ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

প্রতি ১০ মিনিটে ১ জনের প্রাণ কেড়ে নেয় জলাতঙ্ক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৮
প্রতি ১০ মিনিটে ১ জনের প্রাণ কেড়ে নেয় জলাতঙ্ক জলাতঙ্ক

ঢাকা: জলাতঙ্ক একটি ভয়ংকর মরণব্যাধি। এ রোগে মৃত্যু অনিবার্য। জলাতঙ্কের কারণে পৃথিবীতে প্রতি ১০ মিনিটে একজন  মানুষের মৃত্যু ঘটে। সে হিসেবে বছরে প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় দুই থেকে তিন লাখ মানুষ কুকুর ও অন্যান্য প্রাণীর আক্রমণের শিকার হয়ে থাকেন। এতে বছরে সহস্রাধিক মানুষ জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় এবং এর পাশাপাশি অনেক গবাদিপশুও এ রোগে মারা যায়।

যার অর্থনৈতিক মূল্য অপরিসীম।

সংশ্লিষ্টদের মতে, আক্রমণকারী প্রাণীগুলোর মধ্যে রয়েছে কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বেজি, চিকা ও বানর অন্যতম। এসব প্রাণীর কামড়ের ফলে মানুষ ও গবাদিপশুর জলাতঙ্ক হয়ে থাকে।  

সরকারের সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের বার্ষিক পরিসংখ্যান অনুসারে দিনে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ৬০০ থেকে ৮০০ লোক চিকিৎসা নিতে আসেন। এ রোগে ২০১৭ সালে ৫০ জনের মৃত্যু ঘটে। বছরে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন রোগী মৃত্যুবরণ করেন জলাতঙ্কে।

বাংলাদেশে জলাতঙ্কে আক্রান্তদের মধ্যে ৮৫ থেকে ৯৯ ভাগই কুকুরের কামড়ের শিকার 

তবে পশু কামড়ালেই জলতঙ্ক হবে এমনটি ভাবার অবকাশ নেই। কারণ আক্রমণকারী পশুকে অবশ্যই জলাতঙ্কের জীবাণু বাহক হতে হবে।

২৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন হচ্ছে। ২০০৭ সালে সর্বপ্রথম বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস পালন হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘জলাতঙ্ক অপরকে জানান, জীবন বাঁচান’।

জানা গেছে, ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে জলাতঙ্কমুক্ত করতে ২০১০ সাল থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক ব্যাধি শাখার (সিডিসি) উদ্যোগে প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় জাতীয় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চলমান রয়েছে। যা ২০১৭ সালে জাতীয় জলাতঙ্ক নির্মূল কর্মসূচিতে উন্নীত করা হয়।

এই কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ২০১১ সাল থেকে জাতীয় পর্যায়ে একটি এবং প্রতিটি জেলা পর্যায়ে একটিসহ ৬৭টি জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল কেন্দ্র চালু করা হয়। এসব কেন্দ্র থেকে কুকুরের কামড়ের আধুনিক ব্যবস্থাপনা এবং টিকা বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও নার্সসহ অন্যান্য জনবলের মাধ্যমে এ কার্যক্রম চলছে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিনামূল্যে এক লাখ ৮০ হাজার ইনজেকশন এবং দুই লাখ ৬৫ হাজার ২৭৫ জনকে প্রাণীর কামড়ের চিকিৎসা দেওয়া হয়। সারাদেশে এ পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি রোগীকে এ সেবা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিডিসি শাখার উদ্যোগে ২০১১ সাল থেকে ৬ দশমিক ৫ লাখের বেশি কুকুরকে টিকাদান কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের জেনেটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের ডেপুটি ম্যানেজার ডা. উম্মে রুমান সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, এ রোগে কেউ আক্রান্ত হলে মৃত্যু অনিবার্য। তাই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

তিনি বলেন, কুকুর কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিকভাবে কাপড় ধোয়ার সাবান দিয়ে ক্ষত স্থান বার বার ধুতে হবে। এরপর যতো দ্রুত সম্ভব টিকা দিতে হবে। অনেকেই টিকার তিনটি ডোজ সম্পন্ন করে না। যে কারণে টিকা নেওয়ার পরও অনেকের জলাতঙ্ক হয়। আমাদের গবেষণা মতে, দেশের ৭০ ভাগ কুকুরকে তিন রাউন্ড টিকা দিতে পারলে একশ’ ভাগ জলাতঙ্কমুক্ত হওয়া সম্ভব।

সামগ্রিক বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, জলাতঙ্ক একটি অবহেলিত রোগ। উন্নত দেশগুলোতে এ রোগের গবেষণা হয় না। তাই এর কোনো ওষুধ আজ পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। এ রোগ মূলত মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে। সে কারণে আক্রান্ত মানুষ পাগলের মতো আচরণ করে। রোগটি ৮৫ ভাগই গ্রামে দেখা দেয়।

তিনি বলেন, আগে জলাতঙ্কের টিকার মান তেমন ভালো ছিল না। কিন্তু বর্তমানে উন্নত টিকা থাকায় এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার আগের চেয়ে অনেক কম।

বাংলাদেশ সময়: ০২৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৮
এমএএম/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।