ঢাকা, রবিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

নিয়োগ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ঢাকা জেলা পুলিশের

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০২ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০১৮
নিয়োগ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ঢাকা জেলা পুলিশের নিয়োগ বাণিজ্য করতে গিয়ে আটক জলিলুর রহমান মিলন ও তার পাঁচ সহযোগী। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: জলিলুর রহমান মিলনের মুখ ভার। সদ্য জামিনে বেরিয়ে এসেছেন। কিছুতেই মেলাতে পারছেন না ‘স্বপ্নের’ সঙ্গে বাস্তবতাকে। সব হিসেব এলোমেলো। ঢাকা জেলায় পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ হবে ১ হাজার ৬৫৯ জনের। এরমধ্যে না হলেও ৫০ জনের নিয়োগ বাণিজ্য করতে পারলে বাকি জীবনটা অনায়াসেই কেটে যাবে। এমনই স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। পেশাটাই যে তার ভিন্ন। 

পুলিশে নিয়োগ প্রতারণাই ছিলো এক অর্থে তার ব্যবসা। সামর্থ্যভেদে ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ।

এই টাকা দিলেই পুলিশে চাকরি ‘কনফার্ম’। চাকরি না হলে টাকা ফেরত। এভাবেই ‘ঝড়ে বক মরে ফকিরের কেরামতি বাড়ে’ স্টাইলে চলছিলো তার রমরমা ব্যবসা। কিন্তু বিধি বাম।  

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ বাণিজ্য করতে গিয়েই প্রতারণার অভিযোগে অপর পাঁচ সহযোগীসহ ফেঁসে যান জলিলুর রহমান মিলন। ধরা পড়েন আশুলিয়া পুলিশের হাতে। তারপর থেকেই জলিলের সব ‘আশায় গুঁড়েবালি’।

কেবল জলিল একা নন, নিয়োগ বাণিজ্য ঘিরে তার মতো যারা ‘স্বপ্ন’ দেখেছিলেন তাদের মুখে ছাই পড়ে গেছে। জনপ্রতিনিধি, সরকারি চাকরিজীবী, রাজনৈতিক দলের পাতি থেকে মধ্যমে সারির নেতা, সাংবাদিক কিংবা প্রভাবশালী। কেউই কোনো সুবিধা করে উঠতে পারছেন না। দালাল ও প্রতারণার বিরুদ্ধে পুলিশের প্রচারণাএবার ঢাকা জেলা পুলিশ আটঘাট বেঁধেই যুদ্ধে নেমেছে দালাল আর প্রতারকদের বিরুদ্ধে। তদবির আসাটা প্রার্থীর অযোগ্যতা- এই মাপকাঠিতে এখন তদবিরকারীদের কদরও কমে গেছে এই জেলায়।

‘যারা দালাল আর প্রতারক। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ। সে যেই হোন না কেন, এই অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে ছাড় দেওয়া হবে না। ধামরাইতে আমরা তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধেও এই অনিয়মে যুক্ত থাকার প্রমাণ পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জনগণের প্রতি আমাদের স্পষ্ট বার্তা- পুলিশ বিভাগে নিয়োগ বাণিজ্যের দিন শেষ। তদবির আর সুপারিশের দিনও শেষ’।

বাংলানিউজকে এমনটাই বলছিলেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ মিজান শাফিউর রহমান।

এবার ঢাকা জেলায় পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ দেওয়া হবে ১ হাজার ৬৫৯ জনকে। এর মধ্যে ৩৪৯ জনই নারী। আগামী রোববার (৪ মার্চ) থেকে ঢাকার মিল ব্যারাক পুলিশ লাইনে শুরু হবে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া।

তার আগেই দালাল আর প্রতারক ঠেকাতে মাঠে নেমে গেছে পুলিশ। রীতিমতো লিফলেট ছাপিয়ে, মসজিদে মসজিদে বয়ানের মাধ্যমে সর্তক করা হয় সম্ভাব্য প্রার্থীদের। নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রাথমিক কার্যক্রম পরিদর্শনে ঢাকা জেলার এসপি শাহ মিজান শাফিউর রহমানলিফলেটের একটি অংশে বলা হয়, কোনো জনপ্রতিনিধি বা রাজনৈতিক নেতার নাম ভাঙিয়ে বা অন্য কোনোভাবে কেউ অর্থ দাবি করলে নিকটস্থ থানাকে জানান।

একইসঙ্গে দালাল চক্রের অপতৎপরতা পরিলক্ষিত হলে তা দ্রুত জানাতে তিনজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের মোবাইল ফোন নম্বরেও অবহিত করতে অনুরোধ জানানো হয় ওই লিফলেটে।

দালাল আর প্রতারকের বিরুদ্ধে এতো প্রচারণা?

‘এটা খুবই দরকার। মানুষ এখনো অনেক অসচেতন। তারা নানা হাত ঘুরে সর্বস্ব খুইয়ে আসেন। তখন হয়তো ক্ষতি যা হওয়ার তাই হয়ে যায়। আমরা প্রাক-ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবেই নেমেছি এই প্রচারণায়। নবনিযু্ক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী স্যারের নির্দেশনাও স্পষ্ট। পুলিশ নিয়োগে কোনো তদবির বা সুপারিশ চলবে না। ঢাকা জেলা আগে থেকেই নিয়োগে স্বচ্ছ। আমরা এখন অন্যদের দেখাতে চাই, সবাই মিলে চেষ্টা করলে স্বচ্ছ আর মেধানির্ভর নিয়োগ সম্ভব। ’ বলেন এসপি শাহ মিজান শাফিউর রহমান।

২০১১, ২০১২ ও ২০১৩ সালে কেবল ঢাকার ধামরাই উপজেলায়ই ভুয়া বাসিন্দা সাজিয়ে এক হাজার লোককে নিয়োগ দেওয়া হয় কনস্টেবল পদে। সেই কলঙ্কের ক্ষত কাটিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া কতোটা স্বচ্ছ করা হয়েছে?

‘শতভাগ স্বচ্ছ। আমরা বহুদূর এগিয়েছি। নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে চাপ, সুপারিশ বা তদবিরের মুখে পড়েছি। তবে আমরা দমে যাবার পাত্র নই। কারো কাছে মাথা নত করার দুর্বলতা আমাদের নেই। ফলাফল আমার অধীনে যারা নিয়োগ পেয়েছেন তারা শতভাগ স্বচ্ছতার মাপকাঠিতেই পেয়েছেন’। বলছিলেন শাহ মিজান শাফিউর রহমান।

লিফলেটে থাকা মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে কথা হয় ঢাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মাসুম আহমেদ ভূঁইয়ার সঙ্গে। চলছে নিয়োগ প্রক্রিয়ার কার্যক্রম।  ছবি: বাংলানিউজবাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘শাহ মিজান শাফিউর রহমানের স্যারের নির্দেশে আমরা মসজিদে মসজিদে গিয়েছি। বিগত তিনটি জুমার জমায়েতে আমরা মানুষকে বলেছি, দয়া করে প্রতারকদের দ্বারস্থ হবে না। কেউ প্রতারণার চেষ্টা করে থাকলে আমাদের ধরিয়ে দিন। আমরা মাইকিং করেছি, লিফলেট বিলি করেছি। এর ফলও পেয়েছি হাতে হাতে। যেমন আশুলিয়ায় ধরা পড়েছে ছয় জন। ’

‘অনেকেই ফোনে আমাদের নানা তথ্য জানাচ্ছেন। সে অনুযায়ী ত্বরিত ব্যবস্থাও নিচ্ছি আমরা। এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, কেউ তদবির বা সুপারিশ করারও সাহস পাচ্ছেন না। ’

মাসুম আহমেদ ভূঁইয়া বলছিলেন, ‘আমাদের এসপি স্যারের কথা একটাই। নিয়োগ হবে শতভাগ স্বচ্ছ। পুলিশে আসবে ফ্রেশ ব্লাড। কারণ শুরুতেই যদি অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে একজন পুলিশ সদস্য চাকরিতে যোগ দেন, তবে তার জের টানতে হয় গোটা বাহিনীকেই। তাই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে পুলিশের নিষ্ঠা, পেশাদারিত্ব ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এসপি শাহ মিজান শাফিউর রহমানের নেতৃত্বে কাজ করছে ঢাকা জেলা পুলিশ। আগামীতে যার সুফল পাবে বাংলাদেশ। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০১৮
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।