মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জ পৌরসভার অধীনে হিজুলী কাচারী বাজার থেকে চরহিজুলী মৃত আমীর আলীর বাড়ির রাস্তাটি একাত্তরের যুদ্ধের রাজাকারের বাবার নামে (মৃত দলিল উদ্দিন বিশ্বাস) নামকরণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে লিখিত অভিযোগ করেছেন একাধিক মুক্তিযোদ্ধা।
একাত্তরের পরাজিত শক্তি যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে সেজন্য সদর উপজেলার কমান্ডারসহ ২৯ জন মুক্তিযোদ্ধারা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন এবং এর অনুলিপি দেন পৌরসভা, উপজেলা প্রশাসন ও প্রেসক্লাব বরাবর।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধের সময় মৃত দলিল উদ্দিন বিশ্বাসের মেঝো ছেলে মৃত দবির উদ্দিন বিশ্বাস (নান্নু) স্বাধীনতাবিরোধী কাজে সক্রিয়ভাবে জড়িত থেকে তৎকালীন পাকিস্তানের পক্ষে রাজাকারের কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছে এবং সুন্দরী তরুণী মেয়েদের পাকবাহিনীদের হাতে তুলে দিয়ে মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেছে। ওই পরিবারের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না, সেক্ষেত্রে রাস্তার নামকরণ একজন রাজাকারের বাবার নামে হলে মানিকগঞ্জসহ সারা বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাবে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা হবে।
অভিযুক্ত রাজাকারের ছোট ভাই পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আরশ্বেদ আলী বিশ্বাস বলেন, ১৯৭১ সালে আমি অনেক ছোট তখন আর মেঝো ভাই কি করছে না করছে তা-তো আর আমি জানি না। তবে আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মিথ্য অপপ্রচার করছে মুক্তিযোদ্ধারা এর কারণ হলো আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার একটি কুচক্রি মহল মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে এই পাঁয়তারা করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
লিখিত অভিযোগের প্রথম স্বাক্ষরকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল সালাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যারা দেশ স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম কোনো স্বার্থ ছাড়া ঠিক তেমনিভাবে মুক্তিযুদ্ধাদের অপমান যাতে না হয় সেজন্য এই রাজাকারের বাবার নামে পৌরসভার হিজুলী কাচারী বাজার হতে চরহিজুলীর রাস্তা হলে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির সঙ্গে আতাত করা হবে। সেজন্য অতি বিলম্বে ওই রাস্তার নামকরণ বন্ধ করা হোক তা না হলে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হবে বলেও জানান তিনি।
সদর উপজেলা মুক্তিযুদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওবাইদুল ইসলাম ইয়াকুব বাংলানিউজকে বলেন, দেশ স্বাধীন করেছি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে আর যারা দেশের স্বাধীনতা চাইনি তাদের পরিবারের কোনো সদস্যদের নামে রাস্তা হলে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হবে। আমরা চাই এই রাজাকারের (মৃত দবির উদ্দিন বিশ্বাস) বাবার নামে কোনো রাস্তা না হয় সেজন্য যা যা করা প্রয়োজন আমরা মুক্তিযোদ্ধারা তাই করবো।
সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইকবাল হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জেলা প্রশাসক বরাবর ওই রাস্তার নামকরণ নিয়ে একটি লিখিত আবেদন করেছে আর ওই আবেদনের অনুলিপি আমি পেয়েছি। তবে সরকারি রাস্তা নামকরণের একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে সে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে কিনা তা আমি জানি না।
মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. রমজান আলী বলেন, আরশ্বেদ আলী কমিশনারের বাবার নামে যে রাস্তা হয়েছে সেটা আমি অনুমোদন করিনি এটা আগের যে মেয়র ছিলেন তিনিই এই রাস্তার সকল কিছু করেছেন।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল লতিফ বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা যে লিখিত আবেদনটি করেছে সেটা আমি এখনো দেখিনি তবে ওই আবেদনটি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২১
এনটি