ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

সেতু নেই, ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২০
সেতু নেই, ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার

রাঙামাটি: কাচালং নদী ঘিরে গড়ে ওঠা রাঙামাটির দুর্গম উপজেলার নাম বাঘাইছড়ি। এ উপজেলাটি দেশের অনেক পুরনো উপজেলা হলেও দুর্গমতার কারণে শিক্ষা, যোগাযোগ এবং উন্নয়নের দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

এ উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়নের নাম খেদারমারা ইউনিয়ন।  ইউনিয়নটি পাঁচটি গ্রাম নিয়ে গঠিত হয়েছে।

প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস এ ইউনিয়নে। ইউনিয়নটিতে স্কুল-কলেজ, হাটবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক সরকারি স্থাপনা রয়েছে।

খেদারমারা ইউনিয়নটি কাচালং নদীর তীর ঘিরে গড়ে ওঠার কারণে এ এলাকার সঙ্গে উপজেলা শহরের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলো নৌপথ। শুষ্ক মৌসুমে কাচালং নদীর পানি শুকিয়ে গেলে এ এলাকার সঙ্গে উপজেলার শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়ে। আর বর্ষা মৌসুমে নদী ভরা পানি থাকলেও নৌকাযোগে পারাপারের সময় পাহাড়ি ঢলের স্রোতে অনেক নৌকা উল্টে গিয়ে প্রতিবছর হতাহতের ঘটনা ঘটে।

এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি, কাচালং নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ করার। এই নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ করা গেলে ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে বলে স্থানীয়রা মনে করে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এবং সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঝুঁকিমুক্ত হয়ে সেতু দিয়ে তাদের স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে অনায়সে যাতায়াত করতে পারবে। হাটবাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের যোগাযোগে উন্নতি ঘটবে। একটি ব্যবসায়ীবান্ধব এলাকা গড়ে উঠবে বলে স্থানীয়দের অভিমত।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুম আসলে যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। পায়ে হেঁটে, কাদামাটি মাড়িয়ে তবেই এ এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। তবে বর্ষা মৌসুমে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করে।

খেদারমারা ইউনিয়নের সিজক কলেজের ছাত্র হাসান ও ভূবন চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমার জন্মলগ্ন থেকে এ এলাকায় বসবাস করছি। স্কুলে পড়ার সময় আমরা যে কষ্ট করেছি এখন কলেজে যাওয়ার সময়ও সেই কষ্ট ভোগ করছি। আমাদের এলাকায় সেতু না থাকায় অনেক কষ্টে নৌকা পার হয়ে কলেজে যেতে হয়।

খেদারমারা ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা ওই এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল গাফফার বাংলানিউজকে বলেন, অনেক বছর ধরে এ এলাকায় কষ্টে আছি। অনেক জনপ্রতিনিধি আসে ভোট চাইতে কিন্তু কেউ কথা রাখে না। কাচালং নদীর উপর সেতু না থাকায় সারাবছর যোগাযোগে আমাদের চরম বেগ পেতে হয়।

একই এলাকার স্থানীয় ও ব্যবসায়ী মৃদুল চাকমা বাংলানিউজকে জানান, জন্মলগ্ন থেকে আমরা নানাবিধ সমস্যায় আছি। বিশেষ করে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান সমস্যা হলো যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত। যদি এ এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি করা যায় তাহলে আমাদের ব্যবসায় আরও উন্নতি ঘটবে।

একই ইউনিয়নের দূরছড়ি বাজারের স্থায়ী ব্যবসায়ী আবু সাইদ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দূরছড়ি বাজারটি অনেক পুরনো বাজার। জেলা-উপজেলার বাইরে অনেক ব্যবসায়ী আমাদের বাজারে এসে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী ক্রয় করে। বিশেষ করে মৌসুমী ফল, শাক-সবজিসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক উপাদান ক্রয় করে নিয়ে যায়। এ বাজারটি দেশের ব্যবসায়ী সমাজের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

এ বাজারের সঙ্গে উপজেলা শহরসহ অন্য এলাকার সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলো নৌপথ। শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি শুকিয়ে গেলে এবং বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বেড়ে গেলে এ বাজারের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভংঙ্কর হয়ে উঠে। তাই কাচালং নদীর উপর দূরছড়ি বাজারের সঙ্গে সিজক মুখ এলাকা পর্যন্ত একটি সেতু নির্মাণ করা গেলে আমাদের ব্যবসায়ী সমাজ অনেক উপকৃত হবে।  

খেদারমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তুুষ চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা অনেক বছর ধরে আন্দোলন করে আসছি কাচালং নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ করার। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়েও একাধিকবার বলা হয়েছে। কিন্তু তারপরও এ এলাকার জনস্বার্থে সেতু নির্মাণে এগিয়ে আসতে কাউকে দেখিনি।

চেয়ারম্যান সন্তুুষ আরও বলেন, আমাদের ইউনিয়ন পাঁচটি গ্রাম নিয়ে গঠিত। প্রায় ১০ হাজার মানুষ বসবাস করে। এখানে রয়েছে কলেজ, স্কুল, হাট-বাজারসহ সরকারি নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। বর্তমান সরকার জনবান্ধব সরকার। যদি সরকার আমাদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে কাচালং নদীর উপর দূরছড়ি-সিজকমুখ এলাকায় একটি সেতু নির্মাণ করে দেয় তাহলে এলাকার উন্নয়ন খুব দ্রুত হবে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪২ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।