এক পর্যায়ে গত মাসে এই ১০ এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেছেন, শুধু ১০ এজেন্সি নয়, এই সেক্টরে যাতে সবাই কাজ করার সুযোগ পায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ইস্কাটনে মন্ত্রণালয়ের নিজ কক্ষে বাংলানিউজসহ কয়েকটি গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা জানান।
এক প্রশ্নের উত্তরে নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, মালয়েশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে যে ১০টা এজেন্সি আছে, এখন শুধু সেগুলোই নয়, আমরা এই সেক্টরে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে।
মালয়েশিয়ায় অনিবন্ধিত শ্রমিকদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রি-হায়ারিং (পুনঃনিয়োগ) প্রক্রিয়া যেটা চলছিলো অর্থাৎ দেশটির সরকার অবৈধ শ্রমিকদের নতুন করে নিবন্ধিত হওয়ার যে তারিখ দেয় সেটা শেষ হয়ে গেছে। তবে আমাদের যারা (অবৈধ শ্রমিক) আছে তাদের ডকুমেন্ট দিয়ে বৈধ করতে কিংবা মালয়েশীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে বৈধ করানোর চেষ্টা করছি।
‘শুধু এটা নিয়েই আমরা বসে নেই। নতুন করে যারা যেতে চায় তারাও যাতে নির্বিঘ্নে যাওয়ার সুযোগ পায় সে বিষয়ে কাজ করছি এবং অনেকেই যাচ্ছেও। ’
এজেন্সিরগুলোর সক্ষমতা নিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা কাজ করছি। কোন কোম্পানি ক্যাপাবল (সক্ষম) না, আর কোনটার ক্ষমতা কতটুকু, কর্মচারীর সংখ্যা কত, বিদেশে ওই কোম্পানির লিংক আপ কতটুকু সেসব বিষয়ে তো আমরা বুঝি। সেই হিসেবে শুধু ১০ এজেন্সি নয়, ৫৬ – ৫৭ টি এজেন্সি ক্যাপাবল।
‘ওরা (এজেন্সি) বিদেশে কর্মী পাঠাতে পারে। বাদ বাকি যারা আছে তাদের মধ্যেও ক্যাপাবল অনেকে। তবে তারা তো অন্যান্য দেশেও জনশক্তি রফতানি করছে। যেমন- সৌদি আরব, দুবাই, জাপানে কর্মী পাঠাচ্ছে। ’
৫৬-৫৭টি এজেন্সির বিষয়ে তিনি বলেন, যে ১০টা কোম্পানি আছে তারাও এর মধ্যে রযেছে। আমরা চাই এ খাতে কর্মী পাঠানো হোক বিদেশে এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সবাই এই কাজটা করুক। এতে প্রতিযোগিতাও সৃষ্টি হবে।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ফের চালুর বিষয়ে নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, আশা করেছি এ মাসেই খুলবে। এ নিয়ে কুয়ালালামপুরে আমাদের অ্যাম্বাসেডরের (হাইকমিশনার) সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ওই দেশের মন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের কনস্যুলার কথা বলেছেন।
এ সময় কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক কর্মকর্তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন মন্ত্রী।
পরে তিনি জানান, শ্রমবাজার ফের চালুর বিষয়ে দেশটির মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনাও হয়েছে। তারা বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন। আশা করছি বিস্তৃত আকারে অচিরেই খুলে যাবে এ শ্রমবাজার।
মালয়েশিয়ায় যাওয়ার ক্ষেত্রে খরচের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খরচের বিষয়ে সরকারিভাবে ৩৭ হাজার টাকার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে এখন ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। আসলে এটা ঠিক আছে।
‘এখান থেকে যিনি ব্যবসা করছেন তিনিও তো কিছু কমিশন নেবেন। আমরা হিসাব করে দেখেছি এক লাখ ৬০ হাজার টাকার মধ্যে ৫০ হাজার টাকা দুই দেশের এজেন্সির কমিশনই চলে যায়। আর বাকি টাকার পুরোটাই খরচ হয়ে যায়। ’
অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার প্রসঙ্গে মন্ত্রীর ভাষ্য, দেখুন। বেশি টাকা অনেকেই দিতে পারে। তবে আমরা সেভাবে কারও কোনো অভিযোগ পাইনি। বিমানবন্দরে গিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে বিদেশ যাওয়া শ্রমিকদের জিজ্ঞাসা করলেও কেউ-ই স্বীকার করতে চায় না।
রাশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা রয়েছে উল্লেখ করে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, নতুন করে রাশিয়ার ভ্লাদিভস্তকে বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা রয়েছে। সেখানে এ চাহিদা পরিপূর্ণ করার জন্যে আমি ব্যক্তিগত এবং সরকারিভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যাতে রাশিয়ার বাজারটা আমরা ধরতে পারি।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যস্ত ৪ লাখ ৫১ হাজার ৫৩৬ জন বাংলাদেশি কাজের জন্য বিদেশে গেছেন। এর মধ্যে শুধু মালয়েশিয়ায় গেছেন ১ লাখ ৯ হাজার ৫৬২ শ্রমিক। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিলো ৯৯ হাজার ৭৮৭।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৮
টিসি