হবিগঞ্জে: বাগেরহাট থেকে লাখাই উপজেলায় বান্ধবীর বিয়েতে আসা এক তরুণীকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ধর্ষণের পর ওই তরুণীকে ঘরের তীরের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়, যেন সবাই বুঝেন তরুণী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।
ভুক্তভোগী তরুণী বাদী মামলা দায়ের করার পর তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে দুই নারী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে ধর্ষণে অভিযুক্তরা এখনও পলাতক। গ্রেফতার হওয়া তিনজন হলেন- লাখাই উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে দেলোয়ার হোসেন দিলু, তার স্ত্রী রাবিয়া খাতুন (৩৫) ও একই গ্রামের আশরাফ উদ্দিনের স্ত্রী আফিয়া খাতুন (৩০)।
শুক্রবার (১৯ মার্চ) হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা বেগম ১৬৪ ধারায় রাবিয়া ও আফিয়া খাতুনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, লাখাই উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে কোহিনুর আক্তার ও বাগেরহাটের শ্মরণখোলা উপজেলার কোন্তাকাটা গ্রামের ১৯ বছর বয়সী এক তরুণী ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় একসঙ্গে কাজ করতেন। কোহিনুরের বিয়ে উপলক্ষে গত ৬ মার্চ ওই তরুণী লাখাইয়ে আসেন। ১২ মার্চ কোহিনুরের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল।
এদিকে, এ কয়েকদিনে কোহিনুরের নিকটাত্মীয় শিপন মিয়ার সঙ্গে বাগেরহাট থেকে আসা একটি ছেলের সঙ্গে মেয়েটির প্রেমের সম্পর্ক হয়। একপর্যায়ে মোবাইল ফোনে ধারণ করা ছবি নিয়ে বান্ধবীর পরিবারের সঙ্গে ঝগড়াও হয়েছিল মেয়েটির।
পুলিশ আরও জানায়, বিয়ের দিন রাতে ওই মেয়ে আফিয়া খাতুনের ঘরে ছিলেন। তখন শিপনসহ চারজন যুবক ঘরটির দরজা বন্ধ করে তাকে ধর্ষণ করে। কিছুক্ষণ পর কোহিনুরের পরিবারের লোকজন ঘরের দরজার সামনে এলে তাদের সামনেই চার যুবক বেরিয়ে যান। পরে ধর্ষণের ঘটনা আড়ালের উদ্দেশ্যে কোহিনুরদের পরিবারের লোকজন মেয়েটিকে ঘরের তীরের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন এবং তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে প্রচার করতে থাকেন।
এরপর ১২ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত মেয়েটিকে হবিগঞ্জ ও সিলেটের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা করিয়েছেন অভিযুক্তরা। তখন মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে তাকে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। এক পর্যায়ে ১৫ মার্চ মেয়েটির বড় বোন বাগেরহাট থেকে লাখাইয়ে এলে তার হাতে হস্তান্তর করা হয় এবং মেয়েটি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে বোনকে জানান। এরপর আরও দুইদিন চিকিৎসা নিয়ে ১৮ মার্চ ভুক্তভোগী তরুণী বাদী হয়ে লাখাই থানায় মামলা দায়ের করেন।
লাখাই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মহিউদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, মামলায় আসামি সাতজন। এর মধ্যে কোহিনুরের বাবা, মা ও যে ঘরে ধর্ষণ করা হয়েছে সেই ঘরের মালিককে (নারী) গ্রেফতার করা হয়েছে। দুই নারী আদালতে স্বীকারোক্তিতে ধর্ষণের বর্ণনা দিয়েছেন। মূল আসামি শিপনসহ চার যুবককে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭১৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২১
ওএইচ/