স্বপন পেশায় একজন দিনমজুর কৃষক তিনি। কাজকর্ম তেমন জোটে না, খুঁড়িয়ে মাঝে-মধ্যে হয় তার রোজগার।
দিন-রাত বাঁশের চাটাই তৈরি করে স্বপনের স্ত্রী রিতা সংসার চালানোর পাশাপাশি সন্তানদের উচ্চশিক্ষা দিতে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। সংসারে যে অর্থের যোগান দেওয়ার কথা স্বপনের, চাটাই তৈরি করে তার পুরোটা দিচ্ছেন জীবন সংগ্রামী নারী রিতা।
তিনি তার ছেলে জয় বিশ্বশর্মাকে তেলিগাতী ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ ও মেয়ে প্রিয়া রাণী বিশ্বশর্মাকে তেলিগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াচ্ছেন।
ছেলের মতো মেয়েকেও উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করানোর আশায় বুক বেঁধেছেন তিনি। যত কষ্ট আর সংগ্রমাই করতে হোক রিতা সন্তানদের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে আপসহীন।
‘প্রয়োজনে ২৪ বা ৪৮ ঘণ্টায় একবেলা খাবো তবুও সন্তানদের পড়ালেখা বন্ধ করবো না। ছেলে-মেয়ে, ওরা দু’জনই তো আমাদের জীবনের সম্পদ। এ ছাড়া জীবনে কি আর আছে? ওদের মানুষ করতে না পারলে জীবন-সংগ্রাম সবই তো বৃথা। ’- সন্তানদের নিয়ে নিজের আবেগ-আশার কথা এভাবেই প্রকাশ করলেন মা রিতা।
চাটাই তৈরি করে কোনো কোনো মাসে ৬-৭ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। আবার তা কোনোমাসে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায় নেমে আসে বলে জানালেন রিতা। আর এ রোজগার থেকেই চালাতে হয় সংসার, সন্তানদের পড়ালেখার খরচ।
স্বাভাবিক পরিশ্রমে একদিনে সাধারণত ২/৩টি চাটাই তৈরি করা সম্ভব হয়। আবার প্রয়োজনে কখনো ৪/৫টি চাটাইও তৈরি করতে পারেন রিতা। প্রতিটি চাটাইয়ের দাম আকার ও মান ভেদে ভিন্ন হয়। বাঁশ কিনে কেটে রিতা নিজে একাই তৈরি করে চাটাই। এতে কারো সাহায্য নেননা তিনি।
এছাড়াও সময় পেলে রিতা তার স্বামীর মতো দিনমজুরের কাজ করে কিছু বাড়তি টাকাও রোজগার করেন। এভাবেই চলছে তাদের জীবন সংগ্রাম।
রিতার ছেলে জয় বাংলানিউজকে জানান, পড়ালেখা শেষ করে সরকারি একটি ভালো চাকরি করে মা-বাবার দুঃখ গোছানো তার প্রথম উদ্দেশ্য। এছাড়া জীবনে
আপাতত আর কোনো লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নেই।
কারণ ব্যাখা করে জয় জানান, মা-বাবার অমানবিক পরিশ্রম তিনি আর সহ্য করতে পারছেন না। সেই ছোট থেকেই মা-বাবাকে বিরতিহীন সংগ্রাম করতে দেখছে, কিন্তু কখনো বিনোদন বা অবকাশযাপন করতে দেখেনি।
স্বাভাবিক জীবনের জন্য একটি মানুষ কতক্ষণ, কতদিন, মাস আর কত বছর সংগ্রাম করতে পারে বলা যায় কী?; প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় জীবন সংগ্রামী ওই মায়ের সন্তান কলেজছাত্র জয়।
রিতার স্বামী স্বপন বাংলানিউজকে বলেন, রিতা শুধু তার স্ত্রী নন অভিভাবকও বটে। একজন স্ত্রীকে নারী ভেবে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ একজন নারী বা স্ত্রী চাইলেই অনেককিছু পারে। তারা পারে ধসে যাওয়া একটি সংসার এবং নিশ্চিত পতনের হাত থেকে পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করতে। রিতা তারই বাস্তব ও জ্বলন্ত প্রমাণ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৯
এসএইচ