মঙ্গলবার (১০ মার্চ) রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড কার্যালয়ে নিউজটোয়েন্টিফোর টিভির সৌজন্যে এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘জাতির পিতার স্বপ্ন ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই আয়োজনে প্রধান আলোচক ছিলেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের জয়গান গেয়ে আমু বলেন, ‘মহাত্মা গান্ধীকে বলা হয় অসহযোগ আন্দোলনের জনক। তবে সত্য হচ্ছে, তার অসহযোগ আন্দোলন কিন্ত সফল হয়নি। অন্যদিকে সুভাষ চন্দ্র বসুর আন্দোলনও সফল হয়নি। সেদিক থেকে বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন সফল হয়েছে। দেশ স্বাধীন তো হয়েছেই, তার অসহযোগ আন্দোলন প্রাইমারি পর্যায় থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত সাড়া ফেলেছিল। সে সময় টিক্কা খানের শপথ কিন্তু হাইকোর্টের বিচারক পড়াননি। ’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জামায়াত বা কমিউনিস্ট পার্টির মতো কোনো দল না। এই দলের নেতৃত্বে ছিল দেশের নিম্ন আয়ের মানুষেরা। এমন একটি দলের এভাবে দেশ স্বাধীন করার নজির কিন্তু ইতিহাসে আর নেই। ’
শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক বিভিন্ন দিকের স্মৃতিচারণ করে আমু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলতেন, প্রগতি মানে হঠকারিতা নয়। প্রগতি মানে, সময়ের সঙ্গে একটি বিষয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ছিল বেশ হিসেবি। তিনি সে সময়ের বাংলার প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দীর খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তবুও তার মন্ত্রিসভায় অংশ নেননি। পাকিস্তানের কাদা তিনি গায়ে মাখাননি। আবার তিনি চেয়েছিলেন, পাকিস্তান যেন আগে আক্রমণ করে, তিনি না। কারণ তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদীর তকমা পেতে চাননি। যে কারণে অনেকবার চেষ্টা করেও তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে প্রমাণ করা যায়নি। ’
অনুষ্ঠানে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হোসেন চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যেই সবকিছু ছিল। ৭ মার্চের ভাষণ না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। কূটনৈতিক আলোচনায় এই ভাষণ নিয়ে বিশ্লেষণ হওয়া উচিৎ। তার মাঝে যে সিংহের মতো ব্যক্তিত্ব ছিল, তার কারণ বঙ্গবন্ধু নিজে সমগ্র দেশকে নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর লন্ডনে গেলে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, যুক্তরাজ্য কবে নাগাদ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে পারেন বলে তিনি আশা করেন। উত্তরে তিনি দৃঢতার সঙ্গে বলেছিলেন, এখন। এই ব্যক্তিত্ব, আত্মবিশ্বাস বঙ্গবন্ধু বলেই সম্ভব। ’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক স্বপ্ন বিশ্লেষণ করে সিনিয়র সাংবাদিক এবং দ্য ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ও ডিবিসি নিউজের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান বলেন, ‘জাতির পিতার দুইটা স্বপ্ন ছিল। এক, স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা এবং দুই, সেই রাষ্ট্রকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছেন তার বাবা-মা। এরপর তার সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা। দেশের মানুষের সেবা করা, তাদের জন্য নিজের আত্মত্যাগ এসব কিছুর পেছনে তার পরিবারের এই মানুষগুলোর প্রভাব কাজ করে। ’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এ কে আজাদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপনের ক্ষণে যারা অন্যায়ের প্রতিবাদে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর রাখবে তারাই প্রকৃত অর্থে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী। বঙ্গবন্ধু কখনও অসৎ রাজনীতির সঙ্গে সমঝোতা করেননি। তিনি কখনও ক্ষমতার মোহে ছিলেন না। কী ছিল তার, ধানমণ্ডির বাড়িটা ছাড়া? তাও অনেক কষ্টে গড়া। এখানেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। ’
ইংরেজি জাতীয় দৈনিক ডেইলি সানের সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দেশ নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন। সেই স্বপ্ন এখন বাস্তবায়ন করছেন তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। আমাদের সবাইকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে আত্মস্থ করতে হবে, পরে বাস্তবায়ন করতে হবে। ’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. অ আ ম স আরেফিন সিদ্দীক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন ছিল বাঙালির মুক্তি, মানুষের মুক্তি। বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আর সাংবাদিকদের কাছেও তিনি ছিলেন ভরসার জায়গা। ’
বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরাম নেতা আবু সাঈদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে কারও সঙ্গে তুলনা করার দরকার নেই। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বঙ্গবন্ধুই। শুরু থেকেই তার স্বপ্ন ছিল, বাংলাদেশকে স্বাধীন করা, অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করা। তিনি মানতেন, জনগণ এই দেশের মালিক। তিনি সেই মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তবে আজ সমাজে বৈষম্য-বিভেদ দেখা যায়। জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা তৈরি হবে। ’
সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বনেতা ছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী একবার এক ভাষণে বলেছিলেন, আমি আর কী জনপ্রিয় ভারতে! আমার চেয়েও বেশি জনপ্রিয় বাংলাদেশের নেতা বঙ্গবন্ধু। শেখ মুজিব সুভাষ চন্দ্র বোসের চেয়েও পজিটিভ ছিলেন। ’
দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে আসলে হত্যা করা যায় না। শারীরিকভাবে হত্যা করা গেলেও তার চেতনাকে হত্যা করা যায় না। যারা তাকে হত্যা করেছিল তারা এই সত্যটা অনুধাবন করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ আবেগের জায়গা। ’
এর আগে গোলটেবিল আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য দেন নিউজটোয়েন্টিফোরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম। তিনি বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে এটাই প্রথম কোনো আয়োজন। আরও আয়োজন হবে। এক বছরব্যাপী সেসব আয়োজন চলবে। তবে এই আয়োজনের মাধ্যমে আলোচকদের কাছে থেকে আমরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানবো। দেশের মানুষ শিখবে। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন দুটি শব্দ। বঙ্গবন্ধু এ দেশ স্বাধীন করেছিলেন বলেই বাংলাদেশে নতুন সম্ভাবনার সূচনা হয়েছে। ৭৫ সালে নিকৃষ্ট অধ্যায় যদি তৈরি না হতো, হয়তো এতদিনে আরও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা দেখতে পেতাম। তবে তার স্বপ্নের বাংলা তৈরি করা এখনও সম্ভব। এর জন্য দরকার আইনের শাসন এবং আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা। ’
গোলটেবিল আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের সম্পাদক জুয়েল মাজহার ও নিউজটোয়েন্টিফোরের হেড অব নিউজ রাহুল রাহা।
গোলটেবিল সঞ্চালনায় ছিলেন নিউজটোয়েন্টিফোরের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান সামিয়া রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২০
এসএইচএস/এইচজে