চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চৈত্র মাসের শুরুতেই পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পৌরসভায়। প্রায় ৩ সপ্তাহ থেকে এ সংকটের শুরু হয়েছে।
এদিকে পৌর এলাকায় পাইপলাইনে পানি সরবারাহের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও পাইপলাইন স্থাপনে টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও সাড়া না পাওয়ায় প্রকল্পটি নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সেসঙ্গে শহরের ৬টি পয়েন্টে ৬টি পাম্প স্থাপন করা হলেও বৈদ্যুতিক সংযোগ এখনও দেওয়া সম্ভব হয়নি। পৌরবাসীর দাবি মেয়রের অবহেলার কারণেই দীর্ঘ ৩ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি প্রকল্পটি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে শিবগঞ্জ পৌরসভায় মানুষের পানির কষ্ট চলছে গত ৩ বছর থেকে। প্রতিবছরই কষ্ট বাড়ছে। তবে এবছর শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই পানি সংকট দেখা দেওয়ায় গরীবদের এখন একটায় ভরসা বৃষ্টি। বৃষ্টি হলে পানির স্তর বাড়বে তখন আবার নলকূপগুলো সচল হবে এ আশা পৌরবাসীর। গভীর নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও বৈদ্যুতিক সংযোগ সমস্যা ও পাইপলাইন স্থাপনে কোনো ঠিকাদার পাওয়া যায়নি। তাই পানির সমস্যা চলতি বছরেও সমাধান নিয়ে সংশয় রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে পৌরবাসী হস্তচালিত নলকূপের ওপর এবং অধিকাংশ পরিবারই নলকূপে মোটর সংযোজন করে উত্তোলিত পানির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু গত বছর গ্রীষ্মের শুরু থেকেই মোটরে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে পড়ে। তবে গত বছর গরমের শুরুতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের কারণে সমস্যা না হলেও এবছর বিপাকে পড়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। তবে উচ্চবিত্ত পরিবারগুলো বাড়িতে মিনি উৎপাদক নলকূপ (সাবমার্সিবল পাম্প) স্থাপন শুরু করায় যেসব নলকূপগুলোতে পানি পাওয়া যেতো সেগুলোও অকেজো হয়ে পড়েছে।
শহরের দেওয়ানজাইগীর এলাকার বাসিন্দা দিলীপ কুমার দাশ জানান, নলকূপে আগের মতো পানি উঠছে না। রাতে অথবা ভোরে মোটর চালালে পানি কয়েকদিন ওঠার পর সেটাও অকেজো হয়ে যায়। পরে তিনি সাবমার্সিবল পাম্প স্থাপনের পর পানি সমস্যা থেকে রেহাই পান। তবে প্রতিবেশীদের পানি সরবরাহ করতে গিয়ে তিনি হিমসিম খাচ্ছেন।
মাস্টারপাড়ার সিহাব জানান, গত ৮ মার্চের পর থেকে মোটরে পানি উঠছে না। বাধ্য হয়ে অন্য এলাকা থেকে খাবার পানি আনার জন্য লোক রাখতে হয়েছে।
অন্যদিকে শিবগঞ্জ স্নাতক মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক গোলাম মোস্তফা মামুন জানান, দীর্ঘদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে পৌরবাসীর পানি সমস্যা সামাধানে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। শুষ্ক মৌসুমে তোড়জোড় হলেও বছরের অন্য সময় আবারও বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।
সেলিমাবাদ গ্রামের আলমগীর জয় জানান, গত ৩ বছর ধরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা শুনলেও এখনও পাইপলাইন বসানোর কাজই শুরু করেনি কর্তৃপক্ষ।
কয়েকদিন ধরে বাজারপাড়া, কুমারপাড়া, চতুরপুর, বাবুপাড়া সহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে একই ধরনের সমস্যার কথা জানা গেছে।
এদিকে সাবমার্সিবল পাম্প বিক্রিকারী একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী রোজবুল হক জানান, এবছর পানির স্থর আগেভাগেই নেমে যাওয়ার কারণে প্রতিদিনই একাধিক সাবমার্সিবল পাম্প বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে পাম্প স্থাপনকারী মিস্ত্রি নোমান জানান, তিনি গত ১ বছরে ১০ থেকে ১৫টি সাবমার্সিবল পাম্প স্থাপন করলেও এবছর গত ২০ দিনেই ২৫টি পাম্প স্থাপন করেছেন।
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র সৈয়দ মনিরুল ইসলাম পানি সংকটের কারণে পৌরবাসীর কাছে দু:খ প্রকাশ করে বলেন, গরমের শুরুতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক এলাকার নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। সাবমার্সিবল পাম্প স্থাপনের কারণে এ সংকট আরও প্রকট হয়েছে।
তবে পানি সরবরাহ প্রকল্পটি আরও আগে বাস্তবায়নের উদ্যোগ না নেওয়ায় পৌরবাসীকে আরও একটু ধৈর্য ধরতে হবে। প্রকল্পের ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
বৈদ্যুতিক সংযোগ সমস্যার ব্যাপারে তিনি বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ প্রকল্পের কাজ ও গভীর নলকূপের কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মনিটরিং করা হচ্ছে। আগামী ২০ দিনের মধ্যে পাম্পগুলোতে সংযোগ স্থাপনের জোড় তৎপরতা চালানো হচ্ছে। আর পাইপলাইন স্থাপনের জন্য যে টেন্ডার হয়েছিলো সেখানে একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান অংশ নেওয়ায় স্বচ্ছতা আনতে আবারও টেন্ডার দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে তদবীর করা হচ্ছে।
পানি সমস্যা সমাধানে প্রকল্পটি দ্রুত আলোর মুখ দেখুক এমনটি প্রত্যাশা সদ্য নির্বাচিত মেয়রের কাছে পৌরবাসীর।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩১
এমআরএ