স্কুলে পড়াকালীন সময় থেকে মেহেদি বাবাকে সাংসারিক কাজে সহযোগিতা করার পাশাপাশি টিউশনি করে নিজের খরচ নিজে চালিয়ে ভালো রেজাল্টসহ এইচএসসি পাস করেন। পরে এক কলেজ শিক্ষকের পরামর্শে ঢাকার একটি কলেজে অনার্স ভর্তি হয় এবং পাশাপাশি একটি ফার্মে খণ্ডকালীন চাকরি নেয়।
হঠাৎ এক রাতে দমকা হাওয়ার মত তার স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায়। একদিন রাতে মেহেদি অসুস্থ হয়ে পড়লে তার সঙ্গীরা তাকে উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, তার মেরুদণ্ডে ঞ৪ (চিকিৎসকের ভাষা) লেভেলের টিবি হয়েছে। আর এ কারণে তার কোমর থেকে দু’পা পর্যন্ত অবশ হয়ে গেছে। সেখানে এক মাস চিকিৎসা করার পর তাদের পরামর্শে ফের সাভার সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড (সিআরপিতে) ভর্তি হন। সেখানে পাঁচমাস চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে থেরাপি দেওয়া হয়। তার এই চিকিৎসার ব্যয় সামলাতে গিয়ে গরিব বাবা তার কষ্টে জমানো টাকা জমিসহ বাড়ি ভিটার কিছু অংশ বিক্রি করে দেন।
এরপরও যখন মেহেদি সুস্থ হয়ে উঠছে না তখন চিকিৎসকরা তার বাবাকে পরামর্শ দেন উন্নত চিকিৎসার জন্য মেহেদিকে বিদেশে নিয়ে গেলে সে সুস্থ হয়ে উঠবে। বাধ্য হয়ে গরিব বাবা আমিনুল তার ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন। এখন মেহেদির সময় কাটে হুইলচেয়ারে বসে।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) সকালে মেধাবী মেহেদিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, হুইলচেয়ারে বসে আছেন মেহেদি। নির্বাক অপলক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে যেন বলছে, আমি কি আর সুস্থ হবো না, মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারবো না? কথা হয় মেহেদি হাসানের সঙ্গে, তিনি বাংলানিউজকে জানান, আমি সুস্থ হয়ে লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হতে চাই এবং দেশের সেবা করতে চাই। জানি না, আমি সুস্থ হতে পারবো কিনা ? আমি সুস্থ হতে চাই।
মেহেদির বাবা আমিনুল ইসলাম কান্না বিজড়িত কন্ঠে জানান, আমার সুস্থ ছেলেটি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলো। আমি গবিব মানুষ। আমার সামর্থ্য অনুযায়ী সব রকমের চেষ্টা করেছি, কিন্তু চিকিৎসকরা আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারলে আমার ছেলেটা ভালো হয়ে যাবে। তিনি দেশের সুহৃদয়বান ব্যক্তিদের তার এ অসুস্থ মেধাবী ছেলেটির পাশে দাঁড়ানোর জন্য আকুল আবেদন জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলার গোপিনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) হায়দারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুল আলম জানান, মেহেদি ছোটবেলা থেকে খুব মেধাবী। সে তার এক ক্লাস নিচের শিক্ষার্থীকে পড়িয়ে নিজের লেখাপড়ার খরচ বহন করতেন। বর্তমানে এমন শিক্ষার্থী আর পাওয়া যায় না। মেহেদির মত মেধাবীদের বাঁচাতে সবার এগিয়ে আসা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৮
এএটি