পরে মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) রাত পৌনে ১০টার দিকে বরিশাল নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ লঞ্চটিকে ঘাটে নোঙর করাতে বাধ্য করে ও যাত্রীদের নিরাপদে লঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। পাশাপাশি যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে লঞ্চের যাত্রা বাতিল করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে ঝালকাঠীর গাবখান চ্যানেল সংলগ্ন বিষখালি নদীতে এ ঘটনা ঘটে।
লঞ্চের যাত্রী বরগুনার বাসিন্দা জসিম বাংলানিউজকে জানান, ঘটনাস্থলে বসে একটি মালবাহী কার্গো জাহাজ লঞ্চটিকে মুখোমুখি ধাক্কা দেয়। এ সময় লঞ্চটি একদিকে কাত হয়ে গেলে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ও হৈচৈ শুরু হয়ে যায়।
পরবর্তীতে লঞ্চটির নিচের অংশে স্টাফ ও যাত্রীরা গিয়ে দেখতে পায়, সামনের একটি অংশ ফেটে ভেতরে পানি প্রবেশ করছে। এ অবস্থায় যাত্রীরা নিরাপদে তাদের নামিয়ে দিতে বললেও স্টাফরা তা ভ্রুক্ষেপ না করে চালাতে থাকে।
অপর যাত্রী ইকবাল হোসেন বলেন, বার বার লঞ্চটিকে নোঙর করার জন্য বললেও তা কোনোভাবেই শুনছিলেন না স্টাফরা। তারা বার বার বলেছিলেন কোনো সমস্যা হয়নি, কিছু হবে না। কিন্তু লঞ্চের তলা ফেটে পানি ভেতরে আসতে যাত্রীরাই দেখেছে। তলদেশে ফাটল দেখার পরও দেড় হাজারের ওপর যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি তারা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
লঞ্চের মাস্টার উজির আলী বলেন, বেলা আড়াইটার দিকে বরগুনা থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে এমভি শাহরুখ-১ লঞ্চটিতে হাজারের মতো যাত্রী নিয়ে রওয়ানা হয়। রাত ৮টার দিকে ঝালকাঠীর গাবখান চ্যানেল সংলগ্ন বিষখালি নদীতে কার্গোর সঙ্গে লঞ্চের ধাক্কা লাগে। ঘটনার পরপরই তলদেশ যাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ধাক্কায় লঞ্চের নিচের অংশে চুল পরিমাণ ফাটল ধরে। তবে সেই ফাটলে কোনো সমস্যা না হওয়ায় যাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেই লঞ্চটি চালানো শুরু করেন। পাশাপাশি বরিশালের যেকোনো ডকইয়ার্ডে গিয়ে লঞ্চটি আবারো চেক করার কথাও যাত্রীদের বলা হয়েছিল। নিয়মানুযায়ী কার্গো জাহাজ যাত্রীবাহী লঞ্চকে জায়গা দেবে কিন্তু দুর্ঘটনার সময় তা হয়নি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ, বরিশাল) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার বাংলানিউজকে বলেন, এমভি শাহরুখ-১ লঞ্চের সঙ্গে কার্গোর ধাক্কা লাগার বিষয়টি জানার পর থেকে নৌ-নিরাপত্তা বিভাগ, বরিশাল নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ, নৌ-পুলিশ, থানা পুলিশ, কোস্টগার্ড ও আনসার সদস্যরা মিলে কীর্তনখোলা নদীর মাঝখানে অবস্থান নেয়।
রাত পৌনে ১০ টার দিকে বরিশাল নদী বন্দর সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীতে লঞ্চটি পৌঁছা মাত্র সেটিকে পল্টুনে নিয়ে আসা হয় ও যাত্রীদের লঞ্চ থেকে নিরাপদে নামনো হয়।
তিনি বলেন, নৌ পরিবহন অধিদফতরের ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড শিপ সার্ভেয়ার (কারিগরি) আবু হেলাল সিদ্দিকী লঞ্চটিকে ভালোভাবে পরিদর্শন করেন। এরপর তার পর্যবেক্ষন অনুযায়ী শাহরুখ-১ লঞ্চটিকে চলাচল উপযোগী নয় বলে জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে যাত্রী সাধারণের নিরাপত্তার স্বার্থে নৌযানটি পুর্ণাঙ্গ সার্ভে না করা পর্যন্ত যাত্রা স্থগিত করা হয়েছে।
পাশাপাশি আজকের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড শিপ সার্ভেয়ার (কারিগরি) আবু হেলাল সিদ্দিকী জানান, লঞ্চটির তলদেশে আঘাত লাগায় এখন বাহ্যিকভাবে একটু ফাটল ছাড়া তেমন কোনো সমস্যা মনে হচ্ছে না। ধাক্কার কারণে তলদেশে যেকোনো ধরনের ক্ষতি হতে পারে যা এখন বোঝা যাচ্ছে না কিন্তু বড় নদীতে গিয়ে ঢেউয়ের বা অন্য কোনো কারণে এটিতে যে সমস্যা দেখা দেবে না তাও বলা যাচ্ছে না। তাই যাত্রীদের নিরাপত্তা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে লঞ্চটি রাতে বরিশাল নদী বন্দরে নোঙর করে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান। পাশাপাশি যাত্রীবিহীন চালিয়ে যেতে হলেও তাকে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৮/ আপডেট: ০১০০ ঘণ্টা
এমএস/এএটি