শুক্রবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নগরের ডিসি হিল প্রাঙ্গণে আয়োজিত বৌদ্ধ বিহারের শুভ কঠিন চীবর দানোৎসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ১৯৪৭ সালে যখন ধর্মের ভিত্তিতে অর্থাৎ সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে দেশ বিভাগ হলো- তখন আমরা বাঙালিরা উপলদ্ধি করতে পারলাম আমাদের মূল পরিচয় হচ্ছে বাঙালি। দেশ বিভাগের মধ্য দিয়ে এ মূল পরিচয়ের মধ্যে আঘাত করেছে রাষ্ট্র। রাষ্ট্র আমাদের বাঙালি, বাঙালিত্ব, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির উপর আঘাত করেছে।
‘তখন আমরা উপলদ্ধি করতে পারলাম দেশ বিভাগের মধ্য দিয়ে জন্ম নেওয়া রাষ্ট্র (পাকিস্তান) আমাদের জন্য নয়। সেই কারণেই মাতৃভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হয় স্বাধীকার আদায়ের আন্দোলন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে শুরু হয় স্বাধীনতা লাভের সংগ্রাম। ’
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিষ্টান- সবার মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, এ বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। এখানে আমাদের প্রথম পরিচয় হচ্ছে আমরা বাঙালি। আমাদের দ্বিতীয় পরিচয় হচ্ছে আমরা কি হিন্দু, আমরা কি মুসলিম, আমরা কি বৌদ্ধ না আমরা খ্রিষ্টান।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় একটি কথা বলেন। সেটি হচ্ছে- ধর্ম যার যার এই রাষ্ট্র সবার। ধর্ম যার যার উৎসব সবার। প্রধানমন্ত্রী শুধু মুখে এসব কথা বলেই দায়িত্ব শেষ করেননি। তার মুখের কথাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে সব ধর্মের মানুষের রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন।
‘এখানে ঈদের সময় হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ধর্মের লোকেরা এসে কোলাকুলি করেন। পূজার সময় মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ধর্মের লোকেরা পূজার উৎসবে অংশ নেন। বৌদ্ধ পূর্ণিমা কিংবা বড়দিনের উৎসবে সব ধর্মের লোকেরা অংশ নিয়ে উৎসব করেন। ’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আজকে ধর্মের নামে হানাহানি, ধর্মের নামে বিভেদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। কোনো ধর্ম অন্য কোনো ধর্মের নামে বিভেদ সৃষ্টির কথা বলেনি। বৌদ্ধ ধর্মতো বলেইনি। হিন্দু ধর্ম বলেনি, খ্রিষ্ট ধর্ম বলেনি, ইসলাম ধর্মও বলেনি। তবে ধর্মকে নিজেদের মতো করে অপব্যাখ্যা করে অনেকেই ধর্মীয় হানাহানি সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রদায়িক বিভাজন করলে যাদের সুবিধা হয় তারাই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অপচেষ্টা চালায়। কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, সাম্প্রতিক সময়ে ভোলায় সে ঘটনা ঘটেছে- এসব কিছু তারই অংশ।
‘বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে সাম্প্রদায়িকতাকে যারা উস্কে দিতে চেয়েছে তাদেরকে শেখ হাসিনার সরকার কঠোর হাতে দমন করেছে। শেখ হাসিনা এই দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যেই মেলবন্ধন সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছেন- পৃথিবীর অনেক দেশের কাছে এটি একটি বড় উদাহরণ। ’
রাঙ্গুনিয়া কুলকুরমাই সদ্ধর্মোদয় বিহারের অধ্যক্ষ শাসনরত্ম ভদন্ত ধর্মসেন মহাস্থবিরের সভাপতিত্বে কঠিন চীবর দানোৎসবে আশীর্বাদক ছিলেন বাংলাদেশি বৌদ্ধদের সর্ব্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু ড. ধর্মসেন মহাস্থবির, দ্বিতীয় সর্ব্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু ড. জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির।
ধর্মদেশনা দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. জ্ঞানরত্ম মহাস্থবির, মোগলটুলি শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহারের মহাপরিচালক ভদন্ত তিলোকাবংশ মহাস্থবির, রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের আবাসিক ভিক্ষু ভদন্ত মেত্তাবংশ স্থবির, শাকপুরা সার্বজনীন তপোবন বিহারের উপ বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত প্রজ্ঞামিত্র ভিক্ষু প্রমূখ।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৯
এমআর/টিসি