ঢাকা, বুধবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ মে ২০২৪, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

করোনায় অভিবাসনের প্রবাহ কমবে ৭১.৪৫ শতাংশ: রামরু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২০
করোনায় অভিবাসনের প্রবাহ কমবে ৭১.৪৫ শতাংশ: রামরু রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী

ঢাকা: কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে ২০২০ সালের শুরু থেকেই অভিবাসী শ্রমিকরা বহুমাত্রিক সংকটে পড়েছেন। ফলে এবছর করোনা ভাইরাসের প্রভাবে অভিবাসনের প্রবাহ গত বছরের তুলনায় প্রায় ৭১.৪৫ শতাংশ কমে যাবে।

 

কারণ করোনা সংক্রমণের জন্য ছুটিতে এসে আটকে পড়া, সব প্রস্তুতি শেষ করেও যেতে না পারা অভিবাসনের দেশে করোনা সংক্রমণের উচ্চ হার, চাকরিচ্যুতি, আটক, জোরপূর্বক প্রত্যাবর্তন এরকম নানাবিধ সমস্যায় অনেক অভিবাসী ফেরত এসেছেন আর নতুন করে কেউ যেতে পারছেন না। এতে করে অনেক অভিবাসী ও তাদের পরিবারের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসনের গতি-প্রকৃতি ২০২০ সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। অনলাইনে এসব তথ্য তুলে ধরেন রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী।

অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে ড. তাসনিম সিদ্দিকী প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, এই বছর করোনা অতিমারির কারণে অভিবাসন খাত বিশেষ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮২ জন বাংলাদেশি কর্মী উপসাগরীয় ও অন্যান্য আরব দেশ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অভিবাসন করেছেন। এদের অধিকাংশই এবছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বিদেশে গিয়েছিলেন। জানুয়ারি হতে মার্চ পর্যন্ত তাদের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮১ হাজার ২১৮ জন।  

বিশ্বে লকডাউনের কারণে এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে কোনো অভিবাসন হয়নি। অক্টোবর থেকে শুধু যারা ছুটিতে এসে আটকে পড়েছিলেন এমন ২ হাজার ৪৬৪ জন অভিবাসীর মধ্যে নির্দিষ্ট কিছুসংখ্যক দেশে ফিরে গেছেন। অভিবাসনের যে ধারা অব্যাহত ছিল তা চলতে থাকলে এইবছর অভিবাসন ৩.৫২ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রভাবে এ বছর অভিবাসনের প্রবাহ গত বছরের তুলনায় প্রায় ৭১.৪৫ শতাংশ কমে যাবে।

তিনি বলেন, এবছর অভিবাসীদের গমনের চেয়ে দেশে ফেরত আসার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ২৬ হাজার ৭৫৮ জন অভিবাসী কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন। চাকরি হারিয়ে প্রত্যাবর্তনের গতিটা প্রবল হয়েছে গত ৩ মাসে। গড়ে প্রতিদিন ফিরে আসছেন প্রায় ২ হাজার কর্মী। করোনাসহ বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দামের পতন, উপসাগরীয় দেমগুলোয় পর্যটন, সেবা ও নির্মাণ খাতে কর্মরত অভিবাসীদের চাকরিচ্যুতি ইত্যাদি কারণে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। লকডাউনের কারণে সব প্রস্তুতি শেষ করেও যেতে পারেননি এক লাখ নতুন কর্মী।

রেমিট্যান্স নিয়ে তিনি বলেন, এ বছর রেমিট্যান্স বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। নভেম্বর পর্যন্ত রিজার্ভের পরিমাণ ৩৯.৬৫ বিলিয়ন ডলার যা গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল ৩৮.৫০ বিলিয়ন ডলার। সুতরাং বিশ্বব্যাংকের এই পূর্বাভাস বাংলাদেশের জন্য কার্যকর হয়নি। করোনার প্রভাবে এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকেই নিম্নমুখী ছিল রেমিট্যান্সের ধারা। মার্চ ও এপ্রিলেও বড় বিপর্যয় ঘটে রেমিট্যান্সে।

তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে অনেক অভিবাসীকে দেশে ফেরত আসতে হচ্ছে। তারা তাদের সঞ্চয় দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। কারণ, সঙ্গে করে বেশি টাকা আনা যায় না। বিদেশে থাকা অনেকে সঞ্চয় ভেঙে টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন। করোনা বন্যা কারণে সংকটকালীন সময়ে অনেকে টাকা পাঠাচ্ছেন। অনেকে সংকটে থাকলেও ঈদের টাকা পাঠিয়েছেন। বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।  সে অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ২ টাকা প্রণোদনা পাচ্ছেন। বাজেটে এজন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত করে অনেক ব্যাংক আরও ১ শতাংশ বেশি প্রণোদনা দিচ্ছে। বৈধপথে রেমিট্যান্স বাড়ছে বলে এটা ভাবার কোনও কারণ নেই যেসব অভিবাসীই ভালো আছেন। আগামী বছর রেমিট্যান্সের প্রবাহ অন্যরকম হতে পারে। এই বছর লোক যেতে না পারার কারণে আগামী বছরের রেমিট্যান্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রতিবেদনে নারী অভিবাসনের তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত মোট ১৮ হাজার ৮১৩ জন নারী কর্মী কর্মের উদ্দেশ্যে বিদেশ গেছেন। ২০১৯ সালে নারী অভিবাসনের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৪ হাজার ৭৮৬। যেহেতু এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত কোন অভিবাসন হয়নি আর অক্টোবর থেকে সীমিত পরিসরে অভিবাসন শুরু হলেও কতজন নারী কর্মী অভিবাসন করেছে এ তথ্য পাওয়া যায়নি।

নারী অভিবাসীদের প্রত্যাবর্তনের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যাচ্ছে, ১ এপ্রিল থেকে ৩০ নভেম্বর যারা ফেরত এসেছেন, তাদের মধ্যে ৩৯ হাজার ২৭৪ জন নারী রয়েছেন। এ সময় দেশে ফেরা নারী কর্মীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছেন সৌদি আরবে থেকে ১৭ হাজার ৩১৬ জন।  

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফিরেছেন ৮ হাজার ৩৯৭ জন, উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশ কাতার থেকে ফিরেছেন ৩ হাজার ৬১৪ জন, ওমান থেকে ২ হাজার ৫১৬ জন নারী কর্মী দেশে  ফিরেছেন। সে হিসেবে বছরের প্রথম ৫ মাস নারী কর্মীদের ফিরে আসার হার কম থাকলেও সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত নারী কর্মীদের ফিরে আসা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, অক্টোবর থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত নতুন করে অভিবাসিত হয়েছেন ২ হাজার ৪৬৪ জন। নতুন অভিবাসীদের ৮১১ জন গেছেন ওমানে। সৌদি আরবে গেছেন ৮১৩ জন৷ উজবেকিস্তানে ৫২৪ জন, সিঙ্গাপুরে ৯১ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৬০ জন এবং
আলবেনিয়ায় ২৪ জন গেছেন।  

উজবেকিস্তান গতানুগতিক অভিবাসনের দেশ নয়। নতুন অভিবাসীদের ২১ শতাংশ উজবেকিস্তানে গেছেন। এর মধ্যে কতজন নারী তা জানা যায়নি। তবে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত যে সব নারী শ্রমিক গেছেন তাদের ৫৮ শতাংশ গেছেন সৈদি আরবে (১০ হাজার ৯৩০জন)। এছাড়াও ২ হাজার ৯৬৭ জন নারী কর্মী জর্ডানে, ২ হাজার ৯২৮ জন নারী কর্মী ওমানর অভিবাসীত হয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা,ডিসেম্বর ২৯,২০২০
জিসিজি/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।