ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

আসামিপক্ষের ‘হুমকি-ধমকিতে আতঙ্কিত’ নুসরাতের পরিবার

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৯
আসামিপক্ষের ‘হুমকি-ধমকিতে আতঙ্কিত’ নুসরাতের পরিবার

ফেনী: আগামী ২৪ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) আলোচিত নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় রায়। তবে রায়ের ক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই যেন অজানা আতঙ্ক আঁকড়ে ধরছে নুসরাতের পরিবারকে। তাদের দাবি, আসামিপক্ষ ক্রমাগত হুমকি-ধমকি দিয়ে চলেছে তাদের, সেজন্য তারা নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে।

মামলায় রায় ঘোষণার আগে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে ফেনীর সোনাগাজী পৌর শহরের বাড়িতে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে নিরাপত্তা নিয়ে এ আশঙ্কার কথা বলছিলেন নুসরাতের মা শিরিন আখতার এবং ভাই ও মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান।

নুসরাতের মা বলেন, আসামিপক্ষের লোকজন হুমকি দিচ্ছে বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেবে।

বাড়িতে বাত্তি (প্রদীপ) জালানোর মতোও কোনো সদস্য অবশিষ্ট রাখবে না। কেউ কেউ এমনও হুমকি দিচ্ছে, কবর থেকে নুসরাতের মরদেহও গায়েব করে ফেলা হবে।

এ অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা চান শিরিন আখতার।  

হুমকিদাতাদের ব্যাপারে নির্দিষ্টভাবে কিছু না বললেও নুসরাতের মা বলেন, মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার পর জেলে থেকে কী বাকি রেখেছে সে? সে একাই আমার মেয়েকে পুড়িয়ে মারার ষড়যন্ত্র করেছে। আর এখনতো ১৬ আসামি, তারা ইচ্ছে করলে আমাদের বড় ক্ষতি করে ফেলতে পারে।

মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে দীর্ঘদিন যাবত পুলিশ তাদের বাড়ি ঘর এবং পরিবারের নিরাপত্তা দিয়ে এসেছে। এ নিরাপত্তা যেন রায় কার্যকর হওয়া পর্যন্ত থাকে।  

মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) নুসরাতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিন জন পুলিশ কর্মকর্তা বাড়ির সামনে কর্তব্যরত রয়েছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোস্টারভিত্তিক দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই এ বাড়িটিতে নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকে পুলিশ।  

এ বিষয়ে ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. নুরন্নবী বাংলানিউজকে জানান, নুসরাতের পরিবারের নিরাপত্তা বিধানে সচেষ্ট রয়েছে ফেনী জেলা পুলিশ। সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছেন তিন পুলিশ সদস্য। এ নিরাপত্তার বাইরেও নুসরাতের পরিবার যে কোনো বিষয় জানালে পুলিশ সে ব্যাপারে ভূমিকা রাখার জন্য তৎপর রয়েছে।  

গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় অধ্যক্ষের সহযোগীরা।

৮ এপ্রিল নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান আট জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে না নেওয়ায় তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে বলা হয় মামলায়। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় নুসরাতের। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক’দিনের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় আসামিদের।

গ্রেফতার ও তদন্তের পর গত ২৮ মে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইনের আদালতে ১৬ জনকে আসামি করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সেদিন অভিযোগপত্রসহ মামলার নথি বিচারক ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে পাঠিয়ে দেন। এরপর ৩০ মে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে আসামিদের হাজির করা হলেও বিচারক সেদিন অভিযোগপত্র গ্রহণের ওপর শুনানি না করে ১০ জুন শুনানির তারিখ ধার্য করেন।

পরে ১০ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ফেনীর পরিদর্শক মো. শাহ আলম আদালতে মোট ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেন। এ ১৬ আসামি হলেন- মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, আওয়ামী লীগ নেতা ও মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।  

মামলায় মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করা হলেও তদন্তে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় অন্য পাঁচ জনকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।  

অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের, জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দি, সাক্ষ্যগ্রহণ, যুক্তিতর্ক শুনানির পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণার জন্য ২৪ অক্টোবর দিন ধার্য করেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ।

অন্যদিকে, অধ্যক্ষের যৌন হয়রানির বিষয়ে নুসরাতের অভিযোগ গ্রহণের সময় তার ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনেরও বিচার চলছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৯
এসএইচডি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।