ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

জামিনে বেরিয়ে চেকপোস্টে বোমা বিস্ফোরণ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০২১
জামিনে বেরিয়ে চেকপোস্টে বোমা বিস্ফোরণ

ঢাকা: নব্য জেএমবির সামরিক শাখার কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল নোমান ওরফে আবু বাছির (২২) ২০১৮ সালে জেলে যান। প্রায় ১৫ মাস পর জামিনে বেরিয়ে আবারো জঙ্গিবাদে সক্রিয় হন তিনি।

২০২০ সালে পল্টনে পুলিশের চেকপোস্টের পাশে রিমোট নিয়ন্ত্রিত বোমা রেখে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটান তিনি।

পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) জানায়, ২০১৭ সালে ফেসবুক ও ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও পেয়ে জঙ্গিবাদে জড়ান বাছির। জঙ্গিবাদে জড়ানোর অভিযোগে ২০১৮ সালে তাকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি। কারাগারে এক বছর তিন মাস থেকে জামিনে বের হয়ে তিনি সরাসরি যোগাযোগ করেন নব্য জেএমবির আমির মাহাদী হাসান ওরফে জনের সঙ্গে। এরপর তার যোগাযোগ হয় নব্য জেএমবির সুরা সদস্য আবু মোহাম্মদের সঙ্গে। তাদের দেওয়া নির্দেশনা ও প্রশিক্ষণে ২০২০ সালের ২৪ জুলাই রাতে পুরাতন পল্টনে পুলিশ চেকপোস্টের পাশে রিমোট নিয়ন্ত্রিত বোমা রেখে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটান বাছির।

বুধবার মিরপুর মাজার রোড এলাকা থেকে আব্দুল্লাহ আল নোমান ওরফে আবু বাছিরকে আবারো গ্রেফতার করে সিটিটিসি।

বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, গত বছরের ২৪ জুলাই রাতে পল্টনের পুলিশ চেকপোস্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই সময় ঢাকা শহরে এমন আরও কয়েকটি ঘটনা ঘটেছিল। এসব ঘটনার প্রত্যেকটিরই রহস্য উদঘাটন হয়েছে এবং জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে। সবশেষে পুলিশ চেকপোস্টে যে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল সেই ঘটনার মূলহোতা আব্দুল্লাহ আল নোমান ওরফে আবু বাছির।

বাছিরকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে সিটিটিসির প্রধান বলেন, তার বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট এলাকায়। তিনি ২০১৭ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন। জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৮ সালে তাকে একবার সিটিটিসি গ্রেফতার করে। এক বছর তিন মাস জেলে থেকে জামিন পেয়ে তিনি আবার নতুন করে জঙ্গিবাদে জড়ান।

বাছির জেল থেকে বের হয়ে নব্য জেএমবির সামরিক শাখায় কাজ করতে শুরু করেন। তিনি নব্য জেএমবির আমির মাহাদী হাসান ওরফে জনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে তার নির্দেশে কাজ করতে শুরু করেন। নব্য জেএমবির একজন সুরা সদস্য আবু মোহাম্মদের তত্ত্বাবধানেও তিনি কাজ করতে থাকেন। আবু মোহাম্মদ তাকে সুবিধাজনক অবস্থানে পুলিশের ওপর হামলা করার জন্য নির্দেশনা দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী তাকে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দেন এবং বোমা তৈরির সরঞ্জাম কেনার জন্য অর্থ সরবরাহ করেন।

সিটিটিসি প্রধান আরও বলেন, বাছির প্রথমে রাজধানীর তোপখানা রোডে একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। পরে মাহাদী ও আবু মোহাম্মদ তাকে সেই বাসাটি ছেড়ে একা বাসা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি রাজধানীর মান্ডা এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন। সেই বাসা থেকেই বাছির হামলার জন্য বোমাটি বানান।

পরে সুবিধাজনক স্থান হিসেবে গত বছরের ২৪ জুলাই রাতে পুরানা পল্টনের পুলিশ চেকপোস্টে বোমাটি রেখেছিলেন। তিনি বোমা রাখার জন্য একটি নিরাপদ স্থান খুঁজছিলেন, যেখানে কোনো সিসি ক্যামেরা নেই। ঢাকা শহরে যতগুলো এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল সবগুলোরই সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু পল্টনের ঘটনাটির কোনো সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পাওয়া যায়নি।

সিটিটিসির প্রধান বলেন, এ ঘটনায় তাকে যারা নির্দেশ দিয়েছিলেন তাদের নাম পেয়েছি। এসব বিষয়ে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। এজন্য তাকে আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে।

জামিনে বের হওয়া জঙ্গিদের নজরদারির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা হয়তো সবাইকে মনিটরিং করতে পারিনি বা পারি না, কিন্তু জামিনে বের হওয়া অধিকাংশ জঙ্গিদের আমরা নানা কৌশলে মনিটরিং করি। বাছিরও আমাদের মনিটরিংয়ের ছিলেন। কিন্তু তিনি হঠাৎ করে মান্ডা এলাকায় চলে যাওয়ায় আমাদের নজরদারিতে ছিলেন না। তোপখানা রোডে যখন থাকতেন তখন আমাদের নজরদারিতে ছিলেন। তিনি একটি স্থানীয় ইলেকট্রনিক কোম্পানিতে চাকরি করতেন, সেই পর্যন্ত আমাদের নজরদারি ছিল।

জামিনে বের হওয়া কতজন জঙ্গি সিটিটিসির নজরদারিতে রয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ২০০১ সাল থেকে ধরলে অনেক জামিন পাওয়া জঙ্গি আমাদের নজরদারিতে রয়েছেন। জামিন পাওয়ার পর আমরা প্রথম যে বিষয়টি দেখি তা হলো, কোনো জঙ্গি তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছে বা আবার পুনরায় সংগঠনের কাজকর্মে যুক্ত হয়েছে কিনা। আমরা যাকে মনে করি নজরদারিতে রাখা প্রয়োজন তাকে আমরা নজরদারিতে রাখি।

কারাগারে যেসব জঙ্গিরা রয়েছে তাদের নজরদারির বিষয়ে সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, কারাগারে আমরা নজরদারি করতে পারি না, কারণ আমাদের সেই অনুমতি নেই। তবে আমরা কারাগারে নজরদারি করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে একটি চিঠি দিয়েছি। কীভাবে কারাগারে থাকা জঙ্গিদের ডি-রেডিক্যালাইজড করা যায় এবং তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসা যায়, সে বিষয়ে আমরা কাজ করব। আশা করছি এ বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক সাড়া পাবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০২১
পিএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।