ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ছাগল খোঁয়াড়ে দেওয়ায় অপমানে কৃষকের আত্মহত্যা!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৯ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২১
ছাগল খোঁয়াড়ে দেওয়ায় অপমানে কৃষকের আত্মহত্যা!

মাগুরা: খোঁয়াড় মালিকের দাবিকৃত টাকা পরিশোধ করতে না পারায় অপমান ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা সইতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন মোসলেম শেখ নামে এক বৃদ্ধ কৃষক।  

ঘটনার পর ১০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে শনিবার (২০ মার্চ) সকাল পৌনে ১০টার দিকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে মারা যান তিনি।

মোসলেম শেখের বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার ধর্মদাহ গ্রামে।  

মাগুরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. অমর প্রসাদ বিশ্বাস মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

নিহত কৃষকের স্ত্রী আমেন খাতুন বলেন, ক্ষেতের ফসল নষ্ট করার অভিযোগে তারই প্রতিবেশী নজরুল শেখ গত ১০ মার্চ দুপুরে দুটি বাচ্চাসহ তাদের একটি রামছাগল কালাম শেখের খোঁয়াড়ে দিয়ে আসেন। খবর পেয়ে তার স্বামী মোসলেম শেখ ছাগল ফিরিয়ে আনতে গেলে কালাম শেখ এক হাজার টাকা দাবি করেন। বাধ্য হয়ে গ্রামের কয়েকজনের কাছ থেকে ৩শ টাকা ধার করে আবার খোঁয়াড়ে যান। কিন্তু পুরো টাকা নিয়ে যেতে না পারায় খোঁয়াড় মালিক তার স্বামীকে গলাধাক্কা দিয়ে ও মারধর করে ফিরিয়ে দেন। এ অপমানে সেখান থেকে ফিরে এসে মোসলেম শেখ বাড়ির পেছনের বাগানে গলায় ফাঁস নেন।

প্রতিবেশীরা টের পেয়ে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করেন। শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ওই দিনই তাকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে গেলে তারাও রেফার্ড করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে  পাঠায়। কিন্তু আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় আমেনা খাতুন স্বামীকে নিয়ে ফিরে আসেন মাগুরায়। তার স্বামী মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শনিবার সকালে তার মৃত্যু হয়।

এ বিষয়ে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক সফিউর রহমান বলেন, তার শারীরিক অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক ছিল।

এদিকে কালাম শেখের খোঁয়াড় কার্যক্রমের বিষয়ে খোঁজ নিতে স্থানীয় শত্রুজিতপুর ইউনিয়ন পরিষদে গেলে দায়িত্বরত সচিব আবদুস সালাম জানান, খোঁয়াড় নিয়ে অনেক বাদ-বিবাদের ঘটনা ঘটায় ওই গ্রামে কাউকে কোনো ইজারা দেওয়া হয়নি। অথচ অবৈধভাবে কালাম শেখসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র অন্যের গবাদিপশু আটকে রেখে জোরপূর্বক ইচ্ছা মাফিক টাকা আদায় করে যাচ্ছে বলে গ্রামবাসী অভিযোগ করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে ধর্মদাহ গ্রামের তথাকথিত সরকারি অনুমোদনবিহীন খোঁয়াড় মালিক কালাম শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোসলেম শেখকে লাঞ্ছিত ও মারধর করার বিষয়টি অস্বীকার করেন। আর সরকারি অনুমোদন না থাকলেও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারদের সহযোগিতায় খোঁয়াড়ের কার্যক্রম চলছে বলে তিনি জানান।

তবে তার বক্তব্য অস্বীকার করেছেন শত্রুজিতপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সনজিত বিশ্বাস।

এদিকে সহায়-সম্বলহীন কৃষকের স্ত্রী আমেনা খাতুন স্বামীর এমন পরিস্থিতির বিচার চেয়ে ১৭ মার্চ মাগুরা সদর থানায় একটি অভিযোগ দিলেও পুলিশি তৎপরতা না থাকায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদিন আমেনা খাতুনের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২১
আরএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।