ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

১৬ ডিসেম্বরও বিজয় পায়নি কিশোরগঞ্জবাসী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৯
১৬ ডিসেম্বরও বিজয় পায়নি কিশোরগঞ্জবাসী

কিশোরগঞ্জ: বিজয় দিবসেও কিশোরগঞ্জবাসী বিজয়ের স্বাদ পায়নি। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় অর্জিত হলেও কিশোরগঞ্জবাসী সত্যিকার অর্থে বিজয় দেখেনি। এইদিন বিজয় উল্লাসে একবারও উচ্চারণ করতে পারেনি সেই কাঙ্খিত স্লোগান ‘জয় বাংলা’। 

কিশোরগঞ্জ শহরের বিজয় এসেছে ১৭ ডিসেম্বর সকাল ৮টার দিকে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, কিশোরগঞ্জে ১৬ ডিসেম্বর গভীর রাত পর্যন্ত পাকিস্তানি বাহিনীর এদেশীয় দোসর রাজাকার, আল বদর, আল সামসদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড লড়াই হয়েছে, রক্ত ঝরেছে।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কিশোরগঞ্জে প্রথম আসে ১৯৭১ সালের ১৯ এপ্রিল এবং ছেড়ে চলে যায় ৪ ডিসেম্বর।  

পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর দালাল আল বদর, আল শামস ও রাজাকারদের দল ৪ ডিসেম্বর হতে ১৭ ডিসেম্বর সকাল ৭টা পর্যন্ত ১৩ দিন কিশোরগঞ্জকে পাকিস্তান বানিয়ে রাখার চেষ্টা করে। গোটা দেশ যখন স্বাধীনতা অর্জনের উল্লাসে আত্মহারা তখনও কিশোরগঞ্জ শহর, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসরদের কঠোর নির্যাতনের শিকার। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমপর্ণ করলেও দেশদ্রোহীরা কিশোরগঞ্জে যুদ্ধের পায়তারা করছিল।  

১৬ ডিসেম্বর গভীর রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসররা মাইকে আত্মসমর্পণের কথা ঘোষণা করে। বাংলাদেশ মুক্ত হবার পরদিন ১৭ ডিসেম্বর (শুক্রবার) কিশোরগঞ্জ শহর শত্রুমুক্ত হয় এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসররা আত্মসমর্পণ করে। ১৭ ডিসেম্বর সকাল ৭টার দিকে মুক্তিবাহিনীর প্রথম দলটি কমান্ডার কবীর উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে করিমগঞ্জ থেকে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিয়ে শহরে প্রবেশ করে। আরেকটি দল হান্নান মোল্লা, সাব্বির আহম্মেদ মানিক, আনোয়ার কামালের নেতৃত্বে শহরের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল দিয়ে কিশোরগঞ্জে ঢোকার সময় কামালিয়ারচর ও খিলপাড়া এলাকায় আলবদরের বাধার সম্মুখীন হয়। বাধা অতিক্রম করে ওই দলটি সকাল ৮টার দিকে কিশোরগঞ্জে প্রবেশ করে।  

পরে বিভিন্ন দিক থেকে গেরিলা মুক্তিযোদ্ধারা ভারতীয় মিত্র বাহিনীর ক্যাপ্টেন চৌহানের নেতৃত্বে মিত্রবাহিনীও সেদিন কিশোরগঞ্জে প্রবেশ করতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধা, মিত্রবাহিনী আর জনতার উল্লাসধ্বনি, আনন্দ উচ্ছ্বাস আর মুক্তির চিরন্তন স্বপ্ন বাস্তবায়নের ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় স্বাধীন কিশোরগঞ্জের মুক্ত আকাশ। শহর শত্রুমুক্ত হবার দিনেই মুক্তিযোদ্ধাদের বরণ করে নিয়েছে শহরবাসী।

যারা সে সময় মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে দিয়ে শহরে ১৭ ডিসেম্বর প্রবেশ করেন এবং উড়িয়ে দিয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র অঙ্কিত পতাকা- তাদের মধ্যে সাব সেক্টর কমান্ডার মাহবুবুল আলম, কবীর উদ্দিন আহমেদ, কোম্পানী কমান্ডার হযরত আলী মাস্টার, আ. বারী খান, নাজিমুদ্দিন কবির, ক্যাপ্টেন হামিদ, হান্নান মোল্লা, আনোয়ার কামাল, এটিএম শহীদুল ইসলাম, সিদ্দিক, সারোয়ার জাহান, শামছুল আলম বকুল, জাহিদ হাসান বাবুল, অধ্যাপক গণি, ভর্ষা মিয়া, মাসুদ কাদের, মুস্তাফিজুর রহমান, নুরুন্নবী, অ্যাডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, মিজানুর রহমান, ওয়াহিদুল হক, আবদুল আলী বেতের, মফিজ মাস্টার, আফাজ উদ্দিন, সাব্বির আহম্মেদ মানিক, রফিকুল হক, আক্কাস আল কাজি, মাহমুদুল ইসলাম জানু, নজরুল ইসলাম, খলিল রহমান খলিল, হারুয়ার জসিম উদ্দিন, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান, গোলাম রব্বানী মুক্তু, ভূপাল নন্দী, গাইটালের গোলাপ প্রমুখ।

এসময় হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধার জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত হয় গোটা কিশোরগঞ্জ শহর।

বাংলাদেশ সময়: ০৭০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৯
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।