আধ্যাত্মিক সাধক ফকির লালন সাঁই তার জীবদ্দশায় ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে শীষ্যদের নিয়ে দোল পূর্ণিমার রাতে মেতে উঠতেন সাধুসঙ্গে। সেই থেকে তার ভক্তানুরাগীরা সাঁইজির ধামে সমবেত হয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করে আসছেন এ উৎসব।
সন্ধ্যায় লালন মুক্তমঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে এ আয়োজনের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
রোববার সকাল থেকেই লালন আখড়াবাড়ী কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়েছে দেশ-বিদেশের সাধু-ভক্ত, দর্শনার্থীদের আনাগোনায়। আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের আগেই জমজমাট হয়ে উঠেছে এবারের সাধুর হাট।
ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধুরা ঝাঁকে ঝাঁকে এসে আসন পেতে বসেছেন। গাইছেন বাউলা মনে গান।
‘মানুষ ভোজলে সোনার মানুষ হবি’, ‘সবলোকে কয় লালন কী জাত সংসারে’ সাঁইজির এমন সব আধ্যাত্মিক অমীয় বাণীর নিগুঢ় তত্ত্ব! বিশ্লেষণে কতই না প্রাণান্তর চেষ্টা এসব সাধুভক্তদের।
সাধুদের মতে, ফকির লালন সাঁইজি জীবদ্দশায় যে মচ্ছব করতেন এই গৌড় পূর্ণিমায় আলোকিত মানুষদের নিয়ে মানুষ পূর্ণিমার আলোকচ্ছটা গায়ে মাখতেন সেই ধারাবাহিকতায় তার শিষ্য প্র-শিষ্যদের মাঝে আজও চলমান। সাঁইজির দর্শন, তার আত্মতত্ত্ব, সাধনতত্ত্ব, এবং সর্বোপরি তার যে সত্য বাণী এসব বিষয়গুলি তার সাধু গুরু বৈষ্ণবরা তাদের মধ্যে ধারণ করেন, আত্মস্থ করেন, সেখান থেকে যে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং মানবিকতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে নিজেকে মানুষ নয় যন্ত্র দাবি করতে বাধ্য হই, কেননা আধুনিকতার ছোঁয়া আমাদের মন থেকে মনের যে ফারাক তৈরি করেছে তা দূর করতেও এই সাধু সংগ সমধিক গুরুত্ববহ।
ফকির লালন সাঁইজির যে দর্শন ‘এই মানুষে আছে রে মন যারে বলে মানুষ রতন’ কিংবা ‘না হলে মন সরলা কি ধন মিলে কোথা ডুবে’ লালন সাঁইজির এই বাণীর মর্ম কথায় আমাদের বোধদয়কে জাগ্রত করতে হলে এই আখড়ায় সাঁইজির এই অনুষ্ঠানে কিংবা সাধুগুরুর সংস্পর্শে গিয়ে সাধু সংগ করা উচিৎ।
ফকির ইয়াকুব আলী শাহ বলেন, সাঁইজি বলেছেন, ‘সত্য পথে কেউ নয় রাজি সবই দেখি তানা নানা’ সত্য বল সু-পথে চল’ তেমনি আবার বলেছেন ‘সহজ মানুষ ভইজে দ্যাখ না রে মন দিব্যজ্ঞানে’ তাই সহজ মানুষের যে বিবেচনা, আচার এবং মূল্যবোধের যে হিসেব নিকেশ সেই জায়গাতে ফকির লালন সাঁইজি কিঞ্চিতও ফাঁক রাখেননি। তাই অন্ধকারাচ্ছন্ন আত্মার মুক্তির আত্মোন্নয়নের তাগিদে সাঁইজির যে আলোকিত বাণী সেগুলি নিগুঢ়ভাবে একটু পর্যালোচনা করা উচিত বটে। তা নাহলে শুধুমাত্র সংগ ধারণ করলাম কিংবা বস্ত্র বা সাদা পোষাক বা বেশভুষা ধারণ করলাম তাতেই আত্মার খুধা মিটল বা মুক্তি মিলল তেমনটি না।
লালন একাডেমির খাদেম মোহাম্মদ আলী জানান, সাঁইজির স্মরণোৎসব উপলক্ষে তার সাধন-ভজনের তীর্থস্থান ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণ পরিণত হয়েছে উৎসবের পল্লিতে। দেশ-বিদেশ থেকে লালনভক্ত, বাউল অনুসারী ও সুধীজনসহ অসংখ্য মানুষের এখানে আগমন ঘটেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২০
আরএ