ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

আগুন নিভে গেলে দেখি বেডে নিথর মোস্তফা

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২১
আগুন নিভে গেলে দেখি বেডে নিথর মোস্তফা

ঢাকা: আইসিইউতে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সরা বের হয়ে যান। রোগীদের বাঁচানোর চেষ্টা না করে তারা গেলেন কেন? ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা না আসা পর্যন্ত কেউ ভেতরে ঢোকেননি।

আমরা ভেতরে যেতে চাইলেও অনেকে আমাদের বাধা দেন। সঠিক সময় উদ্ধার অভিযান শুরু করতে পারলে হয়তো কেউ (রোগী) মারা যেতেন না।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নতুন ভবনের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) অগ্নিকাণ্ডে চিকিৎসাধীন তিন রোগী মারা যায়। তাদের মধ্যে একজন সাবেক প্রকৌশলী কাজী গোলাম মোস্তফা।

কাজী গোলাম মোস্তফা ছেলে মারুফ বাংলানিউজকে জানান, তার বাবা আইসিইউর ৯ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ঘটনার সময় মারুফ বাইরে ছিলেন। আগুনের সংবাদ পেয়ে হাসপাতালের আইসিইউর সামনে যায়। ভেতরে থাকে ঢুকতে দেয়নি।

তিনি জানান, আইসিইউতে যারা একটু সুস্থ ছিলেন তাদের আগে বের করা হয়েছে। ঘটনার সময় আইসিইউতে যারা কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্স ছিলেন তার আগে বের হয়ে গেছেন। তারা আগে বের হলেন কেন? প্রথম থেকেই তারা যদি উদ্ধার কাজ করতেন তাহলে হয়তো রোগী মারা যেতো না।

অগ্নিকাণ্ডের সময় কেউ ভেতরে প্রবেশ করেননি, সবাই বের হয়ে গেছেন। ফায়ার সার্ভিস আসার পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে সবাই আইসিউতে প্রবেশ করেন। দুজনকে দেখেছি সম্ভবত ওয়ার্ড বয় হবে, তারা খুবই পরিশ্রম করেছেন।

মারুফ আরও জানান, গত ১১ মার্চ ফুসফুস ও মাথায় সমস্যাজনিত কারণে তার বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে এসে তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। পরে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়।

অগ্নিকাণ্ডের সময় বেঁচে যাওয়া ১০ নম্বর বেডের রোগী মাহবুব মণ্ডলের ছেলে ইসলামুল হক জানান, ১২ নম্বর বেডের শর্টসার্কিট থেকে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা মেশিন আগুন লাগে। সেখান থেকে পাইপে লাগে। এসময় রোগীর স্বজনরা নেভানোর চেষ্টা করলে আগুন অক্সিজেনের সঙ্গে মিশে ছড়িয়ে পড়ে।

আগুন যখন আইসিইউতে ছড়িয়ে পড়ে সেখানে উপস্থিত নার্স ও আনসার দ্রুত বেরিয়ে যায়। তখন ভেতরে কেউ ছিলেন না। ১২ নম্বর রোগীর দুইজন মেয়ে ছিল আর আমি ছিলাম। দ্রুত আমার রোগীকে আমি বের করে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের মাধ্যমে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখি। এর পর ওয়ার্ড থেকে হাই ফ্লো মেশিন আনতে গেলেও তা আনতে দেননি।

ওয়ার্ড মাস্টার মোহাম্মদ রিয়াজ জানান, ঘটনার সময় আমি রাউন্ডে ছিলাম। আগুন লাগার খবর পেয়ে দ্রুত আইসিইউতে গিয়ে দেখি আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে রোগীদের বের করার চেষ্টা করি। এর কিছুক্ষণ পরেই ফায়ার সার্ভিসের সদস্য চলে আসেন। এরপর আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে ৯ নম্বর বেডে গিয়ে দেখি কাজী গোলাম মোস্তফা। ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা তাকে বের করে আনেন। পরবর্তীতে হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি মারা যায়।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জানান, এ ঘটনায় তিনজনের মৃত্যুর সংবাদ শুনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিব ও ডিজি ছুটে এসেছেন। মন্ত্রী আমাদের অনেক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২১
এজেডএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।