ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

শেখ রাসেল ইকোপার্ক: ফাঁকি দিয়ে ১১ কোটি বাগানোর চেষ্টা!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০০ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২০
শেখ রাসেল ইকোপার্ক: ফাঁকি দিয়ে ১১ কোটি বাগানোর চেষ্টা!

ঢাকা: রাঙ্গুনিয়ায় শেখ রাসেল এভিয়ারি ও ইকোপার্র্কের উন্নয়ন চলছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শেখ রাসেলের নামে এ পার্কটি স্থাপন করা হয় ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে। এখন এটিকে পরিপূর্ণ করতে দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও দুই বছর মেয়াদী বিভিন্ন উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

প্রথমধাপে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বন অধিদপ্তর। দ্বিতীয় ধাপে প্রকল্প বাস্তবায়নের ভার দেওয়া হয়েছে পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের (পিডাব্লিউডি) ওপর।

কিন্তু প্রকল্পের একটি খাতের কাজ না করেই নেয়া হয়েছে ১ কোটি ৭৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। অন্যদিকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উন্নয়ন খাতের কাজ না করেই ১১ কোটি ২০ লাখ টাকা বাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ধাপে ১২৫ কোটি ৫১ লাখ ২৪ হাজার টাকা খরচে শেখ রাসেল এভিয়ারি ও ইকো-পার্ক স্থাপন, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পটি চলমান। জানুয়ারি থেকে  ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা। অথচ চলমান প্রকল্পটি সরেজমিন পরিদর্শন করে নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি ধরেছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে মোট বরাদ্দ অনুযায়ী সাতটি আইটেমের বিপরীতে ডিপোজিট ওয়ার্ক হিসেবে ১৬ কোটি ৩৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেয়া হয়। এর মধ্যে লেকের চারপাশে গাইড ওয়াল নির্মাণসহ অন্যান্য আইটেম কাজের বাস্তব পরিমাণ ৪ হাজার মিটার। এই কাজ বাবদ মোট অর্থ বরাদ্দ ১১ কোটি ২০ লাখ টাকা। অথচ মাত্র ৫৪৬ দশমিক ৮৬ মিটারের বিপরীতে ১১ কোটি ২০ লাখ ৭৩ হাজার টাকার (টেন্ডার প্রাক্কলন অনুযায়ী) দরপত্র আহ্বানের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। ফলে ৩ হাজার ৪৫৪ মিটার কাজ বাদ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে বেমি। চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত এই কাজে ১ কোটি ১৫ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ব্যয়ও হয়ে গেছে।

অন্যদিকে প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভায় সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবে ‘নোটার শো থিয়েটার’ আইটেম এরইমধ্যে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অথচ এই কাজের জন্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ডিপোজিট ওয়ার্ক হিসেবে ১ কোটি ৭৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা গণপূর্ত বিভাগকে দেওয়া হয়। এছাড়া ধরা পড়েছে নানা অনিয়ম।

প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল সরকার বলেন, ‘কাজের বাস্তব পরিমাণে ব্যাপক তারতম্য হওয়ায় গণপূর্ত বিভাগের কাছে জানতে চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। ’

সম্পূর্ণ কাজ না করেই বাড়তি বরাদ্দ চাওয়া প্রসঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জহির রায়হান বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রজেক্ট প্রস্তাবের) ভুল ছিল। ১১ কোটি ২০ লাখ টাকায় চার হাজার মিটার কাজ করা সম্ভব নয়। এটা মিটারের জায়গায় রানিং মিটার হবে। তাহলেই কাজের পরিধি কমে আসবে। এই কাজের ড্রইং, ডিজাইন এবং মূল্যায়ন অনুযায়ী সঠিক আছে। পিডাব্লিউডির নির্বাহী প্রকৌশলীর মাধ্যমে প্রকল্প পরিচালককে অবহিত করা হবে। ’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কাজের বাস্তব পরিমাণ ৪ হাজার মিটারের স্থলে ৫৪৬ মিটার অত্যাধিক কম হওয়ায় পরিকল্পনা কমিশনের উপ-প্রধান মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান, সিনিয়র সহকারী প্রধান তাহমিনা তাসলীম, আইএমইডির সহকারী পরিচালক আজগর আলী আপত্তি তুলেছেন।

প্রধান বন সংরক্ষক মোহাম্মদ সফিউল আলম চৌধুরী বলেন, ‘প্রকল্পের ড্রইং, ডিজাইন , মূল্যায়ন ও দরপত্রসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সঠিক আছে কিনা যাচাই করা হবে। এই জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হবে। ’

প্রকল্পের আওতায় দেশি, ফলজ এবং শোভাবর্ধনকারী গাছ লাগিয়ে জীববৈচিত্রের উন্নয়ন, পার্কের শোভাবর্ধন, বিনোদন সুবিধা বৃদ্ধি এবং দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও পাখির বংশ রক্ষা কাজ ব্যহত হচ্ছে। এমনকি রাঙ্গুনিয়ার স্থানীয় লোকদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হচ্ছে না।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শেখ রাসেল এভিয়ারি ও ইকোপার্কটি ২১০ হেক্টর বেষ্টিত চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগ নিয়ন্ত্রণাধীন রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জে অবস্থিত। এলাকাটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার পূর্ব দিকে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়কের পাশে চন্দ্রঘোনা শহর, কর্ণফুলি কাগজকল এবং কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের কাছাকাছি অবস্থিত। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ার কারণে প্রচুর সংখ্যক পর্যটক সারা বছর এ এলাকায় ভ্রমণ করতে আসেন।

এক সময় এ পাহাড়ী এলাকা প্রাকৃতিক ও মূল্যবান লতা-গুল্ম, গাছ-গাছালী, ঔষধি বৃক্ষ, পশু-পাখি সমৃদ্ধ ছিল। কিন্তু কালের আবর্তে এসব সম্পদ অনেকটা হারিয়ে গেছে এবং কিছু সম্পদ বিপন্ন এবং হুমকির মুখে পড়েছে। তাই, এলাকাটিকে রক্ষা করতেই শেখ রাসেল এভিয়ারি ও ইকোপার্ক স্থাপন, শীর্ষক প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের আওতায় এ অঞ্চলটিতে এভিয়ারি প্রতিষ্ঠাকরণ, পাখির খাবার ও বাস উপযোগী বাগান সৃজন, পাখির আবাসস্থল নির্মাণ, পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য বিনোদনমূলক সুবিধা সৃষ্টি, জলাধার উন্নয়নসহ বেশ কিছু কাজ হয়। প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম গুলো হচ্ছে- ১ কিলোমিটার রোপওয়ে সম্প্রসারণ, ১৬ হাজার ঘনমিটার লেক খনন, ৭ হাজার আরসিসি পিলারসহ কাঁটাতারের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ২ হাজার বর্গমিটার ওয়াকওয়ে, ৫ হাজার এইচবিবি রোড, ৩ লাখ ঘনমিটার এভিয়ারি নির্মাণ, আড়াই হাজার বর্গমিটার পার্কিং এরিয়া উন্নয়ন, দেশি-বিদেশি পাখি ক্রয়, পাখির খাবার সংগ্রহ, ৭৫ হাজার ফল ও পশুখাদ্যের জন্য চারা রোপণ, ৬ হাজার সৌন্দর্য বর্ধনকারী চারা রোপণ, স্থানীয় ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, পরামর্শক সেবা প্রদান।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২০
এমআইএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।