এবার তাদের দখলে থাকা ১২শ’ একর খাস জমি উদ্ধারসহ অভিযোগ তদন্তে অনুসন্ধানকারী টিম গঠন করেছে দুদক। সংস্থার উপ-পরিচালক মোশারফ হোসেন মৃধাকে টিমের প্রধান করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) এম এ হাসেম ও আমিন আহমেদ ভূঁইয়ার সম্পদ অনুসন্ধানে টিম গঠন করে দুদক। এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, সাত কর্মদিবসের মধ্যে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক, দুদকের চাহিদা মতো তথ্য সরবরাহ করবে।
এতে আরো বলা হয়, নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলার ভূমি অফিসের নামজারি জমাভাগ মোকদ্দমা নং ৮৩৮/২০০৮-০৯, ২০৬/২০১২-১৩, ২০৮/২০১২-১৩, ২০১৭০/২০১২-১৩, ২১৭১/২০১২-১৩, ২১৭৩/২০১২-১৩, ২১৭৪/২০১২-১৩ এর সংশ্লিষ্ট নথির কপি, নামজারির জমাভাগ সংশ্লিষ্ট রেজিস্টারের কপি দুদকে জমা দিতে হবে।
একই সঙ্গে নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলার ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত জমি অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বা তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান দখলে থাকলে তার বিবরণ ও পরিমাণ সংশ্লিষ্ট দাগ খতিয়ান উল্লেখ করে পর্চার ফটোকপিসহ জমা দিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট নথিতে দুদকের অভিযোগে বলা হয়, পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাসেম ও হোটেল লা-মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদ ভূঁইয়া রাজম্ব ফাঁকি দিয়ে বৈধ ব্যবসার আড়ালে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করছেন। বিপুল পরিমাণ সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের মাধ্যমে শতশত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন এবং নোয়াখালীর সুবর্ণচরে যথাক্রমে ৫০০ একর ও ৭০০ একর খাস জমি জবরদখল করে রেখেছেন।
এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাদের তলব করে দুদক। পৃথক পৃথক তলব নোটিশে তাদের তলব করেন দুদকের উপ-পরিচালক মোশারফ হোসেন মৃধা। এম এ হাসেমকে বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় এবং আমিন আহমেদ ভূঁইয়াকে বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় সেগুন বাগিচাস্থ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়।
ওই নোটিশে এম এ হাসেমের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগে দুদক বলেছে, পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাসেম রাজস্ব ফাঁকি, বৈধ ব্যবসার আড়ালে অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা ও সরকারি সম্পত্তির দখলসহ শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।
অন্যদিকে আমিন আহমেদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, হোটেল ব্যবসার আড়ালে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন আমিন আহমেদ ভূঁইয়া। এছাড়া নোয়াখালীর সুবর্ণচর এলাকায় ৭০০ একর সরকারি খাস জমি জবরদখল করে রেখেছেন এবং হোটেল ব্যবসার আড়ালে শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।
এম এ হাসেম ও আমিন আহমেদ ভূঁইয়াকে দুদকে হাজির হওয়ার সময় পাসপোর্টের ফটোকপি (পরিবারের সদস্যসহ), জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি (পরিবারের সদস্যসহ), সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত সকল দলিল/রেকর্ড পত্র, আয়কর নথির যাবতীয় রেকর্ড পত্র নিয়ে আসতে বলা হয় দুদকের নোটিশে।
বহুল আলোচিত ব্যবসায়ী এম এ হাসেম বর্তমানে বেসরকারি নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি। স্বাধীনতার আগে তামাক ব্যবসায়ী হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। এরপর পণ্য আমদানির ব্যবসায় নাম লেখান। স্বাধীনতার পর ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তিন দশকে গড়ে তোলেন পারটেক্স গ্রুপের একের পর এক প্রতিষ্ঠান।
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এম এ হাসেম যোগ দেন বিএনপিতে। এরপর তার ব্যবসার আরও স্ফীতি ঘটে। বিলাসবহুল গাড়ি, জমি দখলসহ নানা ঘটনায় তিনি হয়ে ওঠেন আলোচিত। দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর সন্দেহভাজন দুর্নীতিগ্রস্তদের যে দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করা হয় তাতে এম এ হাসেমের নাম ছিল। বর্তমানে পারটেক্স গ্রুপের অধীনে মোট ২০টি কোম্পানি পরিচালিত হচ্ছে।
অন্যদিকে হোটেল লা-মেরিডিয়ানের স্বত্বাধিকারী আমিন আহমেদ ভূঁইয়া মেট্রো গ্রুপের চেয়ারম্যান। তিনি ও তার ভাই কবির আহমেদ ভূঁইয়া বিএনপির অন্যতম চাঁদাদাতা। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থেকে তিনি বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। যদিও বিএনপিতে বর্তমানে তার কোন পদ-পদবী নেই।
২০০৭ সালের ৮ মার্চ তারেক রহমান ও তার একান্ত সহকারী মিয়া নূরউদ্দিন অপুকে আসামি করে ১ কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেন গুলশানের আলোচিত উদয় টাওয়ারের মালিক ও ঠিকাদার আমিন আহমেদ ভূঁইয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৮
আরএম/এমজেএফ