ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি): বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।
বুধবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যানারে আয়োজিত নাগরিক বিক্ষোভ ও মশাল মিছিলপূর্ব সমাবেশে সংহতি জানিয়ে এ দাবি জানান তিনি।
এতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, ঢাবি অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এম আকাশ, শিক্ষাবার্তার সম্পাদক এএন রাশেদা, কবি ফেরদৌস আরা রুমি, চলচ্চিত্র আন্দোলনের কর্মী বেলায়েত হোসেন মামুন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ আন্দোলনের আকরামুল হক।
ইমরান এইচ সরকার বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, জীবন দিয়েছিলেন, তারা এই বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেননি। এমনকি তারা ভাবতেও পারেননি যে, এমন দিন দেখতে হবে। আগে এদেশে কোনো এক ধর্মের উৎসব পালনে অন্য ধর্মের মানুষ সহযোগিতা করতেন। তবে আগেও যে সাম্প্রদায়িক হামলা হতো না তা নয়। কিন্তু এবারের মতো ঘোষণা দিয়ে হামলা আগে হয়নি। এক নোয়াখালীতেই ঘোষণা দিয়ে তিনবার হামলা চালানো হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, হামলা চলাকালীন পুলিশ প্রশাসনকে বারবার ফোন করা হলেও তারা ফোন ধরেননি। এছাড়া দেশের পাঠ্যপুস্তকে অসাম্প্রদায়িক লেখা সরিয়ে সাম্প্রদায়িক লেখা অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
ইমরান এইচ সরকার বলেন, শুধু এই হামলা নয়, অতীতেও কোনো সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার হয়নি। বরং হামলাকারীদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। এই সরকার নানাভাবে সাম্প্রদায়িকতার পৃষ্ঠপোষকতা করছে। দেশে যত সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে সবগুলোর বিচার করতে হবে। প্রয়োজনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য যেমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত বিচার করা হয়েছিলো, সাম্প্রদায়িক হামলার বিচারেও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।
মোজহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে সরকার যেভাবে আমলা ও লুটেরাদের ওপর ভর করে দেশ পরিচালনা করছে সেখান থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে হবে। জনগণের সরকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সামগ্রিকভাবে আমাদেরকে এই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে।
অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, শাসকশ্রেণি আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও ধর্মনিরপেক্ষতা একই সঙ্গে চলতে পারে না। এটা যতদিন থাকবে, ততদিন সংখ্যালঘুরা দেশটাকে নিজের ভাবতে পারবে না।
সমাবেশে থেকে ঘোষণা পত্র পাঠ করেন সাবেক ছাত্রনেতা বাকি বিল্লাহ। এ সময় তিনি আটটি দাবি জানান। সেগুলো হল- সারাদেশে সাম্প্রদায়িকতায় জড়িত এবং মদদদাতাদের গ্রেফতার ও বিচার করা, অব্যাহত সাম্প্রদায়িক হামলার দায় আওয়ামী লীগ সরকার ও পুলিশ প্রশাসনকে গ্রহণ এবং নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অপসারণ।
সভা-সমাবেশ এবং ইউটিউব-ফেসবুকে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া, বহুধারার শিক্ষাপদ্ধতি বাতিল করে মাতৃভাষায় এক ধারার বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা পদ্ধতি চালু করা; দেশের প্রতিটি স্কুলে শিল্পকলা বিষয়ক একাধিক শিক্ষক নিয়োগ; পাঠ্যপুস্তকের সাম্প্রদায়িকীকরণ রহিত; বিভেদ, বিদ্বেষ ও ঘৃণা সৃষ্টিকারী লেখা ও উপাদান পাঠ্যপুস্তক থেকে তুলে নেওয়া; গণতন্ত্র, মানবমর্যাদা ও সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষা পাঠক্রম পুনর্বিন্যস্ত করা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করা।
এছাড়া রামু, নাসিরনগর, সাতক্ষীরা, অভয়নগর, শাল্লাসহ অতীতের সব সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার করা, সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা তদন্তে ‘গণতদন্ত কমিটি গঠন করে তার সুপারিশ বাস্তবায়ন করা। সব দলকে ধর্মকে রাজনীতি ও ক্ষমতার হাতিয়ার করা থেকে বিরত থাকা, সংবিধান সংশোধন করে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ বাতিল করে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা' পুনঃস্থাপন এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।
বাংলাদেশ সময়:২০০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২১
এসকেবি/এমএমজেড