ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ পৌষ ১৪৩১, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মাঘের শীতে নাকাল পঞ্চগড়ের জনজীবন

সোহাগ হায়দার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২১
মাঘের শীতে নাকাল পঞ্চগড়ের জনজীবন

পঞ্চগড়: কথায় আছে ‘মাঘের শীতে বাঘ পালায়’ প্রবাদের মর্মার্থ এবার হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে দেশের সর্ব উত্তরের প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড়ের মানুষ। মৃদু শৈত্যপ্রবাহে প্রায় জবুথবু হয়ে পড়েছে ছোট থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ।

তবে বিশেষ করে এই মাঘের শীতে বিপাকে পড়তে দেখা গেছে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষদের।

পঞ্চগড় জেলা হিমালয়ের একবারে পাদদেশে হওয়ায় প্রতিবার শীত একটু ভিন্ন ভাবে আসে। গত এক সপ্তাহ ধরে এ জনপদে তাপমাত্রা অনেকটাই ওঠানামা করছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। গত কয়েক দিনে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রির ঘর থেকে ৮ ডিগ্রির ঘরে লুকোচুরি খেলছে। ফলে বেড়েছে শীতের তীব্রতা দেখা দিয়েছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানিয়েছে, শনিবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অপরদিকে একই দিন বিকেল ৩টায় দিনের সবোর্চ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সরেজমিনে সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গরম কাপড়ের অভাবে গরীব ও শীতার্ত মানুষের বাড়ির আঙিনায় কিংবা ফুটপাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। এদিকে জেলার ৫ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কনকনে হাড় কাঁপানো শীতে কাজে বের হতে দেখে যায়নি অনেক খেটে খাওয়া ও দিনমজুর মানুষদের। অন্যদিকে দিনভর কিছুটা কুয়াশা থাকলেও সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় আচ্ছাদিত থাকে পুরো জেলা। দিনের বেলায় শীত কিছুটা কম থাকলেও প্রতিনিয়ত থাকছে ঠাণ্ডা বাতাস। বাজারগুলোতে কিছুটা ভিড় লক্ষ্য করা গেলেও বেশিরভাগ সময় শহরের ব্যস্ততম সড়কগুলো প্রায় জনশূন্য দেখা যায়। তাছাড়া তীব্র শীতের কারণে দিনদিন হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বাড়ছে শীত জনিত রোগীর সংখ্যা। আর শীতজনিত রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা।

আবহাওয়া অফিসে তথ্য মতে, উত্তর দিক থেকে বয়ে আসা হিমালয়ের হিম বাতাস ও ঘন কুয়াশার কারণে মূলত তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। আর তাপমাত্রা ওঠানামা করায় এ জেলার তীব্র শীত অনূভূত হচ্ছে। তবে গত ১-২ মাসে হঠাৎ দিনের বেলা সূর্যের তাপসহ আবহাওয়া কিছুটা গরম থাকায় শীত তেমনভাবে নামতে পারেনি। যে কারণে জানুয়ারি থেকে শীত বেশি ওঠানামা শুরু করেছে।

পঞ্চগড় সদরের খালেক নামে এক রিকশা চালক বাংলানিউজকে জানান, গত কয়েকদিনের তুলনায় আজ শীত অনেকটাই বেড়ে গেছে। গরম কাপড় ছাড়া বাইরে বের হওয়ায় কষ্টকর হয়ে উঠেছে। সকাল থেকে ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে যাত্রী তেমন নাই।

রফিকুল নামে একজন বলেন, প্রচণ্ড শীতের কারণে খুব সমস্যায় পড়েছি, কাজে ঠিকমত যেতে পারছি না। কিছুটা শীত কম থাকলেও আজ অনেক শীত করছে। তাই শীত থেকে বাঁচার জন্য বাড়ির আঙিনায় খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছি।

একই দুর্ভোগের কথা বলেন হালিম নামে তেঁতুলিয়ার একজন ট্রাক শ্রমিক। তিনি বলেন, সকালে প্রচণ্ড ঘনকুয়াশা নামছে। এদিকে শীতের কারণে আমরা গাড়ি লোড-আনলোডের কাজ করতে পারছি। শুধু আমরাই না, উপজেলার প্রায় সব মানুষ শীতের দুর্ভোগে পড়েছে।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় সিভিল সার্জন ডাক্তার ফজলুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, শীতের সময় কিছু কিছু অসুখ কমন হয়ে থাকে। বয়স্ক-শিশুদের নিউমনিয়া, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন অসুখ হয়ে থাকে। তাই শীতকালে সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। ঠাণ্ডা লাগানো যাবে না, শীতে সকাল বেলা যেন প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বাহির না হয়। রোদ উঠলে রোদে থাকবে এবং গরম কাপড় ব্যবহার করবে। আর শ্বাসকষ্টের সমস্যা হলে হাসপাতালে ভর্তি হবে।

তিনি আরো জানান, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে শীতের সময় ভাইরাস জনিত কারণে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। কাজেই অভিভাবকরা বাচ্চাদের প্রতি সচেতন থাকবে, কোনোভাবে ঠাণ্ডা লাগানো যাবে না। ডায়রিয়া হলে ঘন ঘন খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। বেশি সমস্যা হলে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।