ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

দুই বাংলার মিলনে প্রতিবন্ধকতা ‘রোহিঙ্গা’

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৮
দুই বাংলার মিলনে প্রতিবন্ধকতা ‘রোহিঙ্গা’ ফেনী নদীর বারুণী স্নান। ছবি: বাংলানিউজ

খাগড়াছড়ি: বেশ কিছুদিন ধরে খাগড়াছড়ির রামগড় ও ভারতের সাব্রুম সীমান্তের স্থানীয়দের মূল আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ফেনী নদীর বারুণী স্নান। কিন্তু এবারের উৎসবে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ‘রোহিঙ্গা ইস্যু’।

বুধবার (১৪ মার্চ) বিকেল থেকেই খাগড়াছড়িসহ আশপাশের জেলার মানুষ রামগড়ে এসে ভিড় করেন। তাদের উদ্দেশ্য সীমান্তের এপার-ওপার বাংলার মানুষের সম্মিলিত বারুণী স্নান দেখা।

এ সুযোগে খুলে দেওয়া সীমান্তে ঘুরতে যাওয়া মানুষের সংখ্যাও কম ছিল না।
 
সীমান্তের এপাড়ে বিজিবির অঘোষিত শিথিলতা থাকলেও ওপাড় থেকে বিএসএফের ছিল কড়া নজড়দারী। তারা খোলেনি সীমান্ত। তাই নিরাশ হয়ে ফিরে যেতে হয় দুই বাংলার মানুষদের।

এর কারণ হিসেবে জানা যায়, রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণেই তাদের এ সিদ্ধান্ত। রোহিঙ্গা প্রবেশ করতে পারে এমন আশংকায় ভারত সীমান্তের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।  

জানা যায়, ব্রিটিশ আমল থেকেই চৈত্রের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে প্রতিবছর ফেনী নদীতে বারুণী স্নানে মিলিত হয় দুই দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষেরা। এ মিলনমেলাকে ঘিরে দুইদেশের মানুষের মধ্যে তৈরি হয় ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন। উভয় দেশের হাজার হাজার পুণ্যার্থীর সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠে ফেনী নদী।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস মতে, পূর্ব পুরুষদের আত্মার শান্তি কামনা ছাড়াও নিজের পুণ্যলাভ ও সকল প্রকার পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার উদ্দেশ্যে এই বারুণী স্নানে ছুটে আসেন পূর্ণার্থীরা।

বারুণী স্নান শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের মিলনমেলা নয়। ত্রিপুরা, মারমা, চাকমা, মুসলিমসহ বহু সম্প্রদায়ের মানুষের সমাগম ঘটে এখানে। বারুণী স্নান একটি ধর্মীয় উৎসবহলেও দীর্ঘ বছর ধরে দু’দেশের বিভিন্ন জাতি, সম্প্রদায় ও ধর্মের মানুষের সমাগমে এটি সার্বজনীন আনন্দ মেলার ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।

বিগত বছরগুলোতে উভয় দেশের হাজার হাজার পুণ্যার্থী ও দর্শণার্থীর সম্মিলিত উপস্থিতিতে মহাসমাগম হলেও এবার তা দেখা যায়নি। বিএসএফের কড়া নজড়দারীর কারণে কেউ কারো কাছে ঘেঁষতে পারেনি। সকাল থেকে নদী পাড়ে অপেক্ষা করতে করতে ফেরত আসেন অনেকে।  

ঐতিহ্যবাহী বারুণী মেলা উপলক্ষে অনেক বছর আগে থেকেই দুই দেশের সীমান্ত অঘোষিতভাবে কিছু সময়ের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। এ সুবাদে এপার বাংলার মানুষ ছুটে যান ওপারের সাব্রুম মহকুমা শহরে, আবার ওপারের লোক এসে ঘুরে যান রামগড়। তবে এবার এসবের কিছুই হয়নি। সকাল থেকে অধীর অপেক্ষায় থাকার পরও এবার সাব্রুম সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়নি।

খাগড়াছড়ি থেকে ঘুরতে যাওয়া ছোটন দে জানান, বাংলাদেশ-ভারতের নাগরিকদের মিলনমেলা হিসেবে দেখা হয় এই বারুণী স্নানকে। কিন্তু এবার ভারতীয় অংশের সীমান্ত খুলে না দেওয়ায় ওপার বাংলার মানুষ আসতে পারেনি আর আমরাও যেতে পরিনি।

এদিকে রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শরিফুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে বুধবার রাতে বিএসএফের এক কর্মকর্তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা আশংকা প্রকাশ করছেন, সীমান্ত খুলে দিলে রোহিঙ্গারা ভারতে ঢুকে যাবে। তাই সরকারি আদেশ মেনে বিএসএফ সীমান্তে কড়া অবস্থানে ছিল।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৮
এনএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।