রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাত ৮টা ২৮ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) ব্র্যাক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন দেশ ও বিদেশের অর্থনীতিবিদসহ বিশিষ্টজনেরা।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন শোকবার্তায় বলেছেন, স্যার ফজলের জীবন মানবতার জন্য এক বিরাট উপহার। ব্র্যাকে ৫০ বছরের নেতৃত্বের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশ ও তার বাইরে কোটি মানুষের জীবন আমূল বদলে দিয়েছেন। একইসঙ্গে উন্নয়ন সম্পর্কে বিশ্বের ভাবনাকেও তিনি বদলে দিয়েছেন।
বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেন, তার কর্মের বিপুল বিস্তৃতি ও প্রভাব এবং যে পরিপূর্ণ বিনয় সহকারে কাজগুলো তিনি সম্পন্ন করেছেন, উভয়ই আমাদের শিক্ষার নিবিড় পাথেয় হয়ে থাকবে।
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মেলিন্ডা গেটস বলেন, ১৯৭২ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে প্রত্যাগত শরণার্থীদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য ১০ হাজার ৪০০ ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন। শেষপর্যন্ত আরও অর্থ সংগ্রহ করে তিনি ১৬ হাজার ঘর করেছিলেন। তারপরও কিছু অর্থ উদ্বৃত্ত থেকে গিয়েছিল। যা দিয়ে পরের প্রকল্প শুরু করেছিলেন। এমনই এক মহৎ মানবতাবাদী ছিলেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। তিনি আমাদের দেখিয়েছেন সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রয়োজনকে বিস্মৃত না হয়ে কীভাবে বৃহৎ ও কার্যকর সংগঠন গড়ে তুলতে হয়। তার কাজ আমাদের চিরকালীন অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জী এবং এস্থার দুফলো বলেন, ফজলে হাসান আবেদের মত মানুষ কয়টা হয়? তার অবর্তমানে আমরা সবাই একটু ছোট হয়ে গেলাম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান শোকবার্তায় বলেন, দেশ ও দেশের বাইরে দরিদ্রবান্ধব বেসরকারি উন্নয়নে তিনি ছিলেন অন্যতম প্রাণপুরুষ। একজন গবেষক হিসেবে ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে আমি তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছি। বিশ্ব তাকে উন্নয়ন ক্ষেত্রে বহুমাত্রিক এবং ব্যয় সাশ্রয়ী অনেক সমাধান উদ্ভাবনের জন্য মনে রাখবে। তার এসব সমাধান সুবিধাবঞ্চিত মানুষ, বিশেষত নারীর অগ্রযাত্রায় সহায়ক হয়েছে। গরিব মানুষের কাছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং আর্থিক খাতে সেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তার নেতৃত্ব অবিসংবাদিত।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্যার ফজলে ছিলেন শ্রেষ্ঠতম সামাজিক উদ্ভাবকদের একজন। বাংলাদেশ ও আরও অনেক স্বল্পোন্নত দেশের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত কোটি মানুষের অবস্থা পরিবর্তনে তার অসামান্য অবদানকে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। এই স্বপ্নদ্রষ্টা নেতা তার গভীর প্রজ্ঞা ও চিন্তা-ভাবনা দিয়ে সিপিডির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দিকনির্দেশনা দিয়ে এসেছেন। তার মৃত্যুতে ব্র্যাক, সিপিডি, বাংলাদেশ তথা বিশ্বের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেলো।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেন, দেশের সীমানা পেরিয়ে এশিয়া ও আফ্রিকার ১০টি দেশে ব্র্যাকের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি ঘটিয়ে স্যার আবেদ আমাদের জন্য এক অনুপ্রেরণাদায়ক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। আমরা ইউনিসেফের সবাই তার উন্নয়ন ভাবনাগুলোর অনুপস্থিতি গভীরভাবে অনুভব করবো।
আরও শোকবার্তা পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমদ, ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি তোমু হোজুমি, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অশোকা’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিল ড্রেইটন, পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত কলামিস্ট নিকোলাস ক্রিস্টফ, যুক্তরাজ্য সরকারের বৈদেশিক সহায়তা বিভাগ (ডিএফআইডি), অষ্ট্রেলিয়া সরকারের বৈদেশিক সম্পর্ক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় (ডিএফএটি), সেভ দ্য চিলড্রেন, ইউকের প্রধান নির্বাহী কেভিন ওয়াটকিনস, বিওপিহাব, ওয়ার্ল্ড টয়লেট অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাকসিম, যুক্তরাষ্ট্রের সমাজকর্মী সাইদারশীদ, টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদুল ইসলাম, মেজর জেনারেল (অব.) সাহুল আফজাল চৌধুরী, ব্রিটিশ রেড ক্রসের সোফেনালালানি, ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির গবেষক জিবাহ নোয়াকো, সাজিদা ফাউন্ডেশন, জাগো ফাউন্ডেশন, ড. চঞ্চলখান, কামরুল মুরাদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৯
এসই/টিএ