নাটোর: নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় গলা কেটে সেলিনা বেগম (৪৫) নামে এক গৃহবধূ হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।
স্বামীকে মোটরসাইকেল কিনতে লাখ টাকা না দেওয়ায় মা সেলিনা বেগমকে গলা কেটে হত্যা করার কথা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন মেয়ে ববি আক্তার (২০)।
মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) দুপুরে গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।
এছাড়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা। এসময় গুরুদাসপুর ও সিংড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. জামিল আকতারসহ পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। নিহত সেলিমা বেগম গুরুদাসপুর পৌরসভার উত্তর নারিবাড়ী মহল্লার মো. নজরুল ইসলামের স্ত্রী।
ওসি বলেন, সোমবার (২২ মার্চ) বিকেলে নিজেদের ঘরে সেলিনাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মেয়ে ববি আক্তারকে আটক করার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তার মাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
ববির বরাত দিয়ে ওসি বলেন, মাস তিনেক আগে মালয়েশিয়া প্রবাসী খালাতো ভাই সোহেলের সঙ্গে বিয়ে হয় ববির। স্বামী দেশে ফেরার আগে তাকে মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার জন্য মাকে চাপ দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু মা সেলিনা তাতে পাত্তা না দিয়ে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতেন। এমনকি মরতেও বলতেন। সোমবার (২২ মার্চ) সকালে আবার মায়ের কাছে মোটরসাইকেল কিনে দিতে এক লাখ টাকা দাবি করেন ববি। কিন্তু সেলিনা এতে রাজি না হওয়ায় মা-মেয়ের মধ্যে ঝগড়া হয়। এর জের ধরে বিকেলে প্রথমে ববি তার মাকে ঘুমের ওষুধ সেবন করান। মা ঘুমিয়ে গেলে ব্লেড দিয়ে গলা কেটে মাকে হত্যা করেন তিনি। এরপর তাদের বাড়ির ভাড়াটিয়া শিরিন শিলাকে নিয়ে কাপড় কিনতে চাঁচকৈড় বাজারে যান ববি। বাজার থেকে ফিরে এসে কেউ তার মাকে খুন করেছে বলে নাটক সাজিয়ে কান্নাকাটি শুরু করেন এবং এ হত্যার জন্য দায়ী করে চাচাদের নাম বলতে থাকেন। সন্ধ্যার দিকে ঘটনাটি জানাজানি হয়। সন্ধ্যায় ওই বাড়িতে তল্লাশি করে ববির হ্যান্ডব্যাগে তার মায়ের সমস্ত গহনা ও নগদ ১৬ হাজার ৭০০ টাকা এবং ব্লেড পাওয়া যায়। এতে পুলিশের সন্দেহ হলে ববিকে আটক করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি মাকে হত্যার দায় স্বীকার করে পুলিশের কাছে বর্ণনা দেন। এ হত্যার ঘটনায় সিআইডি ও পিবিআই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত শুরু করেছে।
এদিক স্থানীয়রা জানান, সেলিনার দুই মেয়ে স্বপ্না ও ববি। স্বপ্নার বিয়ে হয়েছে। এর আগে ববির বিয়ে হয় তার ফুপাতো ভাই সোহেলের সঙ্গে। কিন্তু বনিবনা না হওয়ায় তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। পরে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার প্রবাসী খালাতো ভাই সোহেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
নিহতের স্বামী নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, চাকরির কারণে প্রতিদিনের মত সোমবার সকালে তিনি কর্মস্থলে চলে যান। তার মেয়ে ববি বাসায় ছিলেন। সন্ধ্যার দিকে তিনি ফোনে হত্যার খবর পান। তিনি এ হত্যার সঠিক বিচার চান।
বাড়ির ভাড়াটিয়া শিরিন শিলা বলেন, আমি বাজারে যেতে চাইনি। অনেক জোরাজুরি করে আমাকে চাঁচকৈর বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আসার পর ববি তার মাকে কে যেন খুন করেছে বলে চিৎকার করতে থাকেন। আমি এর বেশি কিছু জানি না।
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে সেলিনাকে হত্যা করা হয়েছে। সেলিনার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। নিহতের বড় ভাই সুলতান আহমেদ খান বাদী হয়ে গুরুদাসপুর থানায় ববির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ববিকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২১
এসআই