কবির ভাষা বলতে গেলে,
প্রভাতে দিবাকর খুব সোহাগে,
চুম্বন আঁকে সূর্যমুখীর পরাগে;
প্রেমের স্পর্শে সিক্ত সে ফুল,
শীতল সমীরে দোলে দোদুল;
হলুদ ফুল তার খয়েরি কুঁড়ি,
সূর্যপ্রেমে মেলা ভার জুড়ি;
বেলাশেষে অস্তরাগে সুয্যি যখন, সূর্যশোকে ম্রিয়মান ফুল তখন;
সূর্যমুখীর ফুলের গল্প শুনতেই চোখের সামনে ভেসে উঠে মুখ হা করে সূর্যের দিকে থাকার দৃশ্যগুলো। তখন ফুলগুলো দেখতে ভারী সুন্দর লাগে।
আমাদের মতো অনেকেই এসেছেন এই সূর্যমুখীর রাজ্য দেখতে। মাঠজুড়ে হলুদের রাজ্য দেখে মুগ্ধ আগতরা। ফুলে এমন সৌন্দর্য থাকে যা প্রতিটি মানুষকে আকৃষ্ট করে। মুহূর্তে বিষণ্ন মনকে প্রফুল্ল করে দিতে পারে। সত্যি কথা বলতে আমাদের ক্লান্ত শরীর নিমিষে সতেজ হয়ে উঠলো সূর্যমুখীর মাঠ দেখে। ফুলের শোভায় মন আনন্দে নেচে উঠে।
চারদিকে শুধু হলুদে সূর্যমুখীর সমারোহ। বিশাল সূর্যমুখীর ক্ষেতজুড়ে মৌমাছি ও কালো ভ্রমরের গুনগুনানি আওয়াজ। ক্ষেতে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে মধু পানে ব্যস্ত মৌমাছিগুলো। ফুটন্ত ফুলগুলোর মাঝেমধ্যে খয়েরি কুড়ি ও আধা ফোটা ফুলগুলো যেন লজ্জায় নিচের দিকে মুখ করে আছে। তারা শুধু ফোটার অপেক্ষার প্রহর গুনছে। কিছু কিছু সূর্যমুখীর ফুল পেকে কালো কালো দানা হয়ে গেছে। আর এই গুলোই হচ্ছে চাষিদের স্বপ্ন। যা থেকে তেল উৎপাদন হয়। দূর-দূরান্ত থেকে আসা ছুটে আসা ফুলপ্রেমী কিছু তরুণী সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে সেলফি তোলায় ব্যস্ত। কেউ কেউ ফুলের ডাল টেনে ছবি তুলছেন। আবার কেউ কেউ ফুলসহ ডাল ভেঙে নিয়ে যাচ্ছেন।
এ ইউনিয়নগুলোর চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ফুলপ্রেমীরা সূর্যমুখী বাগান দেখতে আসেন। ফলে আমাদের আনন্দ লাগে। কিন্তু ছবি তোলা নিষেধ থাকার পরও তারা বাগানের ভেতর চলে যান। এমনকি যাওয়ার সময় ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যায়। হয়তো ফুলটি নিয়ে দুইদিন রেখে ফেলে দেবে। কিন্তু একটা ফুলে কতটুকু তেল নষ্ট হলো সেটা কেউ বুঝতে চায় না।
বাগানের মালিক মুন্সিগঞ্জ সিরাজদিখান চিত্রকোট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল হক বাবুল সাহেবের বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবছর প্রতিটি জেলায় প্রণোদনা বীজ হিসেবে সূর্যমুখী, চিনাবাদাম আর গম দিয়েছেন এবং সবাইকে এই ফসলগুলো চাষ করতে বলেছেন। কিন্তু এই সূর্যমুখীর চাষ কেউ করতে সাহস পায় না। কারণ এটাতে কেমন খরচ হবে, কিভাবে চাষ করবে বা কেমন লাভ হবে অনেকেই জানেন না। কিন্তু আমি কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে এই প্রথমবার কয়েক বিঘা জমিতে চাষ শুরু করলাম। দেখলাম এতে খরচ নেই বললেই চলে। আর পরিশ্রম ও অনেক কম। আশা করছি, সরিষা ফুলের চাষের চেয়ে তিনগুন লাভবান হবো। আগামী বছর আমার আরও ১০/১২ বিঘা জমিতে চাষ করবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২১
এএটি