ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ নিয়ে যা হচ্ছে

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২২
চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ নিয়ে যা হচ্ছে মানববন্ধন চলছে।

ঢাকা: সরকারি চাকরিতে প্রবেশে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলন করছেন দেশের একদল চাকরিপ্রত্যাশী। স্নাতক-স্নাতকোত্তর শেষ করে বয়স ৩০ পেরিয়ে যাওয়া এসব চাকরিপ্রত্যাশীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করলেও সাড়া মিলছে না।



দাবি আদায়ে শিগগিরই বৃহৎ পরিসরে লাগাতার আন্দোলনের ডাক দেবেন জানিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীরা বলছেন, বড় আন্দোলন ছাড়া আর দাবি বাস্তবায়নের পথ দেখছেন না তারা।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে, করোনার কারণে চাকরিপ্রত্যাশীদের ক্ষতি এড়াতে বয়সে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এখন দেশে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে সাধারণ প্রার্থীদের ৩০ বছর এবং বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বয়স সীমা ৩২ বছর।

সরকারি চাকরিপ্রত্যাশীদের দাবি, প্রতিযোগিতার এই সময়ে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করে চাকরির প্রস্তুতি নিতে ৩০ পেরিয়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজটের কারণে বয়সমীমা একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে আসে। এতে করে কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এতে অনেকেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এছাড়া করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সেশনজট তৈরি হয়েছে এবং দীর্ঘ সময় চাকরির পরীক্ষা না হওয়ায় প্রতিযোগী আরও বেড়ে গেছে।

চাকরিতে আবেদনের বয়স সীমা ৩৫ করার দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ।

এই পরিষদের সভাপতি ইমতিয়াজ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতিয়ারে চাকরির বয়স বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়ে রাখছে। কিন্তু তার বাস্তবায়ন করছে না। দাবি বাস্তবায়নে আমরা বিভিন্নভাবে আন্দোলন করছি কিন্তু সরকার কানে তুলছে না।

ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, করোনার কারণে চাকরিপ্রত্যাশীরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩৫ বছর বৃদ্ধি এখন সময়ে দাবি হয়ে গেছে। আমরা লাগাতার কর্মসূচির চিন্তা করছি। জেলাভিত্তিক কমিটিগুলো শক্তিশালী করছি। আমরা মিটিং করে বৃহৎ আকারে টানা কর্মসূচি ঘোষণা করব।  

সরকারি চাকরির বয়স এবং আনুষাঙ্গিক বিষয়গুলো দেখভাল করে থোকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে, এই মুহূর্তে চাকরির বয়স বৃদ্ধির বিষয়টি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ছাড়া বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর জন্য সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। প্রবেশের বয়স বাড়ালে অবসরের বয়স বাড়ানোর প্রশ্নও আসবে।  

প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, করোনাকালে সরকারি চাকরির জন্য দুইবার বয়সে ছাড় দেওয়া হয়েছে। আর মহামারির কারণে বিধি-নিষেধে অনেক দিন চাকরির পরীক্ষাগুলো বন্ধ ছিল। সেগুলো দ্রুত নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ বাড়ায় আবার অনেক নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ হচ্ছে। প্রয়োজন হলে আবারও বয়সে ছাড় দেওয়া হবে।  

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, মহামারির কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রার্থীদের চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বয়সে ছাড় দিয়ে গত বছরের ১৯ আগস্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিতব্য বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা গত বছরের ২৫ মার্চ নির্ধারণ করার জন্য বলা হয়। এতে চাকরিপ্রত্যাশীরা বয়সের ক্ষেত্রে ২১ মাসের ছাড় পেয়েছেন।

এর আগে, বছরও মহামারি সংকটের কারণে চাকরিপ্রত্যাশীদের পাঁচ মাস বয়স ছাড় দেওয়া হয়েছিল।  

এদিকে ৩৫ বছর বয়স করার দাবিতে করোনা সংকটের সময়েও অনলাইনে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আন্দোলনকারীদের ফেসবুক গ্রুপ ‘৩৫ হোক চাকরিতে প্রবেশের বয়স। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ (কেন্দ্রীয় কমিটি)’ পেজ থেকে বিভিন্ন পোস্ট, ছবি, ভিডিও ছড়িয়ে দিচ্ছেন আন্দোলনকারীরা।  

মৌসুমী জামান নামে একজন লিখেছেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর ক্ষেত্রে দুইটা জিনিস বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবসরের বয়সসীমা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স। অবসরের বয়স এমনিতেই বাড়ানো হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাররা (সন্তান) আমাদের থেকে দুই বছর বেশি পাচ্ছে। এখন যদি তাদেরকে আরও দুই বছর বেশি দিতে চায় তাও দিতে পারে। কারণ সরকার যে উপায়েই হোক বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধা দেবেই। তাহলে আমাদের কেন বঞ্চিত করবে? আমাদের ৩০ আর তাদের ৩২ নিয়ে যখন কেউ কিছু বলছে না তখন আমাদের ৩৫ আর তাদের ৩৭ নিয়েও কিছু বলবে না।  

ফেসবুকে কবির আবির নামে আরেকজন চাকরিপ্রত্যাশী লিখেছেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা তুলে দিতে হবে। অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের মেয়াদ দুই বছর করতে হবে। একাডেমিক পড়াশোনার সুযোগ ২১ বছর পর্যন্ত রাখতে হবে। যাতে করে পড়াশোনা করার অজুহাতে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের ঘাড়ে একটা সন্তান চেপে না থাকে। ২১ বছর বয়সে যোগ্যতা অনুযায়ী সবার চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে।

চাকরিপ্রত্যাশী কবির আবিরের যুক্তি, বছরে বছরে লাফিয়ে লাফিয়ে সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধি বন্ধ করতে হবে। কারো বেতন ৩০ হাজারের অধিক করা যাবে না। বেতন কাঠামো কমিয়ে বেঁচে যাওয়া সে অর্থ দিয়ে বর্তমান ১০ লাখ বেকারকে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে হবে। দেশে এমনও অনেক বেকার আছে যারা আসলে অনেক মোটা বেতনে চাকরি চায় না, শুধুমাত্র একটা ভালো কাজের সুযোগ চায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২২
এমআইএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।