ঢাকা, বুধবার, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

না’গঞ্জে মসজিদে অগ্নিকাণ্ড, ২৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২০
না’গঞ্জে মসজিদে অগ্নিকাণ্ড, ২৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র বায়তুস সালাত জামে মসজিদ, ফাইল ফটো

ঢাকা: নারায়ণগঞ্জের বায়তুস সালাত জামে মসজিদে অগ্নিকাণ্ডের মামলায় মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুল গফুর মিয়াসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) জিসানুল হক।

 

তিনি জানান, অভিযুক্ত আরও আটজন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী হওয়ায় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়া সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।

সিআইডি জানায়, ঘটনার পাঁচদিন পর ১০ সেপ্টেম্বর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব নেয় সিআইডি। তদন্তকালে সিআইডি ক্রাইমসিনসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে, বস্তুগত আলামত সংগ্রহ করে ও অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ উদঘাটন করে। সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে দায়িত্বে অবহেলার জন্য তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ফতুল্লা জোনের দায়িত্বরত আটজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তাদের দু’দিন পুলিশ রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এছাড়া ডিপিডিসির একজন মিটার রিডার ও দু’জন ইলেকট্রিশিয়ানসহ মোট তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত ইলেকট্রিশিয়ান মোবারক ও রায়হান অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তদন্তে মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার প্রমাণ পাওয়ায় মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুল গফুরকেও গ্রেফতার করা হয়।

আগুন লাগার কারণ হিসেবে অভিযোপত্রে বলা হয়েছে, তদন্তে অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ উদঘাটন করা হয়। ঘটনার আগ থেকে প্রায় তিন মাস ধরে মসজিদের পাশে তিতাস গ্যাস পাইপের লিকেজ থেকে গ্যাস বের হয়ে মসজিদের অভ্যন্তরে জমা হতে থাকে। বাধাহীনভাবে গ্যাস উদগীরণ হয়ে মসজিদ গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়। ঘটনার সাত থেকে আটদিন আগ থেকে গ্যাসের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে মুসল্লিরা বিষয়টি মসজিদ কমিটিকে জানায়। কিন্তু মসজিদ কমিটি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

ঘটনার দিন এশার নামাজের সময় বৈধ বিদ্যুৎ লাইন চলে গেলে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন চালু করা হলে বিদ্যুতের স্পার্ক হয়। তখন বিদ্যুতের স্পার্ক ও মসজিদে জমে থাকা গ্যাসের সমন্বয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়।

সিআইডি জানায়, মসজিদ কমিটির সঠিকভাবে মসজিদ পরিচালনায় অবহেলা, অব্যবস্থাপনা, উদাসীনতা, সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করা, কারিগরি দিক বিবেচনা না করে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ঝুঁকিপূর্ণভাবে লাগানো, গ্যাসের উপস্থিতি পেয়েও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের জীবনের নিরাপত্তার কথা না ভেবে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া ও ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) মিটার রিডিং কালেক্টর ও ইলেক্ট্রিশিয়ানদের মসজিদে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া, ঝুঁকিপূর্ণভাবে মসজিদের অভ্যন্তরে বিদ্যুতের যন্ত্রপাতি স্থাপন করা এবং তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘটনাস্থল এলাকার তিতাস গ্যাসের দায়িত্বে থেকে অবহেলা, গ্যাস লাইনের সঠিকভাবে তদারকি না করা, পাইপের লিকেজ মেরামত না করা, গ্যাস লাইন ঝুঁকিপূর্ণভাবে স্থাপন/স্থানান্তর করার কারণে ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়ে ৩৪ জন মুসল্লি অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত ও চারজন অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন বলে সিআইডির তদন্তে সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।

গত ৪ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে় নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। অগ্নিকাণ্ডে মসজিদে ইবাদাতরত ৩৭ জন মুসল্লি ও একজন পথচারী অগ্নিদ্বগ্ধ হয়। এরমধ্যে ৩৪ জন মুসল্লি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধীন শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন এবং চারজন এখনও নিজ বাড়িতে চিকিৎধীন।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২০
পিএম/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।