সারা বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কর্মপন্থা ঠিক করতে ভিডিও কনফারেন্সে মিলিত হয়ে সার্কভুক্ত আটটি দেশের শীর্ষ নেতারা একথা বলেন।
করোনা ভাইরাস বৈশ্বিক মহামারি আকার ধারণ করার প্রেক্ষাপটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আহ্বানে রোববার (১৬ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টায় শুরু হওয়া ভিডিও কনফারেন্স চলে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত।
কনফারেন্সের শুরুতেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় আমাদের দৃশ্যমান তৎপরতা প্রয়োজন। সার্কভুক্ত দেশগুলোতে আক্রান্তের ঘটনা ১৫০টিরও কম। আমাদের একসঙ্গে প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করে সফল হতে হবে। আতঙ্ক দূর করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার চালাতে হবে। হাসপাতালের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি। আমাদের পদক্ষেপগুলো বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের অবহিত করেছি। বিশ্বের আক্রান্ত দেশগুলোর মতো একই অজানা পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ বলেন, করোনা সংকট মোকাবিলায় আমরা ঐক্যবদ্ধ। পর্যটন আমাদের দেশের জিডিপিতে এক চতুর্থাংশ (চার ভাগের একভাগ) ভূমিকা রাখ। চায়না ও ইতালি থেকে বেশি পর্যটক আসতো। দেশ দু’টি করেনায় আক্রান্ত। এতে আমাদের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মূদ্রার ঘাটতি নিয়মিত হতে পারে।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবে রাজাপাকসে বলেন, শ্রীলঙ্কায় হামলার পরে আমাদের অর্থনীতি ও পর্যটন ব্যবসা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। করোনা ভাইরাসের কারণে তা আবার বিপর্যস্ত। আমাদের অর্থনীতি ও পর্যটনে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ করা হয়েছে ২-৬ সপ্তাহের জন্য। সব দেশের অনঅ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি। কঠিন সময় পার করছি। সার্কভুক্ত দেশগুলোর সহযোগিতার নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সব দেশর সহায়তা ও সমন্বয় প্রয়োজন। লজিস্টিক সহায়তা প্রয়োজন হলে সার্কভুক্ত দেশগুলোর স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সচিব ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এ ধরনের ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে। বাংলাদেশ সব ধরনের উদ্যোগে সঙ্গে থাকবে। সার্ক মহাসচিব কনফারেন্সের ফলোআপ ও সমন্বয় করতে পারেন।
নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি, আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগ করোনা ভাইরাস মোকাবিলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমরা প্লেন চলাচল, অনাবাসী ও বিদেশিদের ভিসা বন্ধ করেছি। তৃতীয় দেশের যাত্রীদের নেপাল (ট্রানজিট) হয়ে যাওয় বন্ধ করেছি। করোনার প্রভাবে আমদের পর্যটন হুমকির মুখে। আমাদের আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। আমাদের দেশে বৃদ্ধদের বেশি আক্রান্ত করছে কোভিড-১৯। এ ধরনের একটি ভিডিও কনফোরেন্সের আয়োজন করার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ। আমি আনন্দিত। আজকের এ কনফারেন্সর মাধ্যমে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় তথ্য আদান-প্রদানের অপার সম্ভাবনা তৈরি হলো।
বক্তব্যের শুরুতেই ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানান।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা জাফর মির্জা বলেন, আমরা আতঙ্কিত না হওয়ার জোরালো পরামর্শ দিচ্ছি। চিকিৎসায় যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছি। আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা করেছি। আক্রান্ত হলে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আমাদের স্বাস্থ্য ও রোগ পদ্ধতি জাতীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের কাজ করছে। আমাদের স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য তথ্য সরবরাহ করতে সার্কভুক্ত দেশগুলোর স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা যেতে পারে। সার্কদেশের মধ্যে করোনা ভাইরাসের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চীনের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২০
এসই/এএ