ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

পোস্ট অপারেটিভে মারা গেলেন প্রসূতি 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২১
পোস্ট অপারেটিভে মারা গেলেন প্রসূতি  স্বজনদের আহাজারি, ইনসেটে যমজ সন্তান ও মাঝে প্রসূতি

সিলেট: সিলেটে যমজ সন্তান জন্ম দিয়ে রাবেয়া বেগম (২৩) নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ এনে স্বজনরা ক্লিনিকটি ঘিরে রাখেন।

এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয় হাসপাতালে।
 
শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) রাতে সিলেট নগরের পুরাতন মেডিক্যাল সংলগ্ন সিটি পলি ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে।
 
নিহত রাবেয়া বেগম নগরের হাওয়াপাড়া দিশারি আবাসিক এলাকার তমাল আহমদের স্ত্রী।   
 
রোগীর স্বজনরা জানান, বাসায় খাওয়া দাওয়ার পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাবেয়ার প্রসব ব্যথা উঠলে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সাড়ে ৭টার দিকে কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই রোগীর অস্ত্রোপচার করেন নর্থইস্ট মেডিক্যাল কলেজের গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. নাহিদ ইলোরা। এরপর রোগীকে পোস্ট অপারেটিভ রুমে রেখে ওই নারী চিকিৎসক বাসায় চলে যান। পরে দুই নবজাতককে দুগ্ধ পান করাতে নিয়ে গেলে রাবেয়া বেগমের জিহ্বা বের হওয়া দেখতে পান।
 
দায়িত্বরত নার্সের কাছে স্বজনরা জিহ্বা বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোগী ঘুমাচ্ছেন। রাত ১১টার দিকে ডা. নাহিদা ইলোরা প্রসূতির স্বামীকে ডেকে নিয়ে রোগীর মৃত্যুর খবর দেন। এ খবর শুনে রাবেয়ার আত্মীয়-স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এসময় স্বজনরা রোগীকে ভুল চিকিৎসায় মেরে ফেলার অভিযোগ তোলেন। তাদের অভিযোগ, কোনো পরীক্ষা ছাড়াই তার সিজার করা হয়েছে। এ কারণে প্রসূতির গর্ভে যে যমজ সন্তান ছিল চিকিৎসকরাও জানতেন না। তবে সন্তান দু’টি সুস্থ আছে।  
 
এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দেন। রাত ১২টার পর কোতোয়ালি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিল সৈয়দ তৌফিকুল হাদী, ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিল জাবেদ আহমদ, উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদসহ আরও অনেকে।
 
এসময় কারণ জানতে চাইলে সিটি পলি ক্লিনিকের পরিচালক অধ্যাপক ডা. হাফিজ আহমদ বলেন, ‘প্রসূতির মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি এসেছি। কনসার্ন চিকিৎসক সবকিছু বলতে পারবেন।
 
অস্ত্রোপচারকারী গাইনি চিকিৎসক নাহিদ ইলোরা ঘটনাটি দুঃখজনক মন্তব্য করে বলেন, ‘পোস্ট অপারেটিভ নেওয়ার সময়ও রোগী ভাল ছিলেন, কথাও বলেছেন। অবস্থা ভাল দেখে বাসায় চলে যাই। রাত সাড়ে ৯টার দিকে দাযিত্বরত চিকিৎসক ফোন করে বলেন, রোগী নড়াচড়া করছে না, হয়তো মারা গেছেন। হাসপাতালে আসার পর পরীক্ষা করে দেখি রোগী মারা গেছেন।  

মারা যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করেন তিনি বলেন, সাধারণত প্রসূতির মৃত্যু হয় রক্তক্ষরণ হলে। আর ভাত খাওয়ার পর অস্ত্রোপচার করলে তো রোগীর বমি হওয়ার কথা, কিন্তু কোনোটাই হয়নি।
 
তিনি বলেন, ‘দায়িত্বরত চিকিৎসকের কাছে জানতে চাই, রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি স্বজনদের জানানো হয়েছি কি-না? তারা জানান তাৎক্ষণিক রোগীর স্বামীকে ডেকে এনে প্রসূতির মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়। এতে তারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ’ কি কারণে রোগির মৃত্যু হয়েছে, ময়নাতদন্ত করলে জানা যাবে। প্রসূতিটি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারেন। ’   
   
অস্ত্রোপচারকালে ক্লিনিকে এনেসথেসিয়া চিকিৎসকের দায়িত্বে ছিলেন নগরের পার্ক ভিউ মেডিক্যাল কলেজের এনেসথেসিয়া প্রধান ডা. সাব্যসাচি।  

তিনি বলেন, অস্ত্রোপচার করার পরেও রোগী ভাল ছিলেন। তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলি- আপনার একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তান হয়েছে। এরপর রাত ১০টার দিকে জানানো হয় রোগী মারা গেছেন। তবে প্রসূতির মৃত্যু হতে পারে, এ ধরনের কোনো কারণ ছিল না। হয়তো হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনি। তবে এনেসথেসিয়ার কারণে মৃত্যু হয়নি। এরপরও ময়নাতদন্ত করলেই কারণ জানা যাবে।
 
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, অস্ত্রোপচার করার আগে কোনো প্রকার পরীক্ষা করা হয়নি। মাত্র ৮ মিনিটে কিভাবে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়ে যায়-প্রশ্ন রাখেন তারা।  

তবে চিকিৎসকরা বলছেন, অন্য রোগীর চেয়ে ওই প্রসূতির খুব সহজে অস্ত্রোপচার করতে পেরেছেন তারা।  

এনেসথেসিয়া অতিরিক্ত ডোজ দেওয়ার অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে স্বজনরা দাবি তুলে বলেন, তাদের রোগীকে হত্যা করা হয়েছে, এর যথাযথ বিচার চাই আমরা।
 
রাত ২টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনার প্রতিকার চেয়ে স্বজনরা উত্তেজিত রয়েছেন। এ ঘটনায় রোগীর স্বজনরা অভিযোগ দিলে মামলা নেওয়া হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২১
এনইউ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।