ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ কর্মসূচি দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করতে হবে বলে মনে করছেন কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ও সাংবাদিকরা।
মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ অভিমত দেন তারা।
কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজামণ্ডপ, বাড়িঘর ও দোকানপাটে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলা, ভাঙচুর ও হত্যার ঘটনায় অবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেফতার এবং বিচারের দাবিতে এ কর্মসূচি আয়োজিত হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন—কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন, শিল্পী মোটুসী বিশ্বাস, সাংবাদিক জুলহাস নূর, গৌরব ৭১ এর সাধারণ সম্পাদক এফএম শাহীন, চারুশিল্পী সংসদের সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরী, চিত্রনির্মাতা মাসুদ প্রতীক, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা, সাবেক সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান, কবি লিনা পারভীন, আলতাফ শাহনেওয়াজ, তৃষ্ণা সরকার, মাসুম আজিজুল বাশার প্রমুখ।
আনিসুল হক বলেন, আমরা মাটির সঙ্গে মিশে গেছি। এখন আমাদের সেই মিশে যাওয়া থেকে বের হয়ে উঠে দাঁড়াতে হবে। কারণ পরাজিত হওয়ার জন্য ত্রিশ লাখ শহীদ বাংলাদেশ স্বাধীন করেননি। কুমিল্লা, চাঁদপুর ও রংপুরের পীরগঞ্জে যে ঘটনা ঘটেছে, তা স্বাধীন বাংলাদেশে একবিংশ শতাব্দীতে হতে পারে বলে আমরা বিশ্বাস করি না। আমাদের উচিত সতের কোটি মানুষ এক হয়ে দাঙ্গাবাজ সাম্প্রদায়িক শক্তি, মৌলবাদী শক্তি, পাশবিক শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। আমরা মানবতার প্রতি আহ্বান জানাই, সবার ওপর মানুষ সত্য তাহার ওপর নাই—এই বাণীকে ধারণ করে আমরা আবার এক হবো। আমরা আবার মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনবো। যেখানে ধর্মের নামে কোনো হানাহানি থাকবে না। ধর্মের বৈষম্য থাকবে না।
কামাল পাশা চৌধুরী বলেন, এখনো ডাক দিলে মানুষ সমবেত হয়। এই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। যারা এসব করে তাদের সমস্যা আছে। এরা মানুষ না, এরা পিশাচ।
শিক্ষক ঝর্ণা রহমান বলেন, এটি প্রতিবাদের চত্বর। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আমাদের এ প্রতিবাদ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। সরকারের কাছে অপরাধীদের ধরা কঠিন কিছু নয়। সরকার চাইলে কবর থেকেও অপরাধীদের তুলে আনতে পারবে।
সাংবাদিক জুলহাস নূর বলেন, আমি একজন সংবাদকর্মী। এ ধরনের ঘটনা যখন গণমাধ্যমে আসে এবং সেগুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়, তখন আমরা ভীষণ রকম মুষড়ে পড়ি। দেশটা কোথায় যাচ্ছে? আমরা যখন এখানে দাঁড়িয়েছি, ইতোমধ্যে ঘটে গেছে কুমিল্লার ঘটনা, নোয়াখালী; সবশেষ পীরগঞ্জের ঘটনা আমরা জানি। এসব ঘটনা যারা ঘটাচ্ছে তারা পূর্বে নাসিরনগর, রামু, সুনামগঞ্জের ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনা প্রতিরোধ করার জন্য যে প্রতিবাদ জানানো দরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নেওয়া দরকার, সরকারের যে ভূমিকা থাকা দরকার, আমরা কি সবাই সেই কাজটা করেছি?
মৌটুসী বিশ্বাস বলেন, আজ আমরা যে কারণে শাহবাগে দাঁড়িয়েছি, তা কারোর জন্য সুখকর নয়। আমরা এমন বাংলাদেশ চাই না। আমাদের পরিচয় আমরা আগে মানুষ। সবাই জানেন, এ ঘটনাগুলো পরিকল্পিতভাবে হয়েছে। কিন্তু একটা সময় যে ‘জিরো টলারেন্স’ ছিল, সেই ‘জিরো টলারেন্স’ কোথায়? আমরা সাম্প্রদায়িক হয়ে যাচ্ছি কেন? এ দেশ তো অসাম্প্রদায়িক হওয়ার কথা ছিল। আমরা আমাদের শিক্ষা হারিয়ে ফেলছি। এ দেশ তো এমন হওয়ার কথা ছিল না। আমরা আমাদের পরের জেনারেশনকে কী শেখাচ্ছি? এগুলো একদিনের ঘটনা নয়। এগুলো অনেক দিনের ঘটনা। আস্তে আস্তে বছরের পর বছর ধরে এ জায়গায় এসেছে।
আরও পড়ুন:
সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদ
কবি-সাহিত্যিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ
বাংলাদেশ সময় ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২১
এসকেবি/এমজেএফ