ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বরিশাল মহাশ্মশানে দিপালী উৎসবের প্রস্তুতি 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৯
বরিশাল মহাশ্মশানে দিপালী উৎসবের প্রস্তুতি 

বরিশাল: দিপালী উৎসবকে ঘিরে বরিশাল নগরের মহাশ্মশানকে প্রতিবছরের মত প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রতিবছর ভূত চর্তুদশীর পূণ্য তিথিতে এ উৎসব হয়ে থাকে।

আর এ বছর তিথি অনুযায়ী, ২৬ অক্টোবর (শনিবার) দিপালী উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। পরদিন ২৭ অক্টোবর (রোববার) শ্মশান কালীপূজা অনুষ্ঠিত হবে।

এরইমধ্যে পৌনে দুইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সার্বিক সবকিছুর প্রস্তুতি শেষের পথে। প্রায় পৌনে দুইশ বছর সময় ধরে চলে আসা রেওয়াজ অনুযায়ী প্রিয়জনের স্মৃতির উদ্দেশ্যে দিপালী উৎসবে জ্বালানো হয় প্রদীপ।  

জানা গেছে, প্রিয়জনের স্মৃতিতে মোমের আলো জ্বালানো ছাড়াও সমাধিতে তার প্রিয় খাদ্যসহ নানা উপাচার ও ফুল দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়। পূর্বপুরুষের স্মৃতিতে করা হয় প্রার্থনা। তবে যাদের স্বজনরা দিপালী উৎসবে এখানে আসে না। সেসব সমাধিগুলোতে মহাশ্মশানের তত্ত্বাবধানে দীপ প্রজ্জ্বলন করা হয় উৎসবের দিন।

দিপালীতে এ শ্মশানে শ্রদ্ধা জানাতে নেপাল এবং ভারতসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে। এ শ্মশানের দিপালী উৎসব দেখতে দেশ-বিদেশ থেকেও আসেন ভক্ত অনুসারী ও পর্যটকরা। এখানে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিত্বসহ সমাজসেবীদের সমাধি রয়েছে। আর দিপালী উৎসবে প্রিয়জনের সমাধিতে দীপ জ্বালিয়ে দেওয়ার প্রথা উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক থেকে হয়ে আসছে।

দিপালী উৎসব ও মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সভাপতি মানিক মুখার্জী কুডু জানান, প্রায় দুইশ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবকে কেন্দ্র করে সবপ্রস্তুতি প্রায় সম্পন্নের পথে। দিপালী উৎসবকে ঘিরে গত সোমবার (২১ অক্টোবর) বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় নিরাপত্তা বিষয়ক আলোচনার পাশাপাশি নির্বিঘ্নে এ উৎসব পালনের লক্ষ্যে সিটি করপোরেশন, বিদ্যুৎ বিভাগ, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতনদের উপস্থিতিতে নানান সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

সমাধি ধোয়া-মোছার কাজ করা হচ্ছে।  ছবি: বাংলানিউজএদিকে, মহাশ্মশান ঘুরে দেখা গেছে, শ্মশান ও শ্মশানের সমাধিস্থাপনাগুলো ধোয়া-মোছার কাজ শেষে চলছে রং ও লেখার কাজ। যা স্বজনদের পাশাপাশি পুরনো সমাধিগুলো নিজ উদ্যেগে সংস্কারের কাজ করছে মহাশ্মশান রক্ষা সমিতি। বিশেষ করে দিপালী উৎসবকে ঘিরে ইতোমধ্যে স্বজন বিহীন সমাধিগুলো প্রতিবছরের মত মহাশ্মশান রক্ষা সমিতির পক্ষ থেকে রং করা হয়েছে। এছাড়া মহাশ্মশান রক্ষা সমিতির পক্ষ থেকে মহাশ্মশানে করা হবে বাহারি আলোকসজ্জা। যার কাজও এখন শেষের দিকে।

দিপালী উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে প্রতিবছরের মত জোরদার অবস্থানে থাকবে পুলিশ ও র‌্যাব। এর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী পুরো শ্মশানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কাজ করবে। এছাড়া শ্মশান এলাকাজুড়ে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে বলে জানা গেছে।

বরিশাল নগরের লাকুটিয়া খালকে ঘিরে ৪ একর জমির উপর এ মহাশশ্মানের অবস্থান। জানা গেছে, জমিদারদের আর্থিক সহায়তায় নতুন বাজারে প্রথম মহাশ্মশান স্থাপিত হয়। পরে তা কাউনিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। কালের বিবর্তনে কাউনিয়ার শ্মশানটির উন্নয়ন হলেও নতুন বাজারের প্রায় এক একর শ্মশানের জমি বেদখল হয়ে গেছে। পুরনো শ্মশানের অধিকাংশ সমাধি ধ্বংস হয়ে গেলেও এখনো সেখানে ব্রাহ্মণদের ২/৩টি সমাধি রয়েছে। তার পাশেই রূপসী বাংলার কবি জীবনান্দ দাশের বাবা সত্যানন্দা দাশ ও পিতামহ সর্বানন্দা দাশের সমাধি এখনো টিকে আছে।  

মহাশ্মশান কমিটির নেতারা জানান, নতুন পুরনো মিলিয়ে এখন ওই মহাশশ্মানে সমাধি লাখের কাছাকাছি। এর মধ্যে এক হাজার সমাধির মঠ এখন বেওয়ারিশ। এদের বংশধররা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে চলে গেছেন। পুরনো বেওয়ারিশ মঠগুলোকে সংস্কার করে যে ক’টির সন্ধান মিলেছে তাতে খোদাই করে পরিচয় লেখা হয়েছে।  

মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সভাপতি মানিক মুখার্জী কুডু জানান, পুরাকীর্তি আর দৃষ্টি নন্দন এ পবিত্র স্থানটি শুধু হিন্দু সম্প্রদায় নয়, সব সম্প্রদায়ের লোকজনকেই এখন সেখানে টেনে নিয়ে যায়। এ মহশ্মশানে রয়েছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ বিল্পবী দেবেন ঘোষ, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী মনোরমা মাসিমা, শিক্ষাবিদ কালি চন্দ্র ঘোষসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সমাধি।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৯
এমএস/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।