ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

সুনামগঞ্জে ফের মামুনুলের সমাবেশ, পোস্টারে আ.লীগ নেতাদের নাম!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫১ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২১
সুনামগঞ্জে ফের মামুনুলের সমাবেশ, পোস্টারে আ.লীগ নেতাদের নাম! মহা সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথিদের নাম সম্বলিত পোস্টার

সুনামগঞ্জ: আগামী ২১ মার্চ ফের সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায় আসছেন হেফাজত নেতা মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক। খাদিমুল কুরআন মহিলা মাদরাসা জামালগঞ্জের আয়োজনে খতমে বুখারি ও ইসলামী মহা সম্মেলনের আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বাদ জোহর বক্তব্য রাখবেন তিনি।

জামালগঞ্জ হেলিপ্যাড মাঠে সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে করা হচ্ছে পোস্টারিং, বিলি করা হচ্ছে লিফলেট। এসব পোস্টারে রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাদের নাম। তবে নেতারা নাম দেওয়ার ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন বাংলানিউজকে।

এসব লিফলেটে-পোস্টারে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে নাম আছে- জামালগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুল মুকিত চৌধুরী, জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ মাহমুদ তালুকদার (সাজিব), জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম (সুহেল) এছাড়াও নাম আছে জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর।

আওয়ামী লীগ নেতা ও চেয়ারম্যানের নাম দেওয়া হলেও তারা অস্বীকার করছেন এবং থানায় জিডি করে দায় এড়াতে চাচ্ছেন।
অনুমতি না নিয়ে হেফাজতের সমাবেশের পোস্টারে জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর নাম ব্যবহারের কারণে বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) রাতে থানায় জিডি করেছেন তিনি।

উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘গতকাল মাদরাসার মুহতামিম কাউসার সাহেবকে ডেকে নিয়ে এসে পোস্টার থেকে আমার নাম বাদ দিতে বলেছি। এ ব্যাপারে তেমন আর কিছু জানি না। এই সম্মেলনের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমাকে না জানিয়ে নাম দেওয়ার কারণে ইউএনও, ডিসি মহোদয় ও পুলিশ প্রশাসনকে গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য অনুরোধ করেছি। ’

পোস্টারে নাম দেওয়া আরেক অতিথি সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য ও জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল মুকিত চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি কয়েক মাস ধরে অসুস্থ। সিলেটে চিকিৎসা নিচ্ছি। পোস্টারে নাম দেওয়ার ব্যাপারে কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। এই ওয়াজ মাহফিলের সঙ্গে আমার কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা নেই। ’

জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। আমি গত কয়দিন সিলেটে ছিলাম রোগী নিয়ে। গতকাল এসে দেখি আমার নাম পোস্টারে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নাম ব্যবহারের ব্যাপারে কোনো কিছুই আমি জানি না। এজন্য আমি জামালগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়রি করেছি। ’  

বৈঠকে আয়োজক কমিটির সদস্য ও খাদিমুল কুরআন মহিলা মাদরাসার মুহতামিম হাফিজ মাওলানা কাওছার আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, অনেকের অনুমতি নিয়ে নাম ব্যবহার করা হয়েছিল। আবার অনেকের নাম দেওয়ার পরে অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। তবে আমরা বলেছি- এরপর আর তাদের নাম ব্যবহার করবো না। আমরা অনেককেই দাওয়াত দেওয়ার পর নাম দিয়েছি। আর মোহাম্মদ আলী সাহেব আমাদের মাদরাসার সভাপতি হিসেবে নাম রাখা হয়েছে। প্রথমে এই মাদরাসার কার্যক্রম ওনার বাসা থেকেই শুরু হয়েছিল। পরে জায়গা কিনে নতুন স্থানে নেওয়া হয়েছে।

তবে ইউএনও অফিসে বৈঠকের পর আমরা তাদের বলেছি পরের প্রচার-প্রচারণায় আমরা আর নাম ব্যবহার করবো না।

জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জামালগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম বলেন, সমাবেশের জন্য অনুমতি নেওয়ার জন্য কোনো আবেদন আমাদের কাছে করা হয়নি। আর পোস্টারে নাম ব্যবহারের কারণে গতকাল ১৮ মার্চ আয়োজন কমিটির লোকজনকে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বৈঠক হয়েছে।

জামালগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব বলেন, পোস্টারে নাম দেওয়ার বিষয়টি আমাকে জানানো হয়েছিল- আর আমাদের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহেব আয়োজক কমিটির লোককে আমার কাছে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি শুধু বলেছেন তাদের জানানো হয়েছিল, এখন বলছেন জানেন না। এখন হয়তো পরিস্থিতির কারণে অতিথিরা না করছেন।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এই পরিস্থিতিতে ধর্মীয় কোনো সভা সমাবেশের অনুমতি দেবো না। আগামীকাল ১১টায় জেলা হেফাজতের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবো তারা যেন উসকানিমূলক বক্তব্য থেকে বিরত থাকেন।

এদিকে সমাবেশ সফলের লক্ষে উপজেলাজুড়ে ব্যানার-ফেস্টুন সাঁটানো হচ্ছে। করা হচ্ছে মাইকিং। তবে সমাবেশের আর মাত্র দুদিন থাকলেও এখনও নেওয়া হয়নি কোনো অনুমতি।

গত ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে হেফাজতে ইসলাম শানে রিসালাত নামে এক সমাবেশের আয়োজন করে। সেখানে হেফাজত নেতা মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকের ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ঝুমন দাশ নামে এক তরুণ সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে যে স্ট্যাটাস দেন, তা হেফাজতের দৃষ্টিতে আপত্তিকর মনে হয়। তারা পরদিন এর প্রতিবাদে সমাবেশও করে। প্রশাসন বিষয়টি দ্রুত আমলে নিয়ে ঝুমন দাশকে আটক করে।

তবে পরদিন ১৭ মার্চ মামুনুল হকের অনুসারী কয়েকশ যুবক, কিশোর লাঠিসোটা নিয়ে নোয়াগাঁও এর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এসময় তাদের আসতে দেখে নোয়াগাঁও গ্রামের নারী-পুরুষ গ্রাম ছেড়ে হাওরে চলে যায়। ফলে কেউ হতাহত হয়নি।

হামলার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে ডাকা হেফাজতের মহাসমাবেশকে ঘিরে ফের আতঙ্ক বাড়ছে ভাটির জনপদে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।