মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) সিঙ্গাপুরের স্থানীয় সময় সকাল পৌনে ১০টায় হোটেল সাংরিলার টাওয়ার বলরুমে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর বিজনেস ফোরামের বৈঠকে এ আহ্বান জানান তিনি। এ সময় তিনি চট্টগ্রামের মিরেরসরাইয়ে ৫শ’ একর জমি শিল্পায়নের জন্য দেয়ার কথা বলেন ৷
বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর বিজনেস ফোরামের বৈঠকে ৪টি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুর, সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বার অফ সিঙ্গাপুর দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অংশীদার হতে আমি সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। শিল্পায়নের জন্য এক জায়গাতেই ৫শ’ একর জায়গা বা তার চেয়েও বেশি দেওয়া যাবে, যা আপনাদের প্রয়োজন। চট্টগ্রামের মিরেরসরাই শিল্পায়নের জন্য ভালো জায়গা। ভৌগলিক দিক থেকে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম বিনিয়োগের জন্য মিরেসরাই খুবই উপযুক্ত স্থান।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধার কথা তুলে ধরে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগের শর্তের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উদার। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আইনের সুরক্ষা পাচ্ছেন। এছাড়া তারা কর অবকাশ, যন্ত্রপাতি আমদানির ওপর ছাড় এবং মুনাফা নিজ দেশে ফেরত নিতে পারবেন।
বাংলাদেশের স্বল্প মজুরি। আমাদের বিরাট তরুণ সমাজ রয়েছে, তারা উদ্যমী এবং তারা সহজেই প্রশিক্ষিত কর্মীতে পরিণত হতে পারে।
তিনি বলেন, আমাদের তৈরি পোশাক খাতের সফলতা বিশ্বের সকলের জানা। বস্ত্রখাতের রপ্তানিতে চীনের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। এই খাত থেকে ২০১৭ সালে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা ২০২১ সালের মধ্যে এই খাতের রপ্তানি আয় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে চাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের ১২০ দেশে বাংলাদেশের তৈরি ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। কম খরচে উন্নতমানের ওষুধ উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্রুতই প্রধান বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলো দ্রুত সম্প্রসারণ হচ্ছে। জাহাজ নির্মাণ বাংলাদেশের আরেকটি দ্রুত বিকাশমান শিল্প। আমারা ছোট থেক মাঝারি আকারের বিশ্বমানের সমুদ্রগামী জাহাজ তৈরি করছি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একশোটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। আইটি শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আমরা বেশ কিছু হাই-টেক পার্ক গড়ে তুলছি। আইটি পণ্য ও সেবা রপ্তানি করে ২০২১ সালের মধ্যে পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রাইস ওয়াটারহাউস কুপার-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী তিন দশকের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত বিকাশমান তিনটি অর্থনীতির দেশের একটি হবে। অন্য দুটি দেশ; ভারত ও ভিয়েততনাম। বৃটেনের প্রথম সারির সাপ্তাহিক ‘ডেইলি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস’ ২০১৭ সালের ৮ আগস্ট প্রকাশিত সংখ্যায় বলেছে, বাংলাদেশ গত বিশ বছরে অর্থনৈতিক বিস্ময়ে পরিণত হয়েছে।
এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও সিঙ্গাপুরের ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজের (আইই) মধ্যে একটি, ডিজিটাল গভর্নমেন্ট ট্রান্সফর্মেশন বিষয়ে একটি এবং এফবিসিসিআই ও এমসিসিআইয়ের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের ম্যানুফ্যাকচারিং ফেডারেশনের দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
প্রথম সমঝোতা স্মারকে সই করেন, আইই’র ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যাথি লাই এবং বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম।
দ্বিতীয় স্মারকটি সই করেন, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুরের ইন্সটিটিউট অফ সিস্টেম সায়েন্সের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা কুং চান মেং এবং বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী।
এরপর অন্য দুইটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন সিঙ্গাপুরের ম্যানুফ্যাকচারিং ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ডগলাস ফু এবং এফবিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট মো. শফিউল ইসলাম ও এমসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট নিহাদ কবির।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী লিম হং কিয়াং, সিঙ্গাপুরের ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যাথি লাই।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৮/আপডেট: ১৩০৬ ঘণ্টা
এসকে/এমজেএফ/