির্মাণ উপকরণের রেট সিডিউল বাড়ে। নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন ও হেলদি টেন্ডারিং ছাড়া সড়ক নির্মাণে অপচয় চলতেই থাকবে’।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর