ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

উদ্ভাবনী চিন্তা-ভাবনা নিয়ে বিনিয়োগে আহ্বান রাষ্ট্রপতির

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০২১
উদ্ভাবনী চিন্তা-ভাবনা নিয়ে বিনিয়োগে আহ্বান রাষ্ট্রপতির রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ফাইল ফটো

ঢাকা: শিল্পোদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনী চিন্তা-ভাবনা ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।  

বৃহস্পতিবার (০৪ নভেম্বর) দুপুরে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০১৯ প্রদান অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিয়ে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান।

 

এ সময় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশ ২০২৬ সালে চূড়ান্তভাবে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে, ইনশাল্লাহ। তখন অন্যান্য সেক্টরের মতো শিল্পখাতের জন্য যেমন নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে, আবার বেশকিছু চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকবিলায় এখন থেকেই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি বলেন, কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে অর্থনীতির প্রাণ কৃষি হলেও দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কৃষির পাশাপাশি শিল্পখাতের উন্নয়ন অনস্বীকার্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৬ সালে কোয়ালিশন সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও গ্রাম সহায়তা দপ্তরের মন্ত্রী থাকাকালে অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরসনকল্পে তৃণমূল পর্যায়ে শ্রমঘন শিল্প প্রতিষ্ঠার সূচনা করেন। স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে অন্যান্য খাতের মতো শিল্পখাতও ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শিল্পখাতকে মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর জন্য বঙ্গবন্ধু দেশীয় কাচাঁমাল নির্ভর শিল্প কারখানা গড়ে তোলার মাধ্যমে শিল্পায়নের ধারাকে বেগবান করার উদ্যোগ নেন। তিনি সব বৃহৎ শিল্প কারখানা জাতীয়করণ করে এসব শিল্প কারখানা ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনের আলোকেই বর্তমানে বাংলাদেশের শিল্পায়নের ধারা এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য উত্তরাধিকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার বিগত এক যুগে বাংলাদেশে শিল্পায়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসারে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, শিল্পখাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণ, বিনিয়োগ সহায়ক কর ও শুল্ক কাঠামো নির্ধারণ ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বিশেষ প্রণোদনাসহ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোক্তাবান্ধব ও সৃজনশীল কর্মসূচির ফলে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় বিনিয়োগের অন্যতম আর্কষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।  

শিল্পখাতে গুণগত উন্নয়ন ও পরিবর্তনের ফলে দেশে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে (জিডিপি) শিল্পখাতের অবদান ক্রমান্বয়ে বাড়ছে জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, উৎপাদনশীলতা বাড়াতে শ্রমিকদের শ্রম ও দক্ষতা অপরিহার্য। এ জন্য মালিক-শ্রমিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি আশা করি, উদ্যোক্তারা শ্রমিকের কল্যাণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

উন্নয়নের জন্য কর্মসংস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকারের একার পক্ষে বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান করা সম্ভব নয়। কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ। সরকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০০টি ইকোনোমিক জোন গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে। এর মাধ্যমে ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এসব ইকোনোমিক জোনের একটি বড় অংশ বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। ইকোনোমিক জোনে শিল্প স্থাপন করা হলে কর রেয়াতসহ প্রদেয় বিভিন্ন প্রণোদনা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সমভাবে ভোগ করবেন।  

তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী নতুন নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ বৃদ্ধির ফলে দেশে উৎপাদিত শিল্পপণ্য আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যের তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছে। তাই পণ্যের গুণগতমান নিশ্চিত করার পাশাপাশি উৎপাদনেও বৈচিত্র্য আনতে হবে। নির্দিষ্ট কোনো পণ্য বা সেবা খাতের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক গতিধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিল্পোৎপাদনে বহুমুখী ধ্যান-ধারণা প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া শিল্পায়নের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশের ব্যাপারেও যতœশীল হতে হবে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শিল্পোন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার’ প্রদান একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, বেসরকারি খাতের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় প্রতি বছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এ পুরস্কার প্রদান করে আসছে। আমি সম্মাননাপ্রাপ্ত সব শিল্প প্রতিষ্ঠান ও শিল্পোদ্যোক্তাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। আমি আশা করি, এ উদ্যোগ জ্ঞানভিত্তিক শিল্পায়নের চলমান ধারাকে আরও সুসংহত করবে এবং সামগ্রিক জাতীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ইতিবাচক অবদান রাখবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০২১
জিসিজি/এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।