তদন্ত প্রতিবেদনটি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল সদরের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হায়দর আলীর সঙ্গে যোগসাজশ করে তালিকায় ১৪ জন মৃত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে ৩ মার্চ সংশোধিত প্রতিবেদন দেয় সমাজসেবা কার্যালয়।
সংশোধিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, তালিকায় ১৪ জন ছাড়াও আরও ১১ জন মৃত ব্যক্তি রয়েছেন।
১৮ ফেব্রুয়ারি সমাজসেবা কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত তালিকার ২৩৪ নম্বরে রয়েছে জালাল নামে এক ব্যক্তির নাম। তার বই নম্বর-১৬৫২, হিসাব নম্বর-৩৮৩। বাইচাইল উত্তর পাড়া গ্রামের ওই ব্যক্তি মারা গেছেন ১০ বছর আগে। তিনি মারা গেলেও স্থানীয় অগ্রণী ব্যাংক থেকে বছরের পর বছর উত্তোলন করা হচ্ছে ভাতার টাকা। তবে এ টাকা কে তুলছেন তা স্বজনরা কেউ জানেন না।
>>মৃতদের জীবিত দেখিয়ে তোলা হচ্ছে বয়স্ক ভাতা
তালিকার ৪৪৮ নম্বরে রয়েছে নিয়ামতপুর গ্রামের আ. হামিদের নাম। তার বই নম্বর-৮১৭০, হিসাব নম্বর-৪৬০। তার ছেলে তুষার বলেন, বাবা মারা গেছেন দুই বছর আগে। তিনি মারা যাওয়ার পর সর্বশেষ ভাতা উত্তোলন করা হয় ২০১৮ সালের ১৭ এপ্রিল। এরপর তার নামে কে ভাতা উত্তোলন করেছে তা জানি না।
শুধু তাই নয়, সেই ইউপি চেয়ারম্যান হায়দর আলীর বাড়ির পাশে কান্দুলিয়া গ্রামে ভাতাভোগীর তালিকার ১৯৫ নম্বরে রয়েছে আ. ছামাদের নাম। তিনি মারা গেছেন দুই বছর আগে। তার বই নম্বর-১৬১৩, হিসাব নম্বর-১৫২।
তালিকার ৩৩৮ নম্বরে রয়েছে রৌহা গ্রামের সরস্বতী দাসের নাম। তিনি এক বছর আগে ভারত চলে যান এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। তারপরও ওই স্থানে কাউকে প্রতিস্থাপন করা হয়নি। তার বই নম্বর-৪৩৫৬, হিসাব নম্বর-২৮০।
ঘাটাইল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আসাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, তদন্ত করে তালিকার ৬৩৩ জন ভাতাভোগীর মধ্যে ১৪ জন মৃত পেয়েছি। এ নিয়ে মার্চের ৩ তারিখে ১৪ জন মৃত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে।
ঘাটাইল অগ্রণী ব্যাংক ব্যবস্থাপক মো. শামছুল হক বাংলানিউজকে জানান, ভাতাভোগীর অর্থ ছাড় করনের চিঠি পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় হিসাব থেকে ভাতা বিতরণ হিসাবে জমা হয়।
বয়স্কভাতা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও ঘাটাইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম লেবু বাংলানিউজকে জানান, তালিকা করার সময় তাকে জানানো হয়নি। তবে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে ভাতা উত্তোলন করা খুবই দুঃখজনক। যদি এ রকম হয়ে থাকে তাহলে যারা এর সঙ্গে জড়িত তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির জন্য সুপারিশ করা হবে।
বয়স্কভাতা বাস্তবায়নের নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো ভাতাভোগীর মৃত্যুর সাত দিনের মধ্যে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মৃত্যুসনদ দেওয়ার পর সমাজবেসা কর্মকর্তা বকেয়া অর্থ নমিনীকে প্রদানের বিষয়ে প্রত্যয়নপত্র প্রদান করবেন এবং মৃত্যু পরবর্তী তিন মাসের ভাতা পাবেন। কোনো ভাতাভোগী এলাকা ত্যাগ করলে কিংবা ছয় মাসের মধ্যে ওই ব্যক্তি নিজ এলাকায় না এল ওই ব্যক্তির ভাতা চেয়ারম্যান এবং সমাজসেবা কর্মকর্তা বাতিল করতে পারবেন। এছাড়া কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তার নামে ইস্যুকৃত ভাতা পরিশোধ বই বাতিল হিসেবে সমাজসেবা কর্মকর্তা তার অফিসে সংরক্ষণ করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২০
এনটি