ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘বিষ এনে খাবো, নয়তো ঝুলবো’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০২১
‘বিষ এনে খাবো, নয়তো ঝুলবো’ বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কাঁদছেন শিলা গুহ। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: ‘আমি আর আমার মেয়ে যে বাড়িতে থাকি সেখানে ১১ হাজার ২শ টাকা ঘর ভাড়া বকেয়া পড়েছে। এখনও দিতে পারিনি।

চলতি মাসের ১০ তারিখে বাড়ির মালিক আমার সন্তানকে ডেকে নিয়ে খুব অপমান করেছেন। এখন আমি ভাবছি মা ও মেয়ে ও মিলে ‘বিষ এনে খাবো, নয়তো রশি নিয়ে ঝুলবো’।

বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) কান্না জর্জরিত কণ্ঠে এ কথাগুলো বলেছিলেন মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পাননি শিলা গুহ।

মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে তিনি নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন কুঁড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা থেকে। তারপর এক সময় দেশ স্বাধীন হয়। তিনিও ফিরে আসতে চান নিজের গৃহে। নিজের বাবা-মায়ের কাছে। কিন্তু, ভাগ্যের কী নির্মম রসিকতা! তার জন্মদাতা বাবাও তাকে বাড়িতে তুলেননি।

শিলা গুহ বলেন, ‘সরকার কর্তৃক আশ্রায়ণ প্রকল্পে একটি বাড়ি পেয়েছি। কিন্তু আমাকে গেজেটভুক্ত বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি হিসেবে এখনও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আমি পুরোপুরিভাবে অসচ্ছল। এখন ভিক্ষাবৃত্তি করে বেঁচে আছি।  আজ সারাদিন ভিক্ষাবৃত্তি করে দুটো ফুলের তোড়া নিয়ে এসেছি। একটা দেবো শহীদ মিনারে, আরেকটা দেবো বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে। কারণ, আমার নিজের বাবা যখন আমাকে তাড়িয়ে দেয় স্বাধীনতার পরে তখন আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধু আমার বাবা।

ভিক্ষা করদে গিয়েও কিছু কিছু মানুষের অপমান সহ্য করতে হয় তাকে। শিলা বলেন, আমি তো কোনো অপরাধ করিনি। কিন্তু কেন আমার এই দুর্গতি? ‘বুড়ো বয়সে আমি হাঁটতে পারি না, ভালো মত চোখে দেখি না, কানেও কম শুনি। আমাকে গেজেটভুক্ত করা হয়নি। আবেদনের কাগজ অনেকবার ঢাকায় গেছে। কিন্তু গেজেটে আমার নাম আসেনি।  

শিলার মেয়ে রমা বাংলানিউজকে বলেন, চলতি বছর ২০ জুনে শ্রীমঙ্গল আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা হয় আমার মায়ের। আমার মায়ের জীবনের তীব্র কষ্টের কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যেই মাকে গেজেটভুক্ত করে যথাযথ সম্মান দেওয়া হবে।  

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শিলা গুহের কাগজপত্র যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। কিছুদিন আগে তিনি এসেছিলেন, আমি দুই হাজার টাকা দিয়েছি। তিনি এখন ভিক্ষাবৃত্তি করছেন এটা খুবই দুঃখজনক। আমি ১৬ ডিসেম্বরের ব্যস্ততার পরে তার সঙ্গে দেখা করবো।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০২১
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।