ঢাকা, শনিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

মহাধুমধামে বট ও পাকুড় গাছের বিয়ে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪১ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০২২
মহাধুমধামে বট ও পাকুড় গাছের বিয়ে

দিনাজপুর: ঢাক-ঢোল আর সানাইয়ের সুরে মুখোরিত চারপাশ। সুন্দর করে সাজানো হয়েছে ছাদনাতলা।

প্রস্তুত পাত্র-পাত্রীর অভিভাকরাও। বিয়ের সব আয়োজনই সম্পন্ন। কিন্তু বর-কনের দেখা মিললো না। খোঁজা-খুঁজির পর অবশ্য দেখা মিললো পাত্র-পাত্রীর। কিন্তু মানুষ নয়, পাত্রপাত্রী হিসেবে ছাদনাতলায় রয়েছে বট আর পাকুড় গাছ। এতোকিছুর আয়োজন এই বট-পাকুড়ের বিয়েকে ঘিরেই।  

বুধবার (৯ মার্চ) দুপুরে দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার ৫ নম্বর সুন্দরপুর ইউনিয়নের গড়নুরপুরে শ্রী শ্রী ভদ্রকালী মন্দির পরিচালনা কমিটি ভিন্নধর্মী এ বিয়ের আয়োজন করে।  

সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সনাতন রীতি অনুযায়ী বিয়ের সব ব্যবস্থাই করেছেন মন্দির কমিটির সদস্যরা। প্রথমে ঢুকতেই চোখে পড়ে বিয়ের সুবিশাল গেইট। সেখান থেকে বিয়ের মঞ্চ পর্যন্ত আলোকসজ্জার ব্যবস্থা। আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ কৌতুহল নিয়ে বিয়ের আয়োজন দেখছেন। একপাশে চলছে বিয়ে উপলক্ষে আগত প্রায় ৫ হাজার দর্শনার্থীদের ভোজনের জন্য রান্নার প্রস্তুতি।  

আগত দর্শনার্থীরা ঢাক-ঢোলের তালে তালে নেচে গেয়ে আর পূজা অর্চনার মাধ্যমে বিয়ের আনন্দ উপভোগ করছেন। তাদের অনুভূতি জানতে কথা হয় কয়েক জন দর্শনার্থীদের সঙ্গে।

বিয়েতে আসা সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া গড়নুরপুরের দেবাশীষ রায় বলেন, আমি আগে কখনো বট পাকুড়ের বিয়ে দেখিনি। যখন শুনলাম আজকে বিয়ে হচ্ছে, তখন আমি আমার পরিবারের সঙ্গে এই বিয়েতে আসলাম। আসে আমি অনেক কিছু দেখতে পেলাম। আমার খুব ভালো লেগেছে।  

বিয়ের কথা জানতে পেরে পরিবার নিয়ে বীরগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা কার্তিক সিংহ বাংলানিউজকে বলেন, আমি তো এরকম বিয়ে আগে শুনিনি দেখিওনি। বিয়ের কথা জানতে পেরে মনে অনেক কৌতুহল ছিল যে কিভাবে এই বট-পাকুড়ের বিয়ে হবে। তাই এখানে পরিবার নিয়ে এসেছি। এখানে আসে এতোকিছুর আয়োজন দেখে খুব ভালো লাগছে। এখানকার সার্বিক ব্যবস্থাপনা খুব ভালো। আমার কাছে এইদিনটা ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে।  

বট-পাকুড়ের বিয়ের পুরোহিত গণেশ চক্রবর্তী বলেন, বট-পাকুড়ের বিয়ে হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ভারত থেকে প্রচলন হয়ে আসছে। শুধু বট-পাকুড়ই নয়, যেমন ডুমুর-আম্র (আম) রোপণ করে প্রতিষ্ঠা (বিয়ে) দেয়া হয়। যাদের সন্তান নেই বা যারা নিসন্তান তারা আমাদের শাস্ত্র মতে বট-পাকুড়ের বিয়ে দিলে তাদের সন্তানের কর্মের ফল পূর্ণতা লাভ হয়। ভারতে এই বিয়ের প্রচলন থেকে আমাদের এই বট-পাকুড়ের বিয়ের আয়োজন করা হচ্ছে। আর বট-পাকুড়ের বিয়ের আয়োজন যারা করবে তারা যেকোনো বিপদের পড়লে বট-পাকুড় তাদের উদ্ধার করবেন। সাধারণত একটি বট ও পাকুড় গাছ ফল ধরার পূর্বেই তাদের বিয়ে সম্পন্ন করতে হয়।  

শ্রী শ্রী ভদ্রকালী মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিশাল রায় ও সাধারণ সম্পাদক মৃণাল কান্তি রায় জানান, প্রায় ৩ বছর আগে মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে বট ও পাকুড়ের গাছ মন্দির প্রাঙ্গণে রোপণ করা হয়। ধর্মীয় রীতি মতে বট-পাকুড়ের বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। বিয়েতে পাশের পরমেশপুর, ইটুয়া, বোয়াইলপাতমা, নোথাবাড়ী ও ইশানপুর গ্রামের ৫ হাজারের বেশি মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করতে সকলের সহযোগীতা নেয়া হয়েছে। সকলের সহযোগীতায় প্রায় ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।