প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে অবৈধ ক্যাসিনোতে অভিযান শুরু করে র্যাব। এরপর থেকে গ্রেফতার হয়েছেন যুবলীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা।
ক্যাসিনো পরিচালনায় জড়িতদের সম্পদ অনুসন্ধানে অভিযান পরিচালনার ১২ দিন পর ৩০ সেপ্টেম্বর অনুসন্ধান দল গঠন করে দুদক। দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাঈদ মাহবুব খানকে তদারক কর্মকর্তা ও পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে ছয় সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। এ দলের অন্য সদস্যরা হলেন- দুদকের উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সালাউদ্দিন আহম্মেদ, সহকারী পরিচালক নেয়ামুল আহসান গাজী ও মামুনুর রশিদ চৌধুরী।
অনুসন্ধান দল গঠনের পর বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় শুরু করে দুদক। এর অংশ হিসেবে একটি গোয়েন্দা সংস্থা, বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) ও র্যাবের গোয়েন্দা ইউনিটের কাছ থেকে তথ্য পায় দুদক। সেইসঙ্গে দুদকের নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিটও অনুসন্ধান চালিয়ে আসছিল। এ চার সংস্থার তথ্যের সমন্বয়ে দুদকের অনুসন্ধান দলটি প্রাথমিকভাবে গত ১৪ অক্টোবর ৪৩ জনের একটি তালিকা করে।
ওই তালিকায় নাম রয়েছে- যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নয় নম্বর ওয়ার্ডের বহিষ্কৃত কাউন্সিলর, যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম-সম্পাদক ও বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ, যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সফিকুল আলম ফিরোজ, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বকুল, গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনু ও সহ-সম্পাদক রুপন ভূঁইয়ার।
এরপর থেকেই তালিকায় নতুন নতুন নাম যুক্ত হতে থাকে। অবৈধ সম্পদ ও বিদেশে অর্থপাচারের সন্দেহে যাদের নাম যুক্ত হতে থাকে, তাদের বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতা।
নতুন করে যে নামগুলো সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এর মধ্যে দুই জন সংসদ সদস্যও রয়েছেন। এ দু’জন হলেন ভোলা-৩ আসনের নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এবং চট্টগ্রাম-১২ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। আরও রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ‘অব্যাহতিপ্রাপ্ত’ সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার, ঢাকা দক্ষিণ সিটির কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজানের নাম।
প্রাথমিক তালিকায় থাকা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, এনামুল হক আরমান, রুপন ভূঁইয়া, বিতর্কিত ঠিকাদার জি কে শামীমের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই মামলা করেছে দুদক।
জি কে শামীমকে অবৈধভাবে কাজ পাইয়ে দেওয়ায় অভিযুক্ত গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম এবং বর্তমান অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হাইয়ের সম্পদের হিসাব চেয়েও নোটিশ পাঠিয়েছে দুদক।
এ বিষয়ে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত বাংলানিউজকে বলেন, দুদকের অনুসন্ধান দল কাজ করছে। অনেকেরই নাম এসেছে। বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি গণমাধ্যমে আসা নামগুলোও সংগ্রহ করে অনুসন্ধান দল কাজ করছে। তালিকা বড়-ছোট না, যাদের নামে অভিযোগ আসছে, তাদের ব্যাপারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মুদ্রাপাচারের অভিযোগের বিষয়টি দুদকের এখতিয়ারভুক্ত। অনুসন্ধানে তথ্যপ্রমাণ মিললে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হবে। তাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে মামলা করবে দুদক।
বাংলাদেশ সময় ১৭০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৯
ডিএন/এফএম