এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে কুড়িগ্রাম শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় মানববন্ধন-প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে।
রোববার (১৫ মার্চ) দুপুরে কুড়িগ্রাম জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে সরাসরি কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে যান আরিফুল।
জামিন প্রসঙ্গে আরিফুল ইসলাম জানান, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ তার কাছে একটি ওকালতনামা পাঠায়। পরিবার পাঠিয়েছে বলে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। তবে পরিবারের কেউ ওকালতনামায় স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য জেল কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো কাগজ পাঠায়নি।
জামিনে মুক্ত হওয়ার পর কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে নির্যাতনের রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম জানান, শুক্রবার (১৩ মার্চ) রাত ১২টার পর খেয়ে শুয়ে পড়ার পর একজন তার বাড়ির দরজায় ধাক্কা দেন। পরিচয় জানতে চাইলে কেউ পরিচয় জানায়নি। পরে বাইরে থাকা আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার-রাজস্ব) নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন লোকজন দরজা ভেঙে বাসায় ঢুকেই তার মাথায় কিল-ঘুষি মারতে শুরু করেন। তাকে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তুলে চোখ-হাত-পা বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে এনকাউন্টারে দেওয়ার হুমকি দেন। তাকে বারবার বলেন, ‘তুই কলেমা পড়ে নে, তোকে এনকাউন্টারে দেওয়া হবে। ’
ভয়াবহ সেই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আরিফুল বলেন, ‘এ সময় তাদের কাছে অনুনয় বিনয় করে আমার প্রাণ ভিক্ষা চাই। তাদের বলি, আমার বাবা-মা নেই, আমাকে মেরে ফেলা হলে দু’টি সন্তান এতিম হয়ে যাবে। পরে তারা আমাকে গাড়িতে করে একটি ভবনে নিয়ে চোখের কাপড় একটু খুললে বুঝতে পারি এটা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। আবার নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে আমাকে একটি কক্ষে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালিসহ বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে এবং বলে তোর ভিডিও করে রাখছি। ’
তিনি বলেন, ‘আটকের বিষয়ে বারবার আমার অপরাধের বিষয় জানতে চাইলে নিজাম উদ্দিন বলেন, তুই আমাদের অনেক জ্বালাচ্ছিস। তোকে সাংবাদিকতা শেখাবো। এরপর চোখ বাঁধা অবস্থায় চারটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে রাতেই আমাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। আমাকে কেন কারাগারে পাঠানো হলো এবং কেন ধরে আনা হলো কিছুই বলা হয়নি। আমাকে যে নির্যাতন করা হয়েছে তার আঘাতের চিহ্ন আমার শরীরে আছে। ’
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার রেদওয়ান ফেরদৌস সজিব জানান, আরিফুল ইসলাম রিগান বর্তমানে ভালো আছেন। তার শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এসব রিপোর্ট হাতে এলে প্রকৃত অবস্থা জানা যাবে।
শুক্রবার মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় আরিফুল ইসলামকে। তার বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ আনা হয়। এরপর গভীর রাতে জেলা প্রশাসকের অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২০
এফইএস/এফএম