আজ আবহমান বাংলার প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে মানুষের ব্যবহৃত নানান উপাদান-উপকরণ। যেগুলো দিয়ে মানুষ তাদের টিকে থাকার সংগ্রাম চালাতো।
সম্প্রতি একটি সকালের পথ ধরে তাকে পাওয়া গেছে কাঁধে উকু নিয়ে ব্যস্ততায় হেঁটে যেতে। একটু কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করতেই ‘আমার সময় নেই’ বলে ব্যস্ততার জানান দেন। ছবি তোলার প্রসঙ্গটি আনতে তার ঘোর আপত্তি প্রকাশ পায়।
অবহেলার প্রহরকে মুখর করে দিয়ে তিনি হেঁটে যান রাস্তার ধারের ডোবায়, জলাধারে। দু’তিনটি ডোবায় গিয়ে তার সঙ্গী তখন। তিনি যেখানে যান সেখানেই পুনরায় অনুরোধ-‘দু-একটা ছবি আর দু-চারটে কথা। ’ মন গলে তার! নিরঞ্জন অনুরোধ করেন- ‘তবে খুব তাড়াতাড়ি। পাইকারি মহাজন চলে আসবে। ’
ছবি তোলার পর্ব শেষ হয়। জীবনের কথা জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মাছ ধরার এই পদ্ধতির নাম- ‘উকু’। আমার প্রায় ৬০টি উকু আছে। প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত চলে আমার এই কাজ। গ্রামের জলাশয়গুলোতে ঘুরে ঘুরে আগের দিন ‘উকু’ পানির নিচে পেতে রাখতে হয়, পরের দিন সকালে গিয়ে প্রতিটা উকু তুলে দেখি তাতে কুচিয়া মাছ লেগেছে কিনা?মাছ বিক্রির কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, এই উকু দিয়ে মূলত ‘কুচিয়া’ ধরে থাকি। অন্য মাছ ভেতরে ঢুকার সুযোগ নেই। ভাগ্য ভালো থাকলে মাঝেমধ্যে অবশ্য ‘বাইম মাছ’ লেগে যায়। কুচিয়ার চেয়ে বাইম মাছের দাম প্রায় দ্বিগুণ। আমি প্রতিদিন মাছের পাইকারি বিক্রেতার কাছে দু’ থেকে তিনশ টাকায় কুচিয়াগুলো বিক্রি করে দিই। তারা মাছের বাজারে নিয়ে আরও বেশি দামে বিক্রি করেন। আমি প্রায় ১০ বছর ধরে এই পেশায় রয়েছি।
‘চোখা মাছ অর্থাৎ কুচিয়া বা বাইম মাছ ছাড়া অন্য কোনো মাছ এই ফাঁদের ভেতরে ঢুকতে পারে না। কুচিয়া-বাইম মাছ অনেকে খায় না। তাই অনেক পুকুর বা খালে আমাকে উকু পেতে রাখতে দেয়। ’
পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, পরিবারের মা, বাবা, বউ, দুই ছেলে রয়েছে। বড়ছেলে স্থানীয় সরকারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে এবং ছোটছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
আগের মতো কুচিয়া উঠে না; অনেক কমে গেছে। ধানক্ষেত বা বিভিন্ন সবজিতে যেসব বিষাক্ত কীটনাশক ওষুধ দেওয়া হয় সেগুলোর বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে এসে খাল, ডোবা, ছড়ায় পড়ে। তাতে মাছেরা মরে ভেসে উঠে। কুচিয়া-বাইম মাছও মরে যায় বলে জানান উকুময় যোদ্ধা নিরঞ্জন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৯
বিবিবি/এএটি