মৌলভীবাজার: ইদানীং মানুষ ব্ল্যাক টির পাশাপাশি ভিন্ন স্বাদের চায়ের দিকে ঝুঁকছে। রুচির পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে দু’একটি বাগানও তাই উৎপাদন করছে ইয়েলো টি বা হোয়াইট টির মতো ব্যয়বহুল চা।
জানা যায়, চলতি মাসের ১৫ মার্চ বৃন্দাবন চা বাগানের উৎপাদিত ইয়েলো টির পাঁচ কেজির পুরো লট চট্টগ্রাম চা নিলাম অকশনে তুলেছিল পূর্ববাংলা ব্রোকার্স। ৮ হাজার ৩শ টাকা দরে পুরো লট কিনেছে শ্রীমঙ্গলের গুপ্ত টি হাউজ। ১৮ মার্চ শ্রীমঙ্গলের চা নিলাম কেন্দ্রে বৃন্দাবন চা বাগানের ইয়েলো টির দুই কেজির লটের সবটাই কেজিপ্রতি ১২ হাজার ২শ টাকায় কিনেছে পপুলার টি হাউজ।
গুপ্ত টি হাউজের পীযুষ কান্তি দাশগুপ্ত বাংলানিউজকে বলেন, ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে ইয়েলো টির দাম প্রায় ১০ হাজার টাকা পড়ে গেছে। প্রতি ১০০ গ্রাম ইয়েলো টি আমরা বিক্রি করছি ১১০০ টাকায়।
এই ইয়েলো টি প্রসঙ্গে বৃন্দাবন চা বাগানের ব্যবস্থাপক নাসির উদ্দিন খান বাংলানিউজকে বলেন, ইয়েলো টির ভবিষ্যৎ ভালো। এখন আর অনেকেই সাধারণ চা পছন্দ করেন না। ২০/৩০ বছর আগের চায়ের অবস্থা কিন্তু এখন নেই। আগে মানুষ শুধু ব্ল্যাকটির (কালো চা) উপর নির্ভর করতো। আর যারা খুব স্বাস্থ্য সচেতন তাদের কিছু অংশ গ্রিন-টি খেতো। কিন্তু বর্তমানে অনেক মানুষ চায়ের বৈচিত্র্য খোঁজেন। শুধু ব্ল্যাক-টি বা গ্রিন-টি নয়। সেসব মানুষের কথা চিন্তা করে বাণিজ্যিক ইয়েলো-টি তৈরি করেছি এবং ভালো ফলাফল পাচ্ছি। মার্কেটে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
ভারতের একটি চা কোম্পানি মনোহরী টি এস্টেট হোয়াইট টি তৈরি করেছে। তারা সেই চা ৭৫ হাজার রুপিতে প্রতি কেজি বিক্রি করেছে। এর দাম পড়েছে বাংলাদেশি টাকায় এক লাখ টাকা। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি আমাদের বাগানে প্রথম গ্রিন-টি পরে ইয়েলো-টি তৈরি করলাম। শ্রীমঙ্গল যেহেতু পর্যটননগরী এবং চায়ের রাজধানী তাই সেখানে আমাদের বাগানের স্পেশাল চাগুলো বেশি চলছে।
বহির্বিশ্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, চীনে ৪ তলা ৫ তলা বিশিষ্ট চা ফ্যাক্টরিগুলো রয়েছে। একেক তলায় একেক চা তৈরি হচ্ছে। কোনোটায় ব্ল্যাকটি, কোনোটায় গ্রিন-টি আবার কোনোটায় ইয়েলো-টি। সেখানে আপনার পছন্দ মতো ফ্রি চা খেয়ে আপনি চা কিনে নিয়ে আসবেন।
চলতি বছর মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আমাদের নতুন প্লাকিং (পাতা চয়ন) শুরু হবে। তখন আরো ব্যাপক পরিমাণে ইয়েলো-টি ম্যানুফ্যাকচারিং করবো তখন আমরা আমেরিকাতেও আমাদের এই চা রপ্তানি করে দেশের সম্মান রাখাতে পারবো বলে বিশ্বাস করি।
ইয়েলো-টি তৈরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই চায়ের রংটা খুব সুন্দর, হালকা হলুদ। বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকদের দিয়ে আমি এই চায়ের পাতাগুলো তুলি। আমার বাংলোতে চা পাতাগুলো এনে একটা একটা করে কুঁড়ি নির্বাচন করি। আসলে এটা তৈরি করতে প্রচুর সময় এবং কষ্টসাপেক্ষ ব্যাপার। ধৈর্যের সঙ্গে লেগে থাকতে হবে।
লাভ প্রসঙ্গে এ ব্যবস্থাপক বলেন, আমাদের ব্ল্যাক টির চেয়ে ইয়েলো টি লাভজনক। ইয়েলো টিতে আমার ম্যানুফ্যাকচারিং কস্ট (প্রক্রিয়াজাতকরণ খরচ) প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। অকশনে বিক্রি করছি আট-দশ হাজারের উপরে। গত চা মৌসুমে প্রায় সাত কেজি ইয়েলো টি বিক্রি করেছি। আগামীতে আমাদের টার্গেট হলো এক টন (১ হাজার) কেজি ইয়েলো টি তৈরি করবো। এ চায়ের জন্য আমি দু’টি সেকশন (চা বাগানের সুনির্দিষ্ট এলাকা) আলাদা করে রেখে দিয়েছি। ৪/৫ দিন পর পর প্লাকিং রাউন্ড (পাতা চয়ন চক্র) ঘুরে আসছে।
ইয়েলো টির প্রধান উপকার হলো এটি ক্যানসার প্রতিরোধক এবং হার্টের রোগ দূর করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। হার্টের ব্লক থাকলে এটি নিয়মিত পানের ফলে সেই ব্লক ছুটে যাবে। অতিরিক্ত ব্ল্যাক-টি যেমন শরীরে কিছু ক্ষতি আছে, এটার কোনো প্রকার ক্ষতি নেই বলে জানান বৃন্দাবন চা বাগানের ব্যবস্থাপক নাসির উদ্দিন খান।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২১
বিবিবি/এএ