ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অব পিস (ইউএসআইপি) প্রবর্তিত উইমেন পিস বিল্ডিং অ্যাওয়ার্ডের ফাইনালিস্টদের একজন নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার ও নারী অধিকার আন্দোলনকর্মী রানি ইয়ান ইয়ান।
বুধবার (২০ তারিখ) এক ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।
নয়জন ফাইনালিস্টদের একজন হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।
রানী ইয়ান ইয়ান বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল থেকে আসা একজন আদিবাসী মানবাধিকার ও নারী অধিকারকর্মী। এছাড়াও তিনি চাকমা সার্কেল চিফের উপদেষ্টা এবং চাকমা জনগণ ও চাকমা সার্কেলের প্রথাগত রানী।
বার্ষিক এই পুরস্কারটি একজন নারী শান্তি-নির্মাতাকে সম্মানিত করার জন্য ২০২০ সালে প্রবর্তন করা হয়েছে, শান্তিতে এর তাৎপর্যপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত অবদান ভবিষ্যতের শান্তি-নির্মাতাদের জন্য অনুপ্রেরণা ও পথপ্রদর্শনের আলো দেখাবে।
বুধবার ঢাকার মার্কিন দূতাবাস জানায়, ইউএসআইপি ৩০টিরও বেশি দেশ থেকে নারী শান্তি-নির্মাতাদের মনোনয়ন পেয়েছিল। জেন্ডার ও শান্তি বিনির্মাণের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ও নেতৃত্বশীল ১৮ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত ইউএসআইপির উইমেন বিল্ডিং পিস কাউন্সিল পুরস্কারের জন্য মনোনয়নপ্রাপ্ত শান্তি-নির্মাতাদের শান্তি বিনির্মাণে দৃষ্টান্তমূলক অঙ্গীকার ও নেতৃত্ব এবং সহিংস সংঘাতের অবসান ও প্রতিরোধে তাদের মুখ্য ভূমিকা পালনের ভিত্তিতে ফাইনালিস্টদের নির্বাচিত করেছেন। সম্মিলিতভাবে তারা আটটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করে এবং চূড়ান্ত মনোনয়নপ্রাপ্তদের মধ্যে কয়েক প্রজন্ম ধরে শান্তি বিনির্মাণে কাজ করছে এমন একটি গ্রুপ রয়েছে।
রানি ইয়ান ইয়ান বাংলাদেশের পাবর্ত্য অঞ্চল থেকে আসা একজন আদিবাসী মানবাধিকার রক্ষাকর্মী ও নারী অধিকার কর্মী। এছাড়াও তিনি চাকমা সার্কেল চিফের উপদেষ্টা এবং চাকমা জনগণ ও চাকমা সার্কেলের প্রথাগত রানি। আদিবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলে সহিংসতা ও শোষণের শিকার হয়েছে, এর ফলে হাজার হাজার মানুষ মারা পর্যন্ত গেছে। এমনকি ১৯৯৭ সালে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরও আদিবাসী সম্প্রদায়গুলো তাদের ভূমি ও মৌলিক চাহিদায় সীমিত প্রবেশাধিকার পেয়েছে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাইরের লোকদের দ্বারা আদিবাসী নারীদের ধর্ষিত হওয়ার ঘটনা পাবর্ত্য চট্টগ্রামে সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে এবং কখনো কখনো অপরাধীরা দায়মুক্তি পাচ্ছে।
এ ধরনের এক পরিস্থিতিতে রানি ইয়ান ইয়ান আদিবাসী নারীদের নিরাপত্তা ও অধিকারের সুরক্ষায় সোচ্চার হয়েছেন এবং সমাজে তাদের নেতৃত্বের সমর্থনে কাজ করছেন। তার নিজের জীবনের প্রতি হুমকি ও আক্রমণ হওয়া সত্ত্বেও রানি ইয়ান ইয়ান পাবর্ত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও ন্যায়বিচারের উন্নয়নে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নাগরিক সংগঠনগুলো এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পক্ষগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন। তার কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, তিনি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডসহ আদিবাসী জনগণের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন আইন, জাতীয় নীতিমালা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে সংস্কার ও বাস্তবায়নে আদিবাসী জনগণের অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ দেখতে চান। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি তার বিশ্বাসের প্রতিফলন টেকসই শান্তি ও সমতা জোরদারকরণে তার অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমদর্শিতামুখী কাজের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়।
ইউএসআইপির উইমেন বিল্ডিং পিস অ্যাওয়ার্ড শান্তির জন্য কাজ করছে এমন অনেক নারীর কাছে তাদের কাজ যে গুরুত্বপূর্ণ সেই বার্তাবহনকারী একটি শক্তিশালী প্রতীক' উল্লেখ করে জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির নির্বাহী পরিচালক এবং ইউএসআইপির উইমেন বিল্ডিং পিস কাউন্সিলের সদস্য রাষ্ট্রদূত মেলানি ভারভীর বলেন, এই পুরস্কার দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় নারীদের প্রতিনিধিত্বকে ভুক্তভোগী হিসেবে নয়, নেতৃত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২১
টিআর/এএটি