ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

পুলিশেও এগিয়ে নারীরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২০
পুলিশেও এগিয়ে নারীরা

ঢাকা: সময়ের পরিক্রমায় নারী এখন আর শুধু ঘরকন্নার দায়িত্বেই সীমাবদ্ধ নেই। ঘর-সংসার সামলে সমানতালে বাইরেও রেখে চলেছেন সফলতার স্বাক্ষর। দেশের রাজনীতি থেকে শুরু করে সামাজিক-অর্থনৈতিকসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই বেড়েছে নারীর অংশগ্রহণ। 

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জ্ঞান ও দক্ষতায় ক্রমেই নারীরা নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিচ্ছেন। অন্যান্য যেকোনো পেশার মতই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চ্যালেঞ্জিং দায়িত্বেও নারী সদস্যদের অংশগ্রহণ বাড়ছে।

অর্থাৎ সার্বিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন প্রশ্নে কয়েক দাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ।

স্বাধীন বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীতে প্রথমে কোনো নারী সদস্যই ছিলেন না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে পুলিশে প্রথমবারের মতো ৮ জন নারী কনস্টেবল নিয়োগ দেন। সেই থেকে পুলিশে নারীর পথচলা শুরু, বর্তমানে বাহিনীতে নারী সদস্যের সংখ্যা ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে। যা প্রতিবছর ক্রমান্বয়ে বাড়ছেই।

পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, পুলিশ বাহিনীতে ক্রমেই নারী সদস্যের সংখ্যা বাড়ছে। যোগ্যতা অনুযায়ী অনেক বড় ও গুরুত্বপূর্ণ পদেও দায়িত্ব পালন করছেন তারা। শুধু তাই নয় দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও পুলিশের নারী সদস্যরা উজ্জ্বল ভূমিকা রেখে চলেছেন। মাঠপর্যায়ে পুরুষ সদস্যের মতই তারা সমান চ্যালেঞ্জ নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ এর জুলাই পর্যন্ত পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত মোট নারীর সংখ্যা ১৩ হাজার ৪০২ জন। যা বাংলাদেশ পুলিশের মোট জনবলের ৭.১০ শতাংশ।

পুলিশের উচ্চপর্যায়ে অর্থাৎ বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত প্রথম শ্রেণির নারী পুলিশ কর্মকর্তা আছেন মোট ২৮৬ জন। এর মধ্যে অতিরিক্ত ডিআইজি ৫ জন, পুলিশ সুপার ৭০ জন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ১০১ জন এবং সহকারী পুলিশ সুপার পদে আছেন ১০১ জন।

এছাড়া, পরিদর্শক (নিরস্ত্র) ১১৩ জন, উপ-পরিদর্শক (এসআই) ৮২৯ জন, সার্জেন্ট ৫৩ জন, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ১ হাজার ৩৯ জন, নায়েক ১১১ জন এবং নারী কনস্টেবল রয়েছে ১০ হাজার ৯৭১ জন।

পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটে নারী সদস্যরা দায়িত্ব পালন করলেও আগে ট্রাফিক সার্জেন্ট পদে নারী সদস্যদের কাজ করতে দেখা যায়নি। ২০১৭ সালে ২৮ জন নারী সার্জেন্ট যোগদানের মধ্য দিয়ে রাজপথে কাজ করতে শুরু করেন নারী পুলিশ সদস্যরা। বর্তমানে শুধু ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগে কাজ করছেন ১৭৬ নারী সদস্য।

নারী পুলিশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান, নেতৃত্ব ও দক্ষতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ২০০৮ সালে চালু করা হয়েছে ‘উইমেন পুলিশ নেটওয়ার্ক। ’ ২০১২ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে নারী পুলিশের আন্তর্জাতিক সম্মেলন।  

এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নারী পুলিশের ভূমিকা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসিত হয়েছে। ১৯৮৯ সাল থেকে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরাও।  

চলতি বছরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ১৫৬ নারী পুলিশ সদস্য জাতিসংঘ মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম এবং রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপারেশন) সালমা বেগম, টাঙ্গাইল মহেড়ায় পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের ডেপুটি কমান্ডেন্ট শামীমা বেগম, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রটেকশন শাখার দায়িত্ব পালন করছেন রোখফার সুলতানা এবং প্রথমবারের মতো নারী হিসেবে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) কোনো ব্যাটালিয়নে (র‌্যাব-৮) অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত ডিআইজি আতিকা ইসলাম।

চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে পুলিশ বাহিনীতে সাফল্যের ছাপ রাখা আতিকা ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, নারী হিসেবে কর্মক্ষেত্রে তাকে আলাদা কোন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়নি, বরং সহকর্মীরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন।  

তবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক সময় পরিবারের কাছ থেকে দূরে থাকার বিষয়টিকেই নারী হিসেবে চ্যালেঞ্জ মনে করছেন তিনি।

পুলিশে নারীর বর্তমান অবস্থান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আতিকা বলেন, পুলিশে অফিসার হিসেবে নারীর সংখ্যা বাড়ছে, যা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অপারেশনাল দায়িত্বের পাশাপাশি প্রায় সব ইউনিটে নারী সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে অনেক শিক্ষিত মেয়েরা পুলিশে আসছেন এবং ভালো করছেন। থানায় নারীদের জন্য এখন আলাদা ডেস্ক রয়েছে, যেখানে ভুক্তভোগী নারীরা সহজেই থানায় এসে নিজের সমস্যার কথা বলতে পারছেন। এর ফলে থানার সার্বিক পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে।

নিজে শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে অন্যান্য নারীদের পরামর্শ দেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন এ সদস্য।

পুলিশে নারীর অবস্থান দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়ন, সমঅধিকার ও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে পুলিশে নারীর সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগই প্রথম পুলিশে নারীর পদায়ন ও পুলিশ ক্যাডার সার্ভিসে নারীর সুযোগ করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, নারী সদস্যরা পুলিশিংয়ের মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় অনবদ্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। নারী পুলিশ নিয়ে গঠিত পূর্ণাঙ্গ নারী আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও উইমেন অ্যান্ড ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে কর্মরত নারীরা কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছেন।  

ফলে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারগুলো নির্যাতিত নারী ও শিশুদের একান্ত নির্ভরতা ও আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২০
পিএম/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।